আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ জল ভেবে অ্যাসিডে রান্না!‌ পরিণতি হল মর্মান্তিক। অ্যাসিডে রান্না করা খাবার খেয়ে গুরুতর অসুস্থ একই পরিবারের ছয় জন। ভর্তি হাসপাতালে। অসুস্থদের মধ্যে তিন শিশুও রয়েছে বলে জানা গেছে।


চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের রত্নেশ্বরবাটি গ্রামে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ এবং প্রশাসনের আধিকারিকরাও। কীভাবে এই ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ভুল করেই এই ঘটনা বলে প্রাথমিক অনুমান।


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘাটালের মনোহরপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রত্নেশ্বরবাটি গ্রামের বাসিন্দা সন্তু সন্ন্যাসী। তাঁর বাড়িতে তামা–রুপোর কাজ হয়। ফলে বাড়িতে সবসময় অ্যাসিড রাখা থাকত। রবিবার সন্ন্যাসীবাবুর এক আত্মীয় বাড়িতে রাখা অ্যাসিড জলের সঙ্গে ভুল করে ঢেলে দেন। আর তাতেই ভাত, তরকারি রান্না করে ফেলেন। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি কীভাবে রান্না করছেন। এখানেই শেষ নয়, অ্যাসিড জলে রান্না করা খাবারই সন্ন্যাসীবাবুদের খেতে দিয়েছিলেন। খাবার কিছুক্ষণ পর পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুরু হয় অসহ্য পেটে যন্ত্রণা ও বমি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ক্রমশ অবস্থার অবনতি হলে ছয়জনকেই কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তার মধ্যে তিন শিশু রয়েছে। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা পুলিশের তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। 


স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্ন্যাসী পরিবারের বাড়িতে রুপোর গয়না তৈরির জন্য বালতিভর্তি অ্যাসিড রাখা ছিল। ঠিক সেই বালতিতেই জল রাখার রীতি থাকায় ভুলবশত অ্যাসিডকেই জল ভেবে ভাত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। পরে সেই ভাত খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। 

পরিবারের সদস্যরা এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী অসুস্থদের নাম, সন্তু সন্ন্যাসী (৩৭), রঞ্জনা সন্ন্যাসী (৩০), তিয়াসা সন্ন্যাসী (৭), বিভাণ সন্ন্যাসী (৩), শিখা দোলই (২৯) ও স্বাগতা দোলই (৮)। এদের মধ্যে তিনজনই শিশু। 

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী জানান, ‘‌অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। সকলের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের চিকিৎসা চলছে এসএসকেএম হাসপাতালে।’‌

ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, গয়না তৈরির অ্যাসিড ঘরে রাখা বিপজ্জনক। যথাযথ লেবেল না থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। অনেকেই জানান, শ্রমভিত্তিক বাড়ির ইউনিটে রাসায়নিক সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থাই নেই, যা ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। 

এই ঘটনার পর প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দপ্তর রাসায়নিক সংরক্ষণে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখার বার্তা দিয়েছে। সন্ন্যাসী পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে এখনও গভীর চিন্তায় প্রশাসন। পুরো এলাকায় শোক ও উদ্বেগের আবহ রয়েছে।