বিভাস ভট্টাচার্য 

বাড়িতে ছাপা হয়েছিল ৫০০ টাকার নোটের আদলে একের পর এক কাগজ। সেই কাগজই আসল নোটের আড়ালে রেখে দেখানো হত ধার নিতে আসা লোকজনকে। টাকা ধার চাইলে বলা হত পৌঁছে দিতে লাগবে কমিশন। এরপরেই শুরু হত আসল খেলা। অভিযান চালিয়ে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ গ্রেপ্তার করল এই চক্রের মাথাকে। বৃহস্পতিবার মুম্বাই থেকে চক্রের মূল লোক অভিষেক তিওয়ারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ট্র্যানজিট রিমান্ডে নিয়ে আসা হচ্ছে এরাজ্যে। এই বিষয়ে বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার মেহেদি হাসান জানান, অভিযুক্তকে মুম্বাই থেকে ধরা হয়েছে। তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই গ্যাংয়ে আরও কে বা কারা আছে সেটা জানা হবে। 

জানা গিয়েছে পাঁচশো টাকার নোটের আদলে তৈরি এই কাগজের টুকরো ছাপানো হত কলকাতার বাসিন্দা অভিষেকের বাড়িতেই। একাধিক জালিয়াতির অভিযোগে এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া অভিষেকের এটাই ছিল নতুন জালিয়াতির ফাঁদ। এই কাজে তিস্তা সেন নামে এক মহিলা ছাড়াও তার সঙ্গী ছিল সিরাজউদ্দিন মোল্লা এবং দেবব্রত চক্রবর্তী নামে দুই যুবক। সকলকেই গ্রেপ্তার করেছে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ। এই তিনজনকে জেরা করেই সন্ধান পাওয়া যায় অভিষেকের। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, টাকা ধার নেবে এইরকম লোকের সন্ধানে তক্কে তক্কে থাকত এরা। 'শিকার' মিললেই শুরু হত এদের বাকি কাজ। 

পুলিশের ওই সূত্রটি জানায়, তিস্তাকে টাকা ধার দেওয়ার মূল লোক সাজিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হত ধার নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির কাছে। এই ধরনের মিটিংয়ের আয়োজন করা হত রাজারহাট বা নিউ টাউনের কিছু কিছু হোটেলে ঘর ভাড়া করে। কথাবার্তা বলার সময় বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাকে আসল টাকার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা তাড়া তাড়া ওই টাকার মতো দেখতে কাগজও দেখানো হত। এবিষয়ে পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এরা এমনভাবে ওই ছাপানো কাগজ আসল নোটের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখত যা দেখে বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় থাকত না। এরপরেই ধার নিতে আসা ব্যক্তিকে বলা হত টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য লাগবে ১.৬ শতাংশ কমিশন এবং সেটা আগে দিতে হবে। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এইভাবে একজনকে ধার দেওয়ার নামে কমিশন হিসেবে ২২ লক্ষ টাকা এরা হাতিয়ে নিয়েছিল। সন্দেশখালিতেও এরা সেই উদ্দেশ্যেই এসেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত ধরা পড়ে যায়। যেদিন টাকা ধার দেওয়ার কথা থাকত সেদিন এরা নিজেরাই ফোন করে ধার নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বলত যে হোটেলে টাকা হাতবদল হবে সেই হোটেলে আচমকাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিযান চালিয়ে সব টাকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে। পাছে তাকেও তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে হয় সেজন্য ভয়ে আর এই প্রতারকদের ফোন করতেন না ধার নিতে ইচ্ছুক ওই ব্যক্তি।

এইভাবে দিনের পর দিন লোকের থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল অভিষেক এবং তার দলবল। জানা গিয়েছে, এই প্রতারকরা জমি কেনাবেচার প্রতারণার সঙ্গেও যুক্ত ছিল। এদের থেকে যে টাকার মতো দেখতে কাগজ উদ্ধার হয়েছে সেগুলি যদি সত্যি হত তবে তার মূল্য হত ৭ কোটি টাকার কাছাকাছি। সিরাজউদ্দিন ও দেবব্রত গ্রেপ্তারের পরেই ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে যাওয়ার মতলব করেছিল তিস্তা। পৌঁছে গিয়েছিল বীরভূম। কিন্তু অভিযান চালিয়ে  তাকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ।