আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তমকুমার ব্রজবাসী, নিশিকান্ত দাসের পর এবার কোচবিহারের বাসিন্দা মোমিনা বিবির দরজায় এলএনআরসি নোটিশ। এঁদের সঙ্গে পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারের অঞ্জলি শীল-এর কাছেও এসেছে এই নোটিশ। সর্বশেষ নোটিশটি পেয়েছেন মোমিনা বিবি। অসম ট্রাইব্যুনাল-এর পাঠানো ওই নোটিশে বলা হয়েছে মোমিনা বিবিকে হাজিরা দিতে হবে অসমের ধুবরিতে। বুধবার ৩০ জুলাই তিনি এই নোটিশ পেয়েছেন। পুলিশ এসে এই নোটিশ দিয়ে যায়। কীসের ভিত্তিতে এই নোটিশ তা বুঝতে পারছেন না তিনি। 

জানা গিয়েছে, নোটিশ পাওয়া মোমিনা বিবি তুফানগঞ্জ ২ নম্বর ব্লকের প্রথম খণ্ড বাঁশরাজা শালবাড়ির ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ৯/২৬ নম্বর বুথ এলাকার বাসিন্দা। এর আগে তিনি একাধিকবার নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করেছেন। নোটিশ পাওয়ার পর মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত ও ক্ষুব্ধ মোমিনা বিবির প্রশ্ন, 'আর কতবার এবং কতজনের সামনে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করব'। নোটিশ আসার আগে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ভোটার তালিকা, রেশন কার্ড, আধার কার্ড-সহ সমস্ত বৈধ নথি জমা দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও এনআরসি কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে এই নোটিশ পাঠানোর জন্য হতবাক তাঁর পরিবার। এর আগেই জেলার অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছে নোটিশ আসায় সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন, নতুন করে আরও একজনের কাছে এই নোটিশ আসায় গোটা জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা ও ভয়। একের পর এক সাধারণ মানুষকে এই নোটিশ পাঠিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে উঠেছে অভিযোগ। 

আরও পড়ুন: এবিসিডি শিখতে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ! এই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিলেন অভিভাবকরা

হতাশ মোমিনা বিবি বলেন, 'আমি তো জন্মসূত্রেই কোচবিহারের বাসিন্দা। জীবনের শুরু থেকেই এখানে ভোট দিচ্ছি। রেশন কার্ড ও আঁধার কার্ড সবই আছে। তবু কেন আমাকে বিদেশি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে?' স্থানীয়দের অভিযোগ, এবার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে এনআরসি নিয়ে টার্গেট করা হচ্ছে। যার জন্য একের পর এক এরাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এই নোটিশ আসছে। তাঁদের প্রশ্ন, যেখানে একজন মহিলা বছরের পর বছর কোচবিহারে বসবাস করছেন। ভোট দিচ্ছেন এবং সরকারি পরিষেবাও পাচ্ছেন। এবার তাঁকে অসম গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে? এটা কী ধরনের ব্যাপার?

আইনজীবীদের মতে, এটি কেন্দ্রীয় প্রশাসনের একটি বড়সড় ত্রুটি। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে হয়রানির বিষয়টিও। একজন মানুষকে অন্য রাজ্যে গিয়ে নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ করতে হচ্ছে! 

কার্যত একের পর এক এই নোটিশে যেন নিজভূমেই 'পরবাসী' হয়ে পড়ছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে গোটা জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এই বুঝি আমার কাছে নোটিশ এল এই আতঙ্কেই খাওয়া-ঘুম উড়েছে বাসিন্দাদের। সকলেই তাকিয়ে থাকেন দরজার দিকে। মনে থাকে প্রশ্ন, 'এবার কি আমার বাড়িতে নোটিশ আসবে?' 

রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই নোটিশ পাঠানোর ইস্যুটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাদের কথায়, এটা একটা ষড়যন্ত্র। এনআরসি'র নামে অসম সরকার বাঙালি এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষদের টার্গেট করছে। 

আইন বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের নোটিশ হাতে পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রমাণাদি-সহ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল-এর সামনে হাজির হওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। তবে কাগজপত্র যথাযথ থাকলেও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া এবং মানসিক চাপ-এই দুই মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক গভীর অনিশ্চয়তা। যা নিয়ে ঘুমের ঘোরেও চমকে উঠছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা।