আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্পর্কে নতুন ধরণের "বিশ্বাসের পরীক্ষা" নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি করেছেন এক মহিলা। মেগ নামের ওই তরুণী প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি তার প্রেমিক ওয়েনকে (Owain) তার সেরা বান্ধবী বনি’র (Bonnie) সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে যেতে অনুমতি দিয়েছেন—শুধুমাত্র নিজের মনকে পরীক্ষা করার জন্য। মেগ এবং ওয়েন এক বছর ধরে সম্পর্কে রয়েছেন। দু’জনের প্রথম দেখা হয়েছিল একটি এডাল্ট ভিডিও শুটিং-এর সময়। দু’জনেই এডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন, তাই শুরু থেকেই তাদের সম্পর্ক ছিল ‘ওপেন’। মেগের কথায়, “এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গেলে একমুখী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব।”
সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল Love Don’t Judge-এ প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন মেগ। সেখানে তিনি জানান, প্রথমে এই সিদ্ধান্তে তিনি কিছুটা “উদ্বিগ্ন কিন্তু উত্তেজিতও” ছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনজন একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়েন ও বনি উপরে চলে যান এবং মেগ একা টেবিলে বসে থাকেন। মেগ বলেন, “যখন ওয়েন আমাকে জানালো যে সে বনি’র সঙ্গে শোওয়ার কথা ভাবছে, আমি অবাক হইনি। আমাদের তিনজনের মধ্যে সবসময় ঘনিষ্ঠতা ছিল। একসাথে সময় কাটানো, আলিঙ্গন—সবই স্বাভাবিক। তাই এটাও স্বাভাবিক লেগেছে।”
যদিও সম্পর্কের শুরুর দিকে ঈর্ষার মুহূর্ত এসেছিল, পরে তারা ‘কমিউনিকেশন’-এর মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠেন। মেগ ও ওয়েন বলেন,
“শুরুর দিকে আমরা স্পষ্টভাবে জানতাম না সম্পর্কের সীমারেখা কোথায়। পরে বুঝেছি, যতক্ষণ না পর্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা হচ্ছে, ততক্ষণ সীমা নির্ধারণ হয় না। তাই আমাদের জন্য যোগাযোগই হলো প্রধান শর্ত।” তবে মেগ স্বীকার করেছেন, বনি ও ওয়েনের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে তার ভিতরে চাপা ভয় কাজ করছিল। তিনি বলেন, “আমি জানি, পুরো রাত ওয়েনকে প্রচুর প্রশ্ন করব—কীভাবে ছিল, আমার সঙ্গে তার অভিজ্ঞতার তুলনায় কেমন আলাদা ছিল। যদি কেউ বলে যে সে আমার চেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে, তবে সেটা আমাকে ভিতর থেকে ভেঙে দেবে।”
ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই অনলাইনে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকেই এই সম্পর্কের ধরনকে “অস্বাভাবিক” ও “অস্থায়ী” বলে কটাক্ষ করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, মেগ যদি এতটাই উদ্বিগ্ন থাকেন তবে এই সিদ্ধান্ত আদৌ ঠিক হয়েছে কিনা। একজন দর্শক মন্তব্য করেছেন: “সে নাকি বান্ধবীর সঙ্গে নিজের তুলনা জানতে চায়? এটা ভালোভাবে শেষ হবে না।” অন্য একজন লিখেছেন: “আমি আসলে ওই মেয়েটির জন্যই চিন্তিত। যদি সে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পায়, তবে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।” তবে মেগ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “সব মানুষের সম্পর্কের ধরন আলাদা। আমাদের জীবনযাপন আমাদের মতো। সবাইকে খুশি করার জন্য আমরা কিছু করি না। যারা একমত নন, তারা নাও হতে পারেন। আমরা যেমন আছি, তাতে আমরা খুশি।”
এই ধরনের সম্পর্কের ঘটনা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের গোপন পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না—এটি সমাজে সম্পর্ক, নৈতিকতা ও বিশ্বাস নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দেয়। প্রচলিত পরিবারকেন্দ্রিক সমাজে দাম্পত্য বা প্রেমের সম্পর্কে একগামীতা (monogamy) দীর্ঘদিন ধরে মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। মেগ ও ওয়েনের মতো সম্পর্ক এই কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে, যা সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত, মানসিক অভিঘাতের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। যে নারী স্বেচ্ছায় সঙ্গীকে বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে নিলেও, ভেতরে ভেতরে তুলনা, ঈর্ষা ও নিরাপত্তাহীনতা জন্ম নিতে পারে। এতে আত্মসম্মান ও আত্মমূল্যায়নের উপর চাপ পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের পরীক্ষা অনেক সময় সম্পর্ক ভাঙনের পথও খুলে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক প্রতিক্রিয়া অনিবার্য। অধিকাংশ মানুষ এখনও সম্পর্ককে নৈতিকতার নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে দেখে। ফলে অনলাইনে কটাক্ষ, সমালোচনা ও নিন্দা—এসবের অভিঘাত মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তৃতীয়ত, এ ধরনের ঘটনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্কের সংজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। অনেকেই ভেবে নিতে পারে, সম্পর্ক মানে কেবল স্বাধীনতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অথচ মানসিক স্থিতিশীলতা, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতির মূল্য কমে যেতে পারে। অতএব, ব্যক্তিগতভাবে যেটি "স্বাধীন সিদ্ধান্ত", সেটি সামাজিকভাবে নতুন এক মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও নৈতিক প্রশ্নের জন্ম দেয়।
