মনিরুল হক, কোচবিহার
দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় সারা দেশে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সন্ধানে চলছে খোঁজখবর। সেই আবহেই এবার কোচবিহার জেলার দিনহাটায় তৎপরতা বাড়াল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের নান্দিনা এলাকায় এক ব্যক্তির বাড়িতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হানা দেয় এনআইএ-র বিশেষ দল। জঙ্গি যোগ, দেশবিরোধী কার্যকলাপ ও কালোটাকার চক্রের সন্দেহে এই অভিযান চালানো হয় বলে সূত্রের খবর।
এনআইএ-র তদন্তকারীদের লক্ষ্য ছিল নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের নান্দিনা এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেন। সে বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের সহযোগিতায় তিন সদস্যের একটি এনআইএ দল আরিফের বাড়িতে অভিযান চালায়। যদিও শেষ পর্যন্ত আরিফকে গ্রেফতার করা যায়নি। তদন্তকারী সংস্থার সন্দেহ, আগে থেকেই কেউ তাকে সতর্ক করে তার পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। ওইদিন রাতে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে তল্লাশি। বাড়ির প্রতিটি ঘর, আলমারি, দোকান এবং বাইরে রাখা সামগ্রী খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা একটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেন। যা আরিফের ব্যক্তিগত ব্যবহার করা বলে দাবি। পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় সিজার লিস্ট।
আর সেই সিজার লিস্ট থেকে জানা যায়, আরিফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত থাকা, অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করা-সহ একাধিক গুরুতর ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
এদিকে আরিফের শ্বাশুড়ি সাহেরা বিবি সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “আমার জামাই বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দা। পাঁচ বছর আগে এখানে এসে মেয়েকে বিয়ে করে দিনহাটায় থাকতে শুরু করে। নয়ারহাট বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করে। পাশাপাশি ঠিকাদারির কাজও করে। এনআইএ-র লোকেরা বলেছে, ওর বিরুদ্ধে নাকি কালো টাকার কারবার, দেশ বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আছে।” তবে আরিফের শাশুড়ি দাবি করেন, আরিফ নিয়মিত কাজকর্ম করত এবং তার আচরণে কখনও সন্দেহজনক কিছু দেখা যায় নি। ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, “দেশের নিরাপত্তা সবকিছুর উপরে। দিল্লির বিস্ফোরণের পরে গোটা দেশে অভিযান চলছে। যদি কোনও ব্যক্তি বেআইনি ভাবে এখানে বসবাস করে বা তার সন্ত্রাসী যোগ থাকে, তাহলে আইন তার নিজের মতো কাজ করবে। প্রশাসন ও তদন্তকারী সংস্থা স্বাধীনভাবে তদন্ত করছে। আমরা চাই সত্য উঠে আসুক। মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে প্রশাসনের উপর ভরসা রাখুন।”
এনআইএ-র অভিযানের পর থেকে নান্দিনা এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। আরিফ হোসেনের খোঁজে তৎপর রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেই দিকেই তাকিয়ে দিনহাটাবাসী।
