বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টি এবং তাঁর স্বামী রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে আনা চাঞ্চল্যকর ৬০.৪০ কোটি টাকার প্রতারণা মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসেছে। সম্প্রতি, তদন্তকারী দল অভিনেত্রীর বাসভবনে গিয়ে তাঁকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করে। এই জিজ্ঞাসাবাদ প্রমাণ করে যে, মুম্বই পুলিশের কাছে এই অভিযোগের গুরুত্ব কতখানি।
এই বিশাল অঙ্কের প্রতারণার মূল অভিযোগ এনেছেন দীপক কোঠারি, যিনি লোটাস ক্যাপিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড-এর পরিচালক। এটি একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক সংস্থা (এনবিএফসি)। কোঠারি তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, শিল্পা এবং রাজ কুন্দ্রা ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তাঁর সংস্থার কাছ থেকে একটি বড় অঙ্কের ঋণ নিতে চেয়েছিলেন।
দম্পতি ঋণ এজেন্ট রাজেশ আর্যার মাধ্যমে কোঠারির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই সময় তাঁরা নিজেদেরকে 'বেস্ট ডিল টিভি প্রাইভেট লিমিটেড'-এর পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন। এটি ছিল তাঁদের মালিকানাধীন একটি হোম শপিং এবং অনলাইন রিটেল প্ল্যাটফর্ম, যা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এফআইআর অনুসারে, শিল্পা শেঠি সেই সময় এই কোম্পানির একজন স্বাক্ষরকারী ছিলেন এবং কোম্পানিটির ৮৭.৬১ শতাংশ শেয়ার তাঁর নামে ছিল।

অভিযোগ অনুযায়ী, দম্পতি প্রথমে ১২ শতাংশ সুদের হারে ৭৫ কোটি টাকার একটি ব্যবসায়িক ঋণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু ঋণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তাঁরা কৌশল পরিবর্তন করেন। উচ্চ হারে কর এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা কোঠারিকে প্ররোচিত করেন যে, ঋণের এই অর্থকে সরাসরি ঋণ হিসেবে না দেখিয়ে একটি 'বিনিয়োগ' হিসেবে নথিভুক্ত করা হোক। এই উদ্দেশ্যেই একটি শেয়ার সাবস্ক্রিপশন চুক্তি ব্যবহার করা হয়। দম্পতি আশ্বাস দেন যে, তাঁরা নিয়মিত মাসিক রিটার্ন দেবেন এবং মূল অর্থ অবশ্যই ফেরৎ দিয়ে দেবেন।
এই আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই অভিযোগকারী তাঁর টাকা বিনিয়োগ করেন। মোট ৬০.৪০ কোটি টাকা দুটি পৃথক কিস্তিতে বেস্ট ডিল টিভির এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। এর মধ্যে প্রথম কিস্তি ৩১.৯৫ কোটি টাকা দেওয়া হয় ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে এবং বাকি ২৮.৫৩ কোটি টাকা দেওয়া হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। কোঠারি আরও জানান যে, লেনদেনটিকে বৈধ প্রমাণ করার জন্য দম্পতি ৩.১৯ লক্ষ টাকার স্ট্যাম্প ডিউটিও প্রদান করেছিলেন।
আরও পড়ুন: রশ্মিকার সঙ্গে বাগদানের জল্পনার মাঝে ভয়ঙ্কর পথ দুর্ঘটনা বিজয়ের! এখন কেমন আছেন অভিনেতা?
দীপক কোঠারি তাঁর অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে তিনি তাঁর বিনিয়োগকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য রাজ কুন্দ্রা ও শিল্পা শেট্টির সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেন। কিন্তু দম্পতি প্রতিবারই কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কারণ দেখিয়ে অর্থ ফেরৎ দিতে বিলম্ব করতে থাকেন। পরবর্তীতে কোঠারি জানতে পারেন যে, দম্পতি সেই অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে নিজেদের ব্যক্তিগত সুবিধা ও স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই তিনি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুম্বই পুলিশের ইওডব্লিউ গত আগস্ট মাসে শিল্পা শেট্টি এবং রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের করে। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে, কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে একটি লুক-আউট সার্কুলার জারি করে, যা তাঁদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার পথে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইওডব্লিউ ইতিমধ্যেই গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজ কুন্দ্রার বয়ান রেকর্ড করেছে, তবে সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি এড়াতে সেটি মুম্বইয়ের একটি গোপন স্থানে করা হয়েছিল।
এর ধারাবাহিকতায়, সম্প্রতি পুলিশের একটি দল শিল্পার বাসভবনে গিয়ে তাঁকে চার ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একজন বরিষ্ঠ আইপিএস আধিকারিক এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান যে, "শিল্পার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে এবং মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত তাঁর ব্যাঙ্ক লেনদেন এবং কোম্পানির নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।" এই মামলায় দম্পতির বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ইওডব্লিউ বর্তমানে সমস্ত আর্থিক প্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছে এবং তদন্তের পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
