আজকাল ওয়েবডেস্ক: চন্দননগর হেলাপুকুর জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করলেন রানাঘাটের ছোট্ট অস্মিকা। স্পাইনাল মাসকুলার এসট্রফিক নামক বিরল রোগে আক্রান্ত এই শিশুর চিকিৎসার জন্য ১৬ কোটি টাকা বিপুল অর্থের প্রয়োজন ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে সেই টাকা জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। অবশেষে তাকে সেই বহু মূল্যবান ইনজেকশন দেওয়া হয়। বিভিন্ন মানুষ অস্মিকার জীবন বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
চন্দননগর হেলাপুকুর জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি কয়েক মাস আগে ওই শিশুর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য করে এবং তখন থেকেই তারা মনস্থির করেছিল জগদ্ধাত্রী পুজোতে তাকে দিয়েই দেবীর উদ্বোধন করাবে। আজ চতুর্থীর দিন দেবী জগদ্ধাত্রীর মূর্তি উদ্বোধন হল অস্মিকা দাসের হাত দিয়ে। অস্মিকা ছাড়াও পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, চন্দননগর পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল সহ বিশিষ্টরা। চতুর্থীর সন্ধ্যাতেই দর্শনার্থীদের ঢল নামে মণ্ডপে।

অস্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস বলেন, 'হেলাপুকুর জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে অস্মিকাকে আনার জন্য যে মহান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে আমরা গর্বিত। এর আগে এখানে অনেক বহু সেলিব্রেটি উদ্বোধন করেছেন। এই পুজো কমিটি সমাজের কাছে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। আরও বহু শিশু আছে আমার মেয়ের মতো তাদের পাশেও যদি মানুষ থাকে, সেই বার্তায় পৌঁছে দিয়েছে পুজো কমিটি। এর আগে আমি কোনদিনও চন্দননগরে আসিনি। এই প্রথম এলাম এবং আমার ভাল লাগছে। আগের থেকে মেয়ে অনেকটাই সুস্থ। আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ। কোনদিনও ভাবিনি মেয়েকে নিয়ে পুজোর উদ্বোধন করব। মেয়ে যে লড়াই করেছে তা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে বিরল। বহু মানুষ আছে যারা এই বিরল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাহায্যের অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রত্যেক মাসে বা সপ্তাহে মেয়ের রক্ত পরীক্ষা, ফিজিওথেরাপি করতে হয়।'
পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত সরকার বলেন, 'এবছর এই পুজো ৫৬ বছরে পদার্পণ করেছে। এখানে মা জগদ্ধাত্রীর নাম 'সোনা মা'। চুঁচুড়ার একটি স্বর্ণ প্রতিষ্ঠান সোনায় মুড়িয়ে দেয় মা জগদ্ধাত্রীকে সেই কারণেই লোকমুখে এই মায়ের নাম হয়েছে 'সোনা মা'। তাই 'সোনা মা'র উদ্বোধন অন্য ধরনের করেছি। বিরল রোগে আক্রান্ত রানাঘাটের অস্মিকা দাস অসুস্থ অবস্থায় তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। বছরখানেক আগে আমাদের পুজো কমিটির উদ্যোগে মানুষের কাছে অস্মিকার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলাম। ৮৫ হাজার টাকা তার বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম মেয়ের চিকিৎসার জন্য। আমরা ঠিক করেছিলাম সে সুস্থ হওয়ার পর তাকে দিয়ে উদ্বোধন করাব। তাই আজ তার হাত দিয়ে এই মায়ের উদ্বোধন হল।'
পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, এ বছরে মা জগদ্ধাত্রীকে সাদা সোনার গহনা ও হিরে দিয়ে সাজানো হয়েছে। অর্থাৎ 'সোনা মা' এবার হিরের সাজে সেজে উঠেছে। ভিড় শুরু হয়েছে আজ থেকেই।
