আজকাল ওয়েবডেস্ক: রেলমন্ত্রী হিসেবে গোটা দেশ এবং রাজ্যে একের পর এক প্রকল্প তৈরি করেছেন। অবশ্যই তার মধ্যে ছিল কলকাতা মেট্রোর বিভিন্ন প্রকল্পগুলি। যার মধ্যে অন্যতম হল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে যে প্রকল্পগুলির সম্প্রসারিত রুটগুলি উদ্বোধন হচ্ছে সেই রুটগুলি। শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অতীতের সেই স্মৃতিচারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

দীর্ঘ একটি পোস্টে তিনি শুরু করেছেন, 'আজ একটু স্মৃতি-তারিত হতে দিন'। এরপরেই তিনি লেখেন, 'ভারতের রেলমন্ত্রী হিসেবে কলকাতায় অনেকগুলি মেট্রো রেল করিডোরের পরিকল্পনা করা ও অনুমোদন দেবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে এই শহরের বিভিন্ন প্রান্তকে (যেমন-জোকা, বেহালা, তারাতলা, গড়িয়া, নোয়াপাড়া, দক্ষিণেশ্বর, দমদম, সেক্টর ফাইভ ইত্যাদি) একটি মহানাগরিক মেট্রো গ্রিড-এ সংযুক্ত করার জন্য যাবতীয় কাজ-তার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা, প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা, সময়ে কাজ শুরু করা-সব কিছুই করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।'

আরও পড়ুন: জুড়ে গেল হাওড়া-সেক্টর ফাইভ, প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

তিনিই যে এই মেট্রোপথের স্থপতি সে প্রসঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, 'টালিগঞ্জ-গড়িয়া, দমদম-গড়িয়া, দক্ষিণেশ্বর-দমদম, সল্টলেক-হাওড়া-এই সব সংযোগের সূচনা আমার হাত দিয়ে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলপথের রুটও বাস্তবসম্মতভাবে পরিবর্তন করে তার রূপায়নের পথ আমি প্রশস্ত করি। এইসব কাজের জন্য মেট্রো রেলওয়ের একটি পৃথক জোনও আমি কলকাতায় করি। সারা ভারতে ২০টি জোন ছিল, এটি অধিকন্তু নূতন হয়। ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্টেশন তৈরির ঘোষণাও ছিল আমার।' 

?ref_src=twsrc%5Etfw">August 22, 2025

রেলমন্ত্রী হিসেবে যেমন তিনি এরাজ্যে পরিকল্পনা করেছেন একাধিক মেট্রো প্রকল্পের তেমনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেই প্রকল্পগুলির কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেই বিষয়টিও খেয়াল রেখেছিলেন তিনি। এদিন সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যের তরফ থেকে বিনামূল্যে জমি দেওয়া থেকে শুরু করে বিনামূল্যে জমি দেওয়া, রাস্তা তৈরি, বাস্তুচ্যুত মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা-সহ নানাবিধ উদ্যোগের মাধ্যমে কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হতে পারে সেই বিষয়টিও তিনি দেখভাল করেছেন। মমতা জানিয়েছেন, 'মেট্রো পরিকাঠামো সম্প্রসারণ আমার একটি দীর্ঘ সফরের অন্যতম অংশ। আজ আমাকে কিছুটা নস্টালজিক হতে দিন।'

আরও পড়ুন: ‘গ্রেপ্তারির পর সরকারি কর্মী চাকরি হারালে, প্রধানমন্ত্রীর যাবে না কেন?’ বিলের স্বপক্ষে যুক্তি মোদির

এই প্রসঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ভারতের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী গণি খান চৌধুরীর হাত ধরে এরাজ্যে দেশের প্রথম মেট্রো রেলের সূচনা হয়েছিল এটা যেমন ঠিক তেমনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা ব্যানার্জির হাত ধরেই কিন্তু সেই মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ হয়েছে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি একের পর এক মেট্রোপথের পরিকল্পনা করে সেই কাজকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। মেট্রোপথের আওতায় নিয়ে এসেছেন কলকাতার একের পর এক জায়গা‌। সেইসঙ্গে শহরের সঙ্গে তার বাইরের এলাকাও যাতে সংযুক্ত হয় সেই ব্যবস্থাও তিনিই করেছিলেন। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তিনি উদ্যোগী হয়েছেন দ্রুত জমি বা অন্যান্য সমস্যার সমাধান করে মেট্রোরেলকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে। খারাপ লাগে এটা ভেবে যে তাঁর ফেলে আসা কাজ বাস্তবায়িত করতে এতবছর সময় লেগে গেল!'

শুক্রবার মোদির হাত ধরে কলকাতার বহু প্রতীক্ষিত তিনটি লাইনের মেট্রোর উদ্বোধন হয়ে গেল। এদিন নোয়াপাড়া থেকে জয়হিন্দ পর্যন্ত নবনির্মিত ইয়লো লাইন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে বেলিয়াঘাটা পর্যন্ত অরেঞ্জ লাইন এবং গ্রিন লাইন- ১ ও ২ অর্থাৎ শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত আন্তঃসংযুক্ত মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধন করলেন তিনি।

সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধে থেকেই সাধারণ মানুষ চড়তে পারবেন নয়া লাইনের মেট্রোয়।  ইতিমধ্যেই শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড, দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে খুলে যাওয়া সম্প্রসারিত পথে চলেছে মেট্রোর রেক। প্রথম যাতায়াত সফল। এই প্রায় তিন কিলোমিটার পথ মেট্রোয় সময় লেগেছে প্রায় চার মিনিট। 

২০২৪ সালেই সূচনা হয়ে গিয়েছে গঙ্গার তলায় মেট্রো চলাচল। অন্যদিকে মেট্রো ছুটছে শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত। তাতে বহু মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। তবে বউবাজার অংশে নানা সমস্যার কারণে দীর্ঘকাল থমকে ছিল ওই অংশের কাজ। তবে এবার শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড লাইনের উদ্বোধন হয়ে যাওয়ায়, হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত মেট্রোতেই যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা। তাতে সময় বাঁচবে বহু। নিত্যযাত্রীদের যাতায়াতে আর একাধিকবার পরিবহন বদল করতে হবে না। এক মেট্রোতেই শহরের এক প্রান্ত থেকে পৌঁছে যাওয়া যাবে অন্য প্রান্তে।