আজকাল ওয়েবডেস্ক: চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লকের মধ্যহিংলী ও ঝাউপাতরা এলাকায়। একদল ক্ষিপ্ত হনুমান গ্রামজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। গত কয়েকদিনে এই হনুমানদের আক্রমণে আহত হয়েছেন প্রায় ২৪ জন গ্রামবাসী। শুধু পুরুষ নয়, মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক—কারও রেহাই নেই বলেই জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে মধ্যহিংলী ও ঝাউপাতরা এলাকায় নতুন করে আহত হয়েছেন আটজন। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গিয়েছে। গুরুতর আহত চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় বাসুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের শরীরে কামড়ের চিহ্ন, নখের গভীর আঁচড়—সব মিলিয়ে যন্ত্রণায় কাতর তাঁরা।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, রাস্তায় চলাফেরা করার সময় অতর্কিতভাবে মানুষের গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়ে দিচ্ছে ক্ষিপ্ত হনুমানের দল। অনেকের মাথা, হাত, পা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম তৈরি হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। এলাকার স্কুল পড়ুয়ারাও দিশেহারা। অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না আতঙ্কে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিষয়টি বারবার বন বিভাগকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাঁদের প্রশ্ন—মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন বিভাগ কেন এখনো সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি? হনুমান আতঙ্ক কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমাঝেই হনুমানের উপদ্রবের কথা শোনা গিয়েছে। সম্প্রতি বীরভূমের রামপুরহাটে হনুমানের হামলার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। যখন তখন পথচলতি মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হনুমান। এমনকী হনুমানের ধাক্কায় একটি চলন্ত স্কুটিও রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে। স্কুটি থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন চালক। তার আগে হনুমানের কামড়ে নাকে গুরুতর আঘাত পান একজন পদস্থ ব্যাঙ্ককর্মী। তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে। 

হনুমানের এই তাণ্ডবের পিছনে তান্পশুপ্রেমী ও পরিবেশ রক্ষায় যুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, নির্বিচারে জঙ্গল ধংস, যত্রতত্র গাছ কেটে ফেলা এর পিছনে একটি বড় কারণ। তাঁদের কথায়, জঙ্গলের প্রাণীদের জঙ্গল থেকে বিতারিত করছে মানুষ। মানুষের লোভের জন্য বাসস্থান হারাচ্ছে সেখানকার প্রাণীরা। যার জেরেই তারা ঢুকে পড়ছে মানুষের বসতিতে। খাবারের খোঁজে। সেই কারণেই বাড়ছে মানুষ ও বন্যপ্রাণীদের সংঘর্ষ।