আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বভারতীর ইতিহাসে প্রথমবার আয়োজিত ইন্ডাস্ট্রি–অ্যাকাডেমিয়া মিট ‘কনফ্লুয়েন্স ২০২৫’-এর প্রথম দিনেই বিতর্ক।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডঃ সুকান্ত মজুমদারের হাত ধরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর যখন অনুষ্ঠানমুখর পরিবেশে দিন কাটছিল, সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘিরেই শুরু হয় বিতর্কের ঝড়।
অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র–ছাত্রীদের অনুষ্ঠান দেখতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যাঁরা ঢুকেছিলেন, তাঁদেরও মাঝপথে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পড়ুয়ারা।
স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই আচরণে ছাত্র–ছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেরই দাবি, বিশ্বভারতীতে এই ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবসময়ই সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
সঙ্গীত ভবন বা কলাভবনের ছাত্র–ছাত্রীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত অনুষ্ঠান যে ছাত্র–ছাত্রীদেরই সামনে পরিবেশিত হবে, সেটাই ছিল এতদিনের প্রথা।
তাই এবার টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন করে ঢোকার শর্ত আরোপে ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, এই কর্মসূচির আড়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চেতনার পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রি–অ্যাকাডেমিয়া মিট একটি সীমিত আয়োজনের অনুষ্ঠান। বাইরে থেকে শিল্পপতি, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
নিরাপত্তা ও আসনসংখ্যার সীমাবদ্ধতার কারণে প্রবেশাধিকার রেজিস্ট্রেশন-নির্ভর করা হয়েছিল। আগেই প্রতিটি ভবন থেকে ছাত্র–ছাত্রীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।
সেই অনুযায়ীই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, যারা অভিযোগ করছেন তাঁরা এই প্রক্রিয়ার বাইরে ছিলেন। তাই ইচ্ছাকৃতভাবেই পরিস্থিতিকে বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।
তবু পড়ুয়াদের একাংশের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অনুষ্ঠান হলে সেটি ছাত্র–ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত।
একাধিক পড়ুয়া প্রশ্ন তুলেছে, “শিল্প ও শিক্ষার সেতুবন্ধনের নামে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরই বাদ দেওয়া হয়, তাহলে এ উদ্যোগের সার্থকতা কোথায়?”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডঃ সুকান্ত মজুমদার, উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ এবং বিভিন্ন শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিরা।
উদ্বোধনের পর অতিথিরা বিশ্ববিদ্যালয় ও বহিরাগত সংস্থাগুলির স্টল ঘুরে দেখেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে প্লেসমেন্ট বোর্ড, ইন্টার্নশিপ, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও গবেষণা এবং সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে প্রথম দিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবেশ নিয়ে তৈরি হওয়া এই অনভিপ্রেত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
শান্তিনিকেতনের পরিমণ্ডলে যখন নতুন অধ্যায়ের সূচনা করার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়, তখন ছাত্র–ছাত্রীদের বঞ্চনার অভিযোগ সেই প্রচেষ্টার আবহে এক অস্বস্তিকর ছায়া ফেলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, 'ভবন ভিত্তিক ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে যে ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠান দেখতে চাইছেন, তাঁরা নিজেদের সেখানে তালিকাভুক্ত করেননি কেন?'
তিনি আরও জানান, এটা একটি কনফারেন্স। বসন্ত উৎসব বা অন্য কোন অনুষ্ঠানের মতো খোলামেলা অনুষ্ঠান নয়। এটা ইন্ডাস্ট্রি অ্যাকাডেমিয়া মিটের একটি অংশ।
আগত শিল্পপতিদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও পরম্পরা তুলে ধরা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন কর্তৃপক্ষ, যাদের নামের তালিকা পাঠিয়েছেন, তাঁরা ঢুকেছেন।
যারা এ বিষয়ে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি করছেন তাঁদের উচিত ছিল, আগে থেকে টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা। এগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু নয়।
