সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। একের পর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করে চলেছে বিজ্ঞান। সম্প্রতি জাপানের বিজ্ঞানীরা এমনই এক বিস্ময়কর গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন যা ভবিষ্যতে মানুষের মস্তিষ্কে স্মৃতির রহস্য উন্মোচনে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।


জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হারুও কাসাই এবং তাঁর টিম এক পরীক্ষায় দেখিয়েছেন, নীল আলো ফেলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট সংযোগ দুর্বল বা ধ্বংস করা যায়। আর যার ফলেই স্মৃতি মুছে ফেলা যাবে।

আরও পড়ুনঃ হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে এআই স্টেথোস্কোপ! মাত্র ১৫ সেকেন্ডে ধরা পড়বে প্রাণঘাতী হৃদরোগ


ঠিক কীভাবে হয় গবেষণা? গবেষকরা প্রথমে ইঁদুরকে মোটর স্কিল শেখান। যেমন একটি ঘূর্ণায়মান দণ্ডে ভারসাম্য রক্ষা করা। এটি শেখার পর ইঁদুরের মস্তিষ্কে তৈরি হয় নতুন ধরনের ক্ষুদ্র গঠন, যাকে বলে 'ডেনড্রিটিক স্পাইন'। এই স্পাইনগুলোতেই মস্তিষ্কে শেখা তথ্য বা স্মৃতি হিসেবে জমা থাকে বলে মত বিজ্ঞানীদের। এরপর বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ অপটিক্যাল প্রোব (পিএ র‍্যাক১) ব্যবহার করেন, যা আলো পড়লে সরাসরি এই নতুন স্পাইনগুলোকে আঘাত করতে পারে। যখন গবেষকরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে নীল লেজার আলো ফেলেন, দেখা যায় ওই স্পাইনগুলো ছোট হয়ে যায় বা সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই ইঁদুর শেখা কাজ ভুলে যায়।


এই গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রমাণ মিলেছে যে, মস্তিষ্কে স্মৃতি জমা থাকে নির্দিষ্ট সিন্যাপটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে, আর সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করলে স্মৃতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানে আলো প্রয়োগ করে শুধু নতুন শেখা 'মোটর মেমোরি' নয়, ভবিষ্যতে হয়তো ট্রমা বা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতিও দুর্বল করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটে পুরুষেরও আসতে পারে দুটি রেখা! জানেন আসলে ‘পজিটিভ’ ফলাফল কোন ভয়ঙ্কর রোগের ইঙ্গিত?

তবে এই গবেষণার সতর্কবার্তাও রয়েছে। পরীক্ষাটিএখন পর্যন্ত শুধু ইঁদুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মানুষের মস্তিষ্কে এ ধরনের প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে গেলে বিশাল জটিলতা ও নৈতিক প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। তাই বাস্তবে মানুষের ক্ষেত্রে স্মৃতি মুছে ফেলা এখনও অনেক দূরের বিষয়।

গবেষক দলের মতে, এটি মূলত স্মৃতি কীভাবে গঠিত ও সংরক্ষিত হয় তা বোঝার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে চিকিৎসা বা বাস্তবে এর প্রয়োগের জন্য আরও বহু গবেষণা ও সময় প্রয়োজন।