আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুরুষের ‘ইগো’ সাধারণত সোজাসাপ্টা হয়না কেন? যেই কারণে সহজ সরল সিদ্ধান্তের বদলে বাঁকা, জটিল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেকেই বিপাকে ফেলা? সমাজের তৈরি এক ফাঁদ নাকি নতুন করে সংজ্ঞা দেওয়ার সময় এসেছে? পুরুষ আর ইগো—এই দুই শব্দ বহুদিন ধরেই যেন হাত ধরাধরি করে চলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইগো আসলে কী? সহজভাবে বললে, ইগো বা অহং মানে হচ্ছে নিজের ভেতরের প্রতিচ্ছবি, নিজের সম্পর্কে বিশ্বাস ও আত্মচেতনা। তাই এটিকে একেবারে নেতিবাচক হিসেবে দেখা যায় না, বরং মানুষের বেঁচে থাকা ও নিজের অস্তিত্ব বোঝার জন্য এটি জরুরি। কিন্তু যখন আমরা বলি “পুরুষের ইগো”, তখন সেটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সমাজ ও সংস্কৃতির চাপের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে যায়।

 

পুরুষদের ইগো গড়ে ওঠে মূলত সমাজের আরোপিত প্রত্যাশা থেকে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের শেখানো হয়—“কাঁদা চলবে না”, “মজবুত হও”, “পুরুষ মানে রক্ষক ও নেতৃত্বদাতা”। এই কথাগুলো শুধু ভাষা নয়, বরং মানসিক কাঠামো গড়ে তোলে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ আবার এই বার্তাগুলোকে জোরদার করে—পুরুষকে হতে হবে দৃঢ়, আবেগ নিয়ন্ত্রিত, আর সব পরিস্থিতিতে শক্ত। ফলে তাদের আত্মপরিচয় তৈরি হয় শক্তি, কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সমস্যা হয় যখন বাস্তবতা এই আদর্শের সঙ্গে খাপ খায় না। একজন পুরুষ যদি সমাজের ছকে আঁকা এই ধারণার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে না পারেন, তখন তার ইগো বাঁকা পথে মোড় নেয়।

 

নাইজেরিয়ান লেখিকা নেডি ওকোরাফরের উপন্যাসে দেখা যায়, মুইতা নামের এক চরিত্রের ইগো নড়ে ওঠে অন্যেসোনউ নামের এক নারী জাদুকরের অসাধারণ ক্ষমতার কারণে। অন্যেসোনউ-র শক্তি মুইতার পুরুষত্ববোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাকে অস্বস্তিতে ফেলে। এখানে বোঝা যায়, ইগো আসলে নিজের সামর্থ্যের প্রতি বিশ্বাস হলেও তা অন্যের শক্তির সামনে সহজেই ভেঙে যেতে পারে—বিশেষ করে যখন সেটা একজন নারীর শক্তির সামনে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন: মাঝেমধ্যেই যন্ত্রণায় মাথা ছিঁড়ে যায়? নেপথ্যে টাইট অন্তর্বাস নয় তো! সতর্ক না হলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে

 

আধুনিক সমাজ পুরুষদের জন্য এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। একদিকে তাদের বলা হয় আবেগপ্রবণ, সংবেদনশীল হতে; অন্যদিকে আবার তাদের কাছ থেকেই আশা করা হয় দৃঢ়তা, নেতৃত্ব ও প্রভাবশালী উপস্থিতি। প্রেম বা সম্পর্কে অনেক মহিলা আজও শক্তিশালী, কর্তৃত্বশীল পুরুষকে আকর্ষণীয় মনে করেন, যা আবার পুরনো ধ্যানধারণাকে টিকিয়ে রাখে। ফলে এক ধরনের দ্বৈত মানদণ্ড তৈরি হয়: পুরুষ যদি দুর্বলতা প্রকাশ করেন, তবে তাকে বলা হয় দুর্বল; আবার যদি কর্তৃত্ব দেখান, তবে অভিযোগ ওঠে ‘টক্সিক মাসকুলিনিটি’-র। এই টানাপোড়েন পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে, অনেক সময় তাদের আবেগ প্রকাশকে রুদ্ধ অথবা জটিল করে দেয়।

 

ইতিহাসে পুরুষের ইগো সমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছে, বাঁচিয়েছে, সাফল্য এনেছে। কিন্তু বর্তমান যুগে যখন সামাজিক প্রত্যাশা বদলাচ্ছে, তখন প্রশ্ন উঠছে—পুরুষের ইগো কি নতুন করে সংজ্ঞায়িত হওয়া উচিত নয়? সমাজ যদি পুরুষকে একসঙ্গে আবেগপ্রবণ ও দৃঢ় হতে বলে, তবে সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসার পথও সমাজকেই খুঁজতে হবে। পুরুষদের ইগোকে আর ভঙ্গুর কাঁচের মতো না দেখে, বরং স্বাস্থ্যকর আত্মচেতনা হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। অবশেষে বলা যায়, “পুরুষের ইগো” আসলে কেবল ব্যক্তিগত মানসিকতার বিষয় নয়, এটি এক সামাজিক নির্মাণ। আর এই নির্মাণের দ্বন্দ্বেই পুরুষরা পড়ে যাচ্ছেন আত্মপরিচয়ের সংকটে। তাই হয়তো এখনই সময় পুরুষত্ব ও ইগোর নতুন সংজ্ঞা তৈরির।