আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিখ্যাত পররাষ্ট্রনীতি পণ্ডিত এবং প্রতিরক্ষা কৌশলবিদ অ্যাশলে জে টেলিসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভার্জিনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জেলায় অবস্থিত মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বেআইনিভাবে জাতীয় প্রতিরক্ষা তথ্য গোপন রাখার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে চীনা আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিযোগও রয়েছে। 

একটি ফৌজদারি হলফনামা অনুসারে, ৬৪ বছর বয়সী টেলিসের বিরুদ্ধে তাঁর বাড়িতে ১,০০০ পৃষ্ঠারও বেশি অতি-গোপনীয় এবং গোপন নথি রাখার অভিযোগ রয়েছে। বিচার বিভাগ জানিয়েছে যে, দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫০,০০০ ডলার জরিমানা হতে পারে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেলিস পররাষ্ট্র দপ্তরের উপদেষ্টা হিসেবে অবৈতনিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মার্কিন বিমান বাহিনীর কৌশল সম্পর্কিত একটি গোপন নথি মুদ্রণ করতে দেখা গিয়েছিল। ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের একটি রেস্তোরাঁয় তিনি চীনা সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন বলে অভিযোগ। চীনা সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে এমনই একটি নৈশভোজের সময় টেলিস একটি ম্যানিলা খাম বহন করেছিলেন বলে অভিযোগ। যা তিনি সঙ্গে নিয়ে রেস্তঁরা বার হননি। আরও অভিযোগ, চীনা কর্মকর্তারা তাঁকে উপহারের একটি ব্যাগ দিয়েছিলেন।

সরকারি আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন যে, টেলিস ১৮ ইউএসসি ৭৯৩(ই) লঙ্ঘন করেছেন। এই আইনে প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত নথিপত্র অনুমোদনহীন ভাবে দখল বা নিজের অধীনে রাখা নিষিদ্ধ। তদন্তকারীরা টেলিসের সুরক্ষিত স্থান থেকে গোপন নথিপত্র সরিয়ে ফেলা এবং চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিযোগও খতিয়ে দেখছেন। মার্কিন অ্যাটর্নি লিন্ডসে হ্যালিগান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগগুলি ঘোষণা করে বলেছেন যে, অভিযুক্তে আচরণ ‘আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি’ তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন: ভারত আফগান ঘনিষ্ঠতা মানতে পারছে না পাকিস্তান? ফের তপ্ত পাক-আফগান সীমান্ত, নতুন করে সংঘর্ষে জড়াল সেনা ও তালিবান

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১১ অক্টোবর, শনিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই দিনই তাঁর রোমে যাওয়ার কথা ছিল। পররাষ্ট্র দপ্তর তাঁর গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দপ্তর এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। টেলিসের আইনজীবীরা এখনও অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

টেলিস একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং নীতি অনুশীলনকারী। তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশীয় নিরাপত্তা এবং মার্কিন-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে ওয়াশিংটনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি মার্কিন সরকারের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেটের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে তিনি মার্কিন-ভারত বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তিনি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিশেষ সহকারী এবং কৌশলগত পরিকল্পনা ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সিনিয়র পরিচালক হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন।

সরকারি চাকরির আগে, টেলিস RAND কর্পোরেশনে একজন সিনিয়র নীতি বিশ্লেষক এবং অধ্যাপক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বিস্তৃত পণ্ডিতিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে Striking Asymmetries: Nuclear Transitions in Southern Asia এবং Revising US Grand Strategy Toward China এর মতো বই। তিনি অন্যান্য পেশাদার সংস্থার মধ্যে কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সদস্য।