আজকাল ওয়েবডেস্ক: কচুরিপানা এসে আটকে দিল স্কুলের পরীক্ষা!  শুনতে অবাক লাগলেও এমনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া ব্লকের লালনগর হাই স্কুলে। জেলার বহরমপুর এবং হরিহরপাড়া ব্লকের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ভান্ডারদহ বিল কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় গত প্রায় তিন দিন ধরে ওই বিল দিয়ে নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার ফলে কয়েক'শ ছাত্রছাত্রী আর স্কুলে আসতে পারছে না। এই কারণে স্কুলের সমস্ত শিক্ষকদের মতামত নিয়ে  ছাত্র-ছাত্রীদের 'সামেটিভ' পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সারওয়ার্দী বিশ্বাস। 
হরিহরপাড়া ব্লকের লালনগর হাইস্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় বারোশো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। শ্রীরামপুর, পাঁচবেড়িয়া ,নওপাড়া, শিমুলিয়া সহ আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রাম থেকে পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী লালনগর হাই স্কুলে প্রত্যেকদিন পড়াশোনা করতে যায়। স্কুলে পৌঁছনোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান ভরসা ভান্ডারদহ বিল দিয়ে চলাচলকারী নৌকা।
স্কুলের এক শিক্ষক জানান, প্রতিবছর বর্ষাকালে কচুরিপানা এসে ভান্ডারদহ বিল প্রায় ভরে দেয়। এই বিল দীর্ঘদিন আগে ভাগীরথী নদীর একটি অংশ ছিল। বর্তমানে অশ্বক্ষুরাকৃতি এই বিলের বিভিন্ন অংশে বছরের পর বছর কচুরিপানা এবং কচু গাছ জন্মে বিল পুরোপুরি নৌ পরিবহনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
তিনি জানান ,এই বিলে আগে দুর্গা পুজোর পর নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হত। কিন্তু কচুরিপানার সমস্যার কারণে ২০১৪ সালের পরে সেই প্রতিযোগিতাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
স্কুল সূত্রের খবর, শ্রীরামপুর, পাঁচবেড়িয়া, নওপাড়া শিমুলিয়া সহ স্কুলের উল্টো দিকের পাড়ের অন্য কয়েকটি গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে এই মুহূর্তে বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা করে স্কুলে আসা একপ্রকার অসম্ভব। ছাত্র-ছাত্রীদের অতিরিক্ত পথ ঘুরে স্কুলে আসার পরিবহন খরচ অনেক অভিভাবক বহন করতে পারবে না।
স্কুল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে , এ মাসের ২ তারিখ থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর 'সামেটিভ' পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ১২ তারিখে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৯ তারিখ পরীক্ষা হওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণীর বাকি পরীক্ষাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
স্কুল সূত্রের খবর, প্রায় প্রতি বছরই বর্ষাকালে ভান্ডারদহ বিলে কিছু অতিরিক্ত কচুরিপানা জমা হলেও কোনওদিন কচুরিপানার কারণে স্কুলের পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ তরফ থেকে অভিভাবকদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে স্কুলের পরীক্ষা আপাতত স্থগিত রাখা হবে।
স্কুলের এক শিক্ষক জানান, 'বহরমপুর থেকে যারা আমরা এতদিন ঘাট পার হয়ে লালনগর হাইস্কুলে যেতাম তাঁরা এখন বাধ্য হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে নিশ্চিন্তপুর হয়ে স্কুলে যাচ্ছি। ঘাট বন্ধ থাকার কারণে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের হাজিরা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।'
আরও পড়ুনঃ নামকরা রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন যুবক, খাবার আসতেই যা দেখলেন তাতে গা গুলিয়ে উঠল, ভিডিও ভাইরালে চাঞ্চল্য 
 
  
 
 রোহিত নামে ওই ঘাটের এক মাঝি জানান,' শনিবার সন্ধে সাড়ে ছটার পর থেকে কচুরিপানা স্রোত  ভান্ডারদহ বিলকে প্রায় সম্পূর্ণ ভরে দেওয়ায় সেদিন থেকেই নৌকা চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।' তিনি জানান, 'এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চার হাজার লোক  পারাপার করতেন। তাঁদেরকে এখন ঘুর পথে যেতে হচ্ছে।'
 
  
 
 স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সারওয়ার্দী বিশ্বাস বলেন,' প্রচুর শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রী যেমন বহরমপুরের দিক থেকে ঘাট পার হয়ে লালনগরে আসেন , তেমনই  লালনগরের দিক থেকেও প্রচুর শ্রমিক ঘাট পার করে  উল্টো দিকে যান কাজের সন্ধানে। ভান্ডারদহ বিল  কচুরিপানায় সম্পূর্ণ ভরে যাওয়ায় নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে রয়েছে। এর ফলে আমরা সকলেই প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়েছি। ইতিমধ্যেই  প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকদের লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।'
