আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার 'হুমকি' দেওয়ায় ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এবং তাঁর অনুগামীদের  ডানা ছাঁটার কাজ শুরু হল মুর্শিদাবাদ জেলায়।


ভরতপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল সদস্যদের আনা অনাস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার একসঙ্গে পদ হারালেন ওই সমিতির ন'জন  কর্মাধ্যক্ষ। পদ হারানো পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন হুমায়ুন অনুগামী হিসেবে জেলার রাজনীতিতে পরিচিত।

 

 সূত্রের খবর হুমায়ুন অনুগামীদের সমস্ত পদ থেকে সরানোর জন্য ভরতপুর-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নজরুল ইসলামের অনুগামীরা সম্প্রতি ওই পঞ্চায়েত সমিতির ন'টি স্থায়ী সমিতির বিরুদ্ধে অনাস্থা বৈঠক ডাকার আবেদন করে কান্দির মহকুমা শাসকের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। বুধবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে হুমায়ুন অনুগামীরা শোচনীয় পরাজয়ের মুখোমুখি হন।

 

প্রশাসন সূত্রের খবর,আজকের অনাস্থার ভোটাভুটিতে ৩৬ জন সদস্যের মধ্যে ২৮ জন সদস্য উপস্থিত থেকে অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। একজনও বিপক্ষে ভোট দেননি। এর ফলে ভরতপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতি'র সবকটি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষরা পদচ্যুত হলেন। নতুন করে ভোটাভুটির মাধ্যমে আবার সেখানে নতুন স্থায়ী সমিতি ও কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন করতে হবে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, অপসারিত কর্মাধ্যক্ষদের মধ্যে চার জন ভরতপুরের বিধায়ক তৃণমূলের হুমায়ুন কবীরের কট্টর  অনুগামী ছিলেন। মূলত তাঁদের অপসারণের জন্যই ভরতপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নজরুল ইসলামের অনুগামীরা ওই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন।  নতুন করে স্থায়ী সমিতি গঠন হওয়ার পর হুমায়ুন অনুগামীদের আর যে কর্মাধ্যক্ষ পদে স্থান হবে না তা একপ্রকার নিশ্চিত।

 

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েত সমিতির ২৩টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনে তৃণমূল, ৫টি আসন কংগ্রেস এবং ১টি আসনে নির্দল প্রার্থী জয়লাভ করেন। পরে কংগ্রেস ও নির্দলের জয়ী প্রার্থীরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ২৩টি আসন দখল করে রাজ্যের শাসক দল। সভাপতি হন সালমা সুলতানা এবং সহ-সভাপতি সঞ্জয় সরখেল। যদিও কয়েক মাস আগে সঞ্জয়বাবুর মৃত্যুতে সহ সভাপতির পদ বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে।

 

বুধবার অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে যারা সই করেছেন, তার মধ্যে আবার পাঁচ জন কর্মাধ্যক্ষ পদেই রয়েছেন। ফলে বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলেছে, এ কেমন অনাস্থা প্রস্তাব যেখানে কর্মাধ্যক্ষরা নিজেরাই নিজেদের  পদ থেকে অপসারণ চাইছেন!

 

ওই পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আলি মহম্মদ খান বলেন, 'যে ১৪ জন স্থায়ী সমিতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন, তার মধ্যে পাঁচজন কর্মাধ্যক্ষ রয়েছেন। ফলে তাঁরা নিজেরা নিজেদের অপসারণ চেয়ে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের হাসির পাত্র করে তুলেছেন। সেই সঙ্গে দলকেও অপদস্থ করেছেন ।'


তিনি দাবি করেন 'আমরা আট জন সদস্য বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের অনুগামী। তার মধ্যে চার জন স্থায়ী সমিতিতে কর্মাধ্যক্ষ পদে রয়েছি। তৃণমূলের বিরোধী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য আমাদের সরিয়ে দিয়ে নিজেদের গোষ্ঠীর লোকজনকে ওই পদে বসানো। এর পিছনে রয়েছেন ভরতপুর-১ ব্লক সভাপতি নজরুল ইসলাম (টারজান)। তাঁর ইচ্ছে আমাকে সরিয়ে ওই পদে তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে বসানো।' 


গোটা বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,'দল  অনাস্থার বিষয়ে সবই জানে। আমাদের দলের সংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার এবং ব্লক সভাপতি নজরুল ইসলামের মদতে গোটা ঘটনা ঘটেছে। তবে আজকের ভোটাভুটিতে আমি অনুপস্থিত ছিলাম।'

আরও পড়ুন: সাগরে দেখা গেল ‘ভূতের দ্বীপ’, নাসার ছবিতে ধরা পড়ল এই কাহিনী


ভরতপুর -১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন।,'আজকের ভোটাভুটিতে মোট ২৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরা সকলেই স্থায়ী সমিতি ভেঙে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।'


তিনি জানান,'কংগ্রেস থেকে যে সমস্ত সদস্য তৃণমূলের যোগ দিয়ে কর্মাধ্যক্ষের পদ পেয়েছিলেন তাঁরা এলাকার উন্নয়নের জন্য কোনও কাজ করছিলেন না। তাই সকলে দলীয় অনুমতি নিয়ে বর্তমান স্থায়ী সমিতি ভেঙে দিয়ে নতুন স্থায়ী সমিতি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। '
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভরতপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে নতুন স্থায়ী সমিতি গঠন ও কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন  করার জন্য বৈঠক হবে।