আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী ৭ পৌষ, ইংরেজি ২৩ ডিসেম্বর থেকে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে শুরু হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী পৌষ উৎসব ও মেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও ভিড় সামলানো, নিরাপত্তা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং আপৎকালীন পরিষেবা- সব মিলিয়ে জোর কদমে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির অগ্রগতি খতিয়ে দেখতেই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ শান্তিনিকেতনের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সভাকক্ষে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, বোলপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দেন বীরভূমের জেলাশাসক ধবল জৈন ও পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং। বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ছিলেন উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ, রেজিস্ট্রার বিকাশ মুখোপাধ্যায় এবং বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত এবারও পৌষমেলায় স্টল বুকিং অনলাইন মাধ্যমে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই বিষয়ে ইতিমধ্যেই ওয়েবসাইট ডেভেলপের কাজ শুরু করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই কাজও প্রায় শেষের পথে। এর আগেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ স্থির করেছিলেন আগে বুক করার ভিত্তিতে মিলবে স্টল (first come first serve) কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হতেই ব্যবসায়ীরা কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি জমা দিয়ে নিজেদের দাবি জানান। তাঁদের দাবি খতিয়ে দেখে পৌষমেলার 'ফিনান্স কমিটি' বৈঠক করে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্টল কেনার মূল্য অপরিবর্তিত থাকবে। স্টল বন্টনের ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের রসিদ প্রাপকরা অগ্রাধিকার পাবেন। পুরোটাই অনলাইন পদ্ধতিতে বুকিং হবে। এছাড়া, মাটিতে বসা ও ডোকরা শিল্পীদের বিনামূল্যে স্টল দেওয়া হবে। তবে ইলেকট্রিক বিল দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং প্রত্যেককে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এনিয়েও এদিন প্রশাসনের সঙ্গে বিশদ আলোচনার পর কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলি অনুমোদন করেন।
এর পাশাপাশি এদিনের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল মেলার সার্বিক ব্যবস্থা ও মাঠ পরিচালনার পরিকল্পনা। মেলার সময় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের ভিড় হয়। তাই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা কন্ট্রোল রুম, নজরদারি বাড়াতে সিসিটিভি বসানো, পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মেলার চারদিকে স্থাপন করা হবে একাধিক নজরদারি টাওয়ার। বিদ্যুৎ দপ্তর জানিয়েছে, মেলার আলো, স্টল ও সাংস্কৃতিক মঞ্চের জন্য আলাদা লাইন দেওয়া হবে, যাতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে কোথাও যেন বিঘ্ন না ঘটে।
এক ঘন্টা বৈঠকের পর মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, স্টল বুকিং নিয়ে যে জল্পনা কয়েক মাস ধরে চলছিল, তার অবসান হয়েছে। এই বছর ২০২৪ সালের পুরোনো বিক্রেতারাই স্টল বুকিংয়ে অগ্রাধিকার পাবেন। ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর বরাদ্দ থাকবে শুধুমাত্র তাঁদের জন্য। পুরনোদের বুকিং শেষ হওয়ার পরই নতুনদের আবেদন গ্রহণ শুরু হবে।
কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই খুশির হওয়া ব্যবসায়ী মহলে। সংবাদ মাধ্যমকে উপাচার্য বলেন, বুকিংয়ের ১০০% প্রক্রিয়া অনলাইন মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। প্রশাসনের কাছে সাহায্য ও সহযোগিতার আর্জি জানিয়েছি। তারাও সবুজ সংকেত দিয়েছে। আগামী ১৬ তারিখ থেকে পুরনো স্টল প্রাপকরা বুক করতে পারবেন। তাতে আশা করি ৭৫ শতাংশ বুক হয়ে যাবে। বাকি ২৫ শতাংশ আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে সকলের জন্য রাখা হবে। চাইলে যে কেউ বুক করতে পারবেন। তবে কেউ যদি স্টল বুক করেও অর্থ ফেরত চান, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাকা রিফান্ড করা হবে। মেলা হবে ছয় দিনের। ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই মেলা ভাঙ্গা হবে। কারণ পরিবেশ আদালতের নিয়ম নীতির বিষয়ও রয়েছে। আশা করি মেলা সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে।
