আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাস্তা এবার থেকে পুরো ফাঁকা। সোমবার শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি-এনসিআরের সব পথ কুকুরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে। এমনকি, এই কার্যক্রমে বাধা দিলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে দিল্লিতে কুকুরের কামড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং রেবিস আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি জে বি পারদেওয়ালা এবং আর মহাদেবনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। বেঞ্চ জানিয়েছে, কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনও পক্ষের তরফে শুনানি হবে না। বেঞ্চের বক্তব্য, ‘আমরা এই কাজ আমাদের জন্য করছি না, এটি জনস্বার্থে। তাই এখানে কোনও আবেগের স্থান নেই। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে’। আদালতের বেঞ্চের স্পষ্ট বার্তা, ‘সব জায়গা থেকে কুকুরকে তুলে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। আপাতত নিয়ম-কানুন ভুলে যান’।
এর আগে আমিকাস কুরাই গৌরব আগরওয়ালা সুপারিশ করেছিলেন কীভাবে পথ কুকুর সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘কুকুরদের গৃহপালিত করার ব্যাপার আপাতত বিবেচনা করা হচ্ছে না। তাতে পরে তাদের আবার ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে’। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, ‘দিল্লিতে একটি আলাদা জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে কুকুরদের স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু পশু অধিকারকর্মীদের আপিলের কারণে প্রকল্প আটকে গেছে। আদালতের বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে কঠোর ভাষায় জানিয়েছে, ‘এসব পশু অধিকার কর্মীরা কি রেবিস আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষদের ফিরিয়ে আনতে পারবেন? রাস্তাকে সম্পূর্ণ পথ কুকুর মুক্ত করতে হবে’। দিল্লি, নয়ডা, গাজিয়াবাদ এবং গুরগাঁও সহ দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের পৌর প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত কুকুরদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার। পথ কুকুরদের উদ্ধার করে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতের খেলাধুলায় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, লোকসভায় পাস হয়ে গেল স্পোর্টস বিল
এমনকি, আদালতকে কাজের অগ্রগতি জানাতে হবে। তবে এই ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রে দক্ষ পেশাদার থাকা বাধ্যতামূলক, যারা কুকুরদের স্টেরিলাইজেশন এবং টিকাদান নিশ্চিত করবেন এবং কুকুরদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পালানোর সুযোগ থাকবে না। আশ্রয়কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কুকুরের কামড়ের ঘটনার রিপোর্ট করার জন্যও হেল্পলাইন চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, ‘সব এলাকা থেকে পথ কুকুরদের সরিয়ে নিতে হবে, তারা স্টেরিলাইজড হোক বা না হোক’। এই মামলা চলাকালীন তুষার মেহতা বলেন, ‘কিছু কুকুর প্রেমিকের জন্য আমাদের সন্তানদের ত্যাগ করা সম্ভব নয়’।
বেঞ্চের স্পষ্ট বক্তব্য, কেউ যদি এই কার্যক্রমে বাধা দেয়, তাকে কোর্টের অবজ্ঞার জন্য কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত যেন পথ কুকুর ধরতে শুরু করা হয়। তাদের যদি বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হয়, সেটা করুক। তবে এটা প্রথম ও প্রধান কাজ হতে হবে যাতে সমস্ত এলাকা পথ কুকুর মুক্ত হয়’। অন্যদিকে, শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশকে ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে জানিয়েছে পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালস (পেটা)।
ইন্ডিয়ার ভেটেরেনারি অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. মিনি আরাভিন্দন রাজধানীর পথ কুকুরদের অন্য আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। এখ বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘পাড়ার মানুষজন এই কুকুরদের পরিবারের সদস্যের মতো ভাবেন। তাদের জোর করে স্থানান্তর বা বন্দি করা একেবারেই অবৈজ্ঞানিক। এটা আগেও কার্যকর প্রমাণিত হয়নি এখনও হবে না। ২০২২-২৩ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রায় ১০ লক্ষ পথ কুকুর রয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকেরও কম স্টেরিলাইজড। জোর করে এই ১০ লক্ষ পথ কুকুরকে রাস্তা থেকে সরালে তা সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। কুকুরদের জন্যও তা অত্যন্ত কষ্টকর। কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাতঙ্ক রোধ বা কুকুরের কামড়ের ঘটনা প্রতিরোধ কোনও কিছুই কার্যকর হবে না’।
