আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকালে ঠান্ডা জলের ঝাপটা, নাকি দিনভর ক্লান্তির পর উষ্ণ ধারাস্নানের আরাম? কোনটি বেশি উপকারী? স্নানের জল ঠান্ডা হবে না গরম, এই বিতর্ক বহু দিনের। নিছক আরাম বা অভ্যাসের বাইরেও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাস্থ্যের নানা দিক। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, গরম এবং ঠান্ডা, দুই ধরনের জলে স্নানেরই নিজস্ব উপকারিতা এবং কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতাও রয়েছে। তাই কোনটি আপনার জন্য শ্রেয়, তা জানার আগে দুইয়ের গুণাগুণ বিচার করে নেওয়া জরুরি।

গরম জলে স্নানের উপকারিতা
১। পেশির আরাম: গরম জলে স্নান করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এর ফলে পেশি শিথিল হয় এবং পেশির আঁটসাঁট ভাব বা ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। শরীরচর্চার পর বা দিনভর খাটুনির পর ঈষদুষ্ণ গরম জলে স্নান করলে শরীর ঝরঝরে লাগে।
২। মানসিক চাপমুক্তি: উষ্ণ জল স্নায়ুকে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হালকা গরম জলে স্নান করলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হতে পারে এবং গভীর ঘুম আসতে পারে।
৩। ত্বকের পরিচ্ছন্নতা: গরম জল ত্বকের রন্ধ্রগুলি খুলে দেয়। ফলে ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা ও অতিরিক্ত তেল বেরিয়ে আসে এবং ত্বক ভালভাবে পরিষ্কার হয়।
৪। সর্দি-কাশিতে আরাম: ঠান্ডা লাগলে বা নাক বন্ধ থাকলে, গরম জল প্রাকৃতিক ভাবেই শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

ঠান্ডা জলে স্নানের উপকারিতা
১। ঘুম কেটে যায়: সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা জলে স্নান করলে তা শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। এতে হৃদস্পন্দন বাড়ে, শরীরে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় এবং নিমিষেই ঘুম ঘুম ভাব কেটে গিয়ে শরীর ও মন সতেজ এবং সতর্ক হয়ে ওঠে।
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: গবেষকদের একাংশের মতে, নিয়মিত ঠান্ডা জলে স্নান করলে শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়তে পারে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে।
৩। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য: ঠান্ডা জল ত্বকের রন্ধ্রকে সংকুচিত করে, ফলে ময়লা জমতে পারে না। এটি ত্বকের স্বাভাবিক তৈলাক্ত ভাব বজায় রাখে, যা ত্বককে শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। একই ভাবে, ঠান্ডা জল চুলের কিউটিকলকে মসৃণ রাখে, ফলে চুল আরও উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যবান দেখায়।
৪। মেজাজ ভাল রাখে: ঠান্ডা জলের অভিঘাত মস্তিষ্কে এন্ডরফিন নামক ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণ করতে উৎসাহিত করে। এর ফলে মন ভাল থাকে। মানসিক অবসাদ কাটাতে এবং মেজাজ ভাল রাখতে যা অপরিহার্য।

তাহলে কোনটি সেরা? চিকিৎসকদের মতে, বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তি নির্ভর। গরম বা ঠান্ডা, কোনও একটিকে সেরা বলা মুশকিল। এটি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, বয়স, আবহাওয়া এবং লক্ষ্যের উপর। যেমন, আর্থারাইটিসের ব্যথায় গরম জল আরাম দেয়, আবার ত্বক বা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ঠান্ডা জল ভাল। সবচেয়ে ভাল উপায় হল, নিজের শরীরের কথা শোনা।
তবে খুব বেশি গরম জলে স্নান করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং রক্তচাপের রোগীদের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে। আবার, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য হঠাৎ করে ঠান্ডা জলে স্নান করা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই নিজের শরীর বুঝে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।