শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

স্বল্পমেয়াদি ব্যাঙ্ক জমায় সুদ বাড়তে পারে

Riya Patra | ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১৮ : ১৬


সুশান্ত কুমার সান্যাল: এই নিয়ে টানা ছ" বার রেপো রেট একই (৬.৫০ শতাংশ) রাখল দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। অর্থনৈতিক বিকাশে সাফল্যের ধারবাহিকতা বজায় রাখতেই এমন পদক্ষেপ, বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক অন্য ব্যাঙ্কগুলিকে যে ঋণ দেয়, তার সুদের হারকে বলা হয় রেপো রেট। এটা বাড়ালে দেশের ব্যাঙ্কগুলির ঋণদানের ক্ষমতা কমে আসে, আর বিপরীতে বাড়ে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা। অর্থাৎ বাজারে নগদের জোগান নিয়ন্ত্রণে এটি হাতিয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে ব্যাঙ্কে স্বল্পকালীন জমায় সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই নাকি বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কেন, বিশ্লেষণ করা যাক।

প্রথমত, ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী বাজেটের পর আশা ছিল রেপো রেট কমবে, সাধারণ মানুষের গৃহঋণের বোঝা কিছুটা কমবে, কারণ রেপো রেট কমলে তাল মিলিয়ে ইএমআই-ও কমবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অন্য চিত্র। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রিয়েল এস্টেটের চাহিদা বেশ আশাপ্রদ ছিল, যা এখনও বজায় আছে। দেখা যাচ্ছে দেশের প্রথম সারির শহরগুলিতে (বিশেষত দেশের সাতটি প্রধান শহরে) রিয়েল এস্টেটের চাহিদা লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী। এমনকি দেশের টিয়ার-২ বা টিয়ার-৩ শহরগুলিতেও আবাসনের চাহিদা বাড়ছে। তাই গৃহঋণের বর্ধিত ইএমআই খুব একটা ঋণাত্মক প্রভাব ফেলছে না রিয়েল এস্টেট বাজারে, যাতে একপ্রকার খুশি এই বাজার। অন্যদিকে তথ্য বলছে যে, মানুষ বেশ সাবলীলভাবেই পরিশোধ করছে তাদের নেওয়া গৃহঋণ, অর্থাৎ রেপো রেট বেড়ে থাকলেও তার প্রভাব পড়ছে না এক্ষেত্রে।

দ্বিতীয়ত, তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে ভারতে ব্যাঙ্ক ঋণের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা। ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গড়ে ব্যাঙ্ক ঋণ বেড়েছে প্রায় ১১.৫০ শতাংশ হারে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক তথ্য জানাচ্ছে, ২০২৪-এর জানুয়ারিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাঙ্ক ঋণের বেড়েছে গত বছরের একই মেয়াদের তুলনায় প্রায় ২০.০৩ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাঙ্ক ঋণের চাহিদা বৃদ্ধির দিকেই রয়েছে। সিআরআইএফ-এফআইডিসি-র এক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে দেশের নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল সেক্টর থেকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৪,৭৭৮ কোটি টাকায়। আবার, শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ এর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে গাড়ি ঋণের পরিমাণ ৫৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দু"চাকা থেকে চারচাকার গাড়ি কেনার ঝোঁক দিন দিন বাড়ছে, সেই সঙ্গে গাড়ি ঋণের চাহিদাও বাড়ছে। অন্যদিকে শেষ ১২ মাসে চোখে পড়ার মতো হারে বেড়েছে শিক্ষাঋণের চাহিদাও যা এই মেয়াদে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১২ হাজার কোটিরও বেশি। পাশাপাশি, দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঋণের চাহিদাও। আর সর্বক্ষেত্রে এই ব্যাঙ্ক ঋণের চাহিদা বৃদ্ধিতে ব্যাঙ্কগুলিকে সতর্ক করেছে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক।

তৃতীয়ত, ফিনান্সিয়াল সেক্টরে প্রযুক্তির অবাধ প্রবেশ খুলে দিচ্ছে সহজে ঋণের সুযোগও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসছে ঋণের পরিষেবা। তাই সেদিক থেকেও ঋণের চাহিদা বাড়ছে।

চতুর্থত, দেশের ব্যাঙ্কগুলি যত বেশি ঋণ দিতে পারবে, ততই তারা শক্তিশালী হবে, কারন প্রদেয় ঋণের ওপর যে সুদ ব্যাঙ্ক পেয়ে থাকে, তার থেকে অনেকটাই কম সুদ দিয়ে তাদের কাছে গচ্ছিত আমানতের ওপর। তাই যত বেশি ঋণ দিতে পারবে, ততই ব্যাঙ্কের লাভের ভাণ্ডার ফুলেফেঁপে উঠবে। তবে এ ব্যাপারে ব্যাঙ্কগুলোর যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ ব্যাঙ্কের ঝুঁকির পরিমাণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সেই কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাঙ্কগুলির ঋণ দিতে প্রয়োজন নগদের সহজ জোগান। এই পর্যাপ্ত নগদের জোগান আনতে হলে ব্যাঙ্কগুলিকে আরও লোভনীয় অফার আনতে হবে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে, আর সেক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদী আমানতের ওপর দিতে হবে বেশি সুদ। তবে তাঁরা এটাও বলছেন যে, এক্ষেত্রে ১০০ থেকে ৩০০ দিন মেয়াদি জমারাশির ওপরই সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনা। এখনই বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক তাদের সেভিংস খাতায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে আরম্ভ করেছে। তাই এক বছরের বেশি মেয়াদের ক্ষেত্রে সুদের হার বাড়ানোর ব্যাপারটা সহজ হবে না। তাই যাঁরা স্বল্পমেয়াদী সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করছেন, একটু চোখ-কান খোলা রাখুন, কোথায় কোন ব্যাঙ্ক কত সুদ দিচ্ছে তার ওপর। কারন এক্ষেত্রে একটু সচেতন হলেই স্বল্প মেয়াদে একটু বেশি টাকা আয় করে নিতে পারেন। কারণ, দীর্ঘমেয়াদী আমানতের ওপর সুদের হার বাড়ানোর ঝুঁকি ব্যাঙ্কগুলো সাধারণভাবে এখনই নেবে বলে মনে হয় না।




বিশেষ খবর

নানান খবর

Advertise with us


রবিবার অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়া