আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে সব জেলার সব আসনকে গুরুত্ব দিয়ে আসন বাছাই করবে না বামফ্রন্ট। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, এবার কিছু বাছাই করা আসনকে টার্গেট করেই ঘুঁটি সাজাতে চলেছে বামফ্রন্ট। বুথ স্তরে সংগঠন বলতে প্রায় কিছুই নেই বামফ্রন্টের শরিক দলগুলোর। সবচেয়ে বড় দল সিপিএমের নিচু তলার সংগঠনের হাল'ও তথৈবচ। ভোটের অংকে জনসমর্থন কার্যত তলানিতে। তৃণমূল বিরোধী ভোট চলে গেছে পদ্ম শিবিরে। এই অবস্থায় ২৯৪টি আসনেই সমান উদ্যম নিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে না রাজ্য বামফ্রন্ট তথা সিপিএম।
যদিও সিপিএম সূত্রের খবর সব আসনেই প্রার্থী দেবে তারা কিন্তু কিছু 'টপ প্রায়োরিটি' আসনকে পাখির চোখ করে ঝাঁপাতে চাইছে তারা। এই কৌশলের ভিত্তিতে অন্তত ৫০টি আসনকে টার্গেট করেছে তারা, জানা গেছে আলিমুদ্দিন সূত্রে। এই ৫০ অন্তত ১০টি আসনকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বামফ্রন্ট। যদিও ঠিক কোন কোন আসন সেই বিষয় খোলসা করেনি তারা কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে বাংলা বাঁচাও যাত্রার রুটম্যাপ বিশ্লেষণ করলেই ছবিটা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে বাংলা বাঁচাও যাত্রা করছে সিপিএম। সেই যাত্রা যেই যেই এলাকার ওপর দিয়ে যাচ্ছে এবং যেখানে যেখানে একটু বেশি বড় সভা, জমায়েত ইত্যাদি করছে সিপিএম নেতৃত্ব সেই এলাকার আসনগুলি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা যাচ্ছে রাজ্য বামফ্রন্ট সূত্রে। যেমন, মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর আসনটি, দক্ষিণবঙ্গের হুগলি জেলার অন্তর্গত উত্তরপাড়া আসনটি। যেই আসনগুলোতে বিগত নির্বাচনের নিরিখে ভোটার হার তুলনামূলকভাবে ভাল সেই আসনগুলিতেই বিশেষ গুরুত্ব সহকারে ঝাঁপাতে চাইছে বামফ্রন্ট।
আলিমুদ্দিনের অন্দরে কান পাতলে এমনটাও শোনা যাচ্ছে এই 'টপ প্রায়োরিটি' আসনের অন্তর্গত উত্তরপাড়া বিধানসভা আসনটিতে সম্ভবত প্রার্থী হতে চলেছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। যাদবপুরে প্রার্থী হতে পারেন সৃজন ভট্টাচার্য। যদিও পুরো ব্যাপারটাই এখনও প্রাথমিক আলোচনার স্তরে রয়েছে। মালদহের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রার্থী হতে পারেন শতরূপ ঘোষ। এর পাশাপাশি কিছু নতুন মুখকেও প্রার্থী করার কথা ভাবছে আলিমুদ্দিন।
এই সমস্ত আসনে শুধু ভাল প্রার্থী দেওয়াই নয়, প্রচারেও সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে সিপিএম নেতৃত্ব। মুর্শিদাবাদেরও কয়েকটি আসনকে 'টপ প্রায়োরিটি' তালিকায় রাখা হয়েছে। এছাড়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক আসন রয়েছে বিশেষ গুরুত্বের তালিকায়। যাদবপুর, দমদম, কামারহাটির আসনগুলিও রয়েছে গুরুত্বের তালিকায়। বিশেষ গুরুত্বের আসন সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০টির মধ্যে রয়েছে বলে পার্টি সূত্রে খবর। এই সমস্ত আসনে দলের সংগঠন, জনসমর্থন অন্যান্য বিধানসভা এলাকার তুলনায় ভালো সমীক্ষা করে দেখেছে সিপিএম। এই বিশেষ গুরুত্বের আসনগুলিতে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই একেবারে সাংগঠনিকভাবে সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুতি নিতে চাইছে সিপিএম নেতৃত্ব। আসনগুলি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছে গ্রামীণ ও শহর উভয় এলাকাই। গ্রামের গরিব খেটেখাওয়া মানুষ এবং শহরাঞ্চলের শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের কাছে পৌঁছতে চাইছে আলিমুদ্দিন।
তবে বামফ্রন্টের এই বোঝাপড়ার গোল সাধতে পারে জোটসঙ্গী কংগ্রেস এবং আইএসএফ। যদিও এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি বামফ্রন্ট। সূত্রের খবর, এর আগে বামফ্রন্টের এক সভায় কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রস্তাবে আপত্তি জানায় ফ্রন্টের কয়েকটি শরিক দল। তাদের বদলে সিপিআই ও ফরওয়ার্ড ব্লক সক্রিয়ভাবে দাবি তোলে— আসন্ন নির্বাচনে ‘বৃহত্তর বাম ঐক্য’ গড়ার। আলোচনায় উঠে আসে সিপিআই (এমএল)-লিবারেশন ও এসইউসিআইয়ের নামও। সিপিআই'র রাজ্য কমিটির এক সদস্য আজকাল ডট ইন-কে জানান, বিহার ভোট কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে স্পষ্টতই বিরক্ত তারা। "যেখানে যেখানে আমাদের গড় সেখানে ডিস্টার্ব করেছে কংগ্রেস," জানান এক রাজ্য কমিটির সদস্য। অতএব এবার কংগ্রেসকেই স্থির করতে হবে এই রাজ্যে তারা কী চায়. আইএসএফ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ন্যায্য আসন বন্টনে রাজি হলে জোটে কোনও অসুবিধা নেই, তবে যৌক্তিকতার বাইরে গিয়ে যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার ইত্যাদি আসন দাবি করলে দরজা বন্ধ।
ওদিকে কংগ্রেসের সুর কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে— ২৯৪টি আসনেই লড়াই করবে দল। প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের মন্তব্য, দলের কর্মীরা রাজ্য জুড়ে লড়াই চায়, তাই তাদের মতকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সদ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক গুলাম মীরও প্রদেশ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ এবং ২০২১— দু’বারই বাম ও কংগ্রেস একসঙ্গে লড়েছে। কিন্তু এবার সেই জোটের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ। ফ্রন্টের অধিকাংশ শরিক কংগ্রেসবিহীন লড়াইয়ের পক্ষে, আর কংগ্রেসও চাইছে স্বতন্ত্র পথ। ফলে আলিমুদ্দিনের ‘জোট আশা’ এখনও অনিশ্চয়তায় ঝুলে।
