আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংসারের হাল ধরার জন্য স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেজুর গাছে হাড়ি বাঁধছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রথম মহিলা শিউলি। মহিলারা পারেন না এমন কোন অসাধ্য কাজ এই দুনিয়ায় নেই। মহিলাদের বীর পরাক্রমের কথা ইতিহাসের পাতা থেকে শুরু করে 'অপারেশন সিন্দুর' পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। পিছিয়ে নেই মাজিদা লস্করও। স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসারের হাল ধরার জন্য তিনি এখন জেলার প্রথম মহিলা শিউলি। 

 

সাধারণত শীতের সময় বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে নানারকম পিঠেপুলি তাঁর খাদ্য তালিকায় রয়েছে। কিন্তু পিঠে পুলি নলেন গুড় ছাড়া যেন অসমাপ্ত। জয়নগরের প্রসিদ্ধ মোয়া তৈরিতেও নলেন গুড়ের অবদান অপরিসীম। সেই কারণে শীতের সময় খেজুর গাছের রস দিয়ে তৈরি হওয়া নলেন গুড়ের চাহিদা থাকে অপরিসীম। রস সংগ্রহ করার জন্য শিউলিরা খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধেন। ছোটবেলা থেকে মাজিদার স্বামী আব্দুর রউফ লস্কর এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিয়ের পর থেকে সংসারের হাল ধরার জন্য মাজিদা লস্কর তাঁর স্বামীর সঙ্গে শিউলির কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি এখন পাকাপোক্ত শিউলি হয়ে উঠেছেন। এখন নিজেই খেজুর গাছে উঠে রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে নলেন গুড় তৈরি করার প্রক্রিয়া পর্যন্ত তিনি সিদ্ধহস্ত। 

 

এই দম্পতি মিলে এলাকার প্রায় ১৮০ থেকে ২০০টি খেজুর গাছ থেকে একদিনে রস সংগ্রহ করেন। জয়নগরের দু'নম্বর ব্লকের মনিপুর বাঁশতলা এলাকায় তাঁদের বাড়ি। জয়নগর এলাকার প্রসিদ্ধ বেশ কয়েকটি মোয়ার দোকানে নলেন গুড় সরবরাহে তাঁরা হলেন প্রথম সারির শিউলি। কীভাবে জেলার প্রথম মহিলা শিউলি হয়ে উঠলেন মাজিদা?  তিনি বলেন, "সংসারের অভাব মেটানোর জন্য স্বামীর সঙ্গে এই কাজে আমি যুক্ত হই। প্রথমদিকে বহু বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমায়। এই কাজ শিখতে গিয়ে বহু আঘাত এবং ব্যথা সহ্য করতে হয়েছে। খেজুর গাছের কাঁটা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বামীর সঙ্গে এই কাজে সঙ্গে থেকে আমি সমস্ত কিছু শিখেছি।

 এই শীতের মরশুমে স্বামীর সঙ্গে শিউলির কাজ করি। এর ফলে সংসারের অর্থের সংকট কিছুটা হলেও দূর হয়। দুজনে মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কাজ করি।" এ বিষয়ে আব্দুর রউফ লস্কর বলেন, "ছোটবেলা থেকে এই কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত রয়েছি। আমি এক দিনে ১৮০ থেকে ২০০টি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করি। আমার স্ত্রী প্রথম আগ্রহী হয়ে জানিয়েছিল সে আমার সঙ্গে এই কাজ করবে। এরপর ধীরে ধীরে স্ত্রীকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করি। নিজে হাতেই গাছ চেঁচে গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করবে কীভাবে বা খেজুর রস থেকে কীভাবে নলেন গুড় প্রস্তুত করবে তার সমস্ত প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিয়েছি।

বেশ কয়েক বছর ধরে এই কাজ শিখে সে এখন পাকা দস্তুর মহিলা শিউলি হয়ে উঠেছে। ১৫ বছর ধরে আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছে। তাঁর এই সিদ্ধান্তে আখেরে আমার সংসারের অনেকটাই অর্থনৈতিক সংকট ঘুচে গিয়েছে। আমরা শীতকালে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হই। সারা বছর চাষবাস করি। চাষবাস করার সময়ও আমার স্ত্রী আমাকে সাহায্য করে। এভাবেই আমার জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে আমার স্ত্রী অন্যতম যোদ্ধা। এই কাজ অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। সেই কারণে আগামী প্রজন্ম এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন না। এই কাজে লাভ অনেক কম। যে পরিশ্রম আমরা করি সেই পরিমাণ টাকা পাই না। এর ফলে আগামী প্রজন্ম এই কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।"