আজকাল ওয়েবডেস্ক: মা আসছেন বছর ঘুরে। আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে আগমনীর সুর। আর তারই মধ্যে চরম ব্যস্ততায় প্রতিমা শিল্পীরা। ইতিমধ্যেই প্রতিমার কাঠামোতে মাটি পড়ে গেলেও সাজ কিন্তু এখনও অসম্পূর্ণ। কেউ রং তুলি হাতে, কেউ শাড়ি বুনতে আবার কেউ বা শোলার কাজে প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত। প্রতিমার অঙ্গ সজ্জায় খুঁত রাখতে চান না কেউই।
এরই মধ্যে সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত শোলার কাজের ( ডাকের সাজ ) তৈরি প্রতিমার অঙ্গসজ্জা বহুল প্রচলিত ও বহুজনে সমাদৃত। থিম কালচারের যুগেও আজও চোখ টানে ঐতিহ্যবাহী সেই 'ডাকের সাজ'। যদিও শ্বেতশুভ্র, হস্তখচিত এই 'ডাকের সাজ' শিল্পীরা আজ অনেকটাই পিছিয়ে। ক্রমবর্ধমান শোলার দাম ও শিল্পীদের সংখ্যা কমে আসায় বংশপরম্পরায় যাঁরা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাঁরাও ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এক থেকে দু’ মাস লেগে যায় যেই অঙ্গসজ্জা করতে, তার সঠিক মূল্য শিল্পীরা পাচ্ছেন না। ফলে ধীরে ধীরে তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সরে যাচ্ছেন অন্য কোনও পেশায়। তবুও শুধুমাত্র পেশা নয়, নেশার তাগিদেই প্রাণপণ চেষ্টা চলছে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার। মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার এক 'ডাকের সাজ' শিল্পীর মুখে শোনা গেল এমনই কথা। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এই শেষ মুহূর্তে চরম ব্যস্ততার মধ্যে কাজ করে চলেছেন 'ডাকের সাজ' শিল্পী জনার্দন মালাকার। কোনওরকম সহকারি ছাড়া শুধুমাত্র স্ত্রীকে নিয়েই 'ডাকের সাজ' তৈরি করে চলেছেন তিনি।
জনার্দনবাবু বলেন, 'আগে কান্দি বা আশেপাশের অঞ্চলে শোলা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন কলকাতার বড়বাজার কিংবা জয়নগর থেকে আমাদের শোলা নিয়ে আসতে হয়। ফলে শোলার খরচ খুব বেড়ে গেছে। পাশাপাশি এখন আর কেউ এই শোলার কাজ করতে বেশি আগ্রহী নয়। তাই সাহায্য করার লোকও আমরা পাইনা। স্বামী-স্ত্রী দু'জনে মিলেই যতটুকু পারি কাজ করি।' তিনি আরও বলেন, 'ডাকের সাজ তৈরি এই শিল্প আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আমার বাবা- দাদুর আমল থেকেই তা চলে আসছে এবং তাদের কাছ থেকেই আমার কাজ শেখা। আগে অনেক লোক একসঙ্গে মিলে এই কাজ করত বলে উৎপাদনের হারও ছিল অনেক বেশি এবং সেই হিসাবে আমাদের কাজ বাইরেও যেত। কিন্তু এখন লোকবল এবং সময়ের অভাবে কান্দি মহকুমা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলেই আমাদের কাজ যায়।' জনার্দনবাবু আরও বলেন, 'এই কাজ করে আমাদের বিশেষ কিছুই লাভ থাকে না। শুধুমাত্র পারিবারিক ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই আমরা আজও এই কাজ করে চলেছি। অবশ্যই এর প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা রয়েছে।'
সারা বছর ধরেই জনার্দন বাবুর বাড়িতে চলে 'ডাকের সাজ' তৈরির কাজ। কোনওটি করতে এক মাস আবার কোনওটি করতে দু'মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তবে আজকের এই থিমের যুগে ডাকের সাজের চাহিদা কতটা জানতে চাইলে জনার্দনবাবুর গলায় শোনা যায় আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন, 'এক সময় দুর্গার সাজ মানেই আমরা জানতাম ডাকের সাজ। কিন্তু এখন শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই থিমের ছড়াছড়ি। যে টাকা খরচ করে উদ্যোক্তারা ডাকের সাজ করবেন তার থেকে কম টাকায় হয়তো তারা নতুন 'থিম' পেয়ে যান। তাই এখন আর অনেকেই ডাকের সাজের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাতে চান না। তাই আমাদের আগামী প্রজন্ম এই শিল্পকে ধরে রাখার ক্ষেত্রেও খুব একটা আগ্রহী নয়। তবুও বলব 'ডাকের সাজে' মায়ের যে মোহময়ী রূপ ধরা পড়ে তা একেবারেই তুলনাহীন
