আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে জুড়ে একের পর এক ব্রিজ ভেঙে পড়ার এআই ভিডিও যখন ভাইরাল হচ্ছে  ঠিক সেই সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি এম আই সেভেন্টিন হেলিকপ্টার উড়ে এল  মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্যারেজের 'সুরক্ষা'র জন্য। এমনই এক দৃশ্য দেখে শুক্রবার সকাল থেকে শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়।  এদিন সকাল থেকে ফরাক্কা ব্যারেজের আপ স্ট্রিমে বায়ু সেনার হেলিকপ্টার থেকে গঙ্গা নদীবক্ষে বিভিন্ন রকম  কসরত করতে দেখা যায় সেনাবাহিনী এবং বায়ু সেনার এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের। 
 
তবে কী কারণে হঠাৎ করে ফরাক্কা ব্যারেজের কাছে বায়ু সেনা এবং অন্য বিশেষ কিছু বাহিনীর 'বিশেষ অভ্যাসের' প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সমস্ত কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই আরও ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে ফরাক্কাবাসীদের মধ্যে। 

আরও পড়ুন: আসছে নতুন আয়কর বিল, করদাতারা কতটা স্বস্তি পাবেন
 
প্রায় ২২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের ফরাক্কা ব্যারেজের  নির্মাণ কাজ ১৯৭৫ সালে শেষ হয়। বর্তমানে এই ব্যারেজে ১০৯ টি গেট রয়েছে। এই ব্যারেজের মাধ্যমেই বাংলাদেশ এবং ভারতের দিকে সারা বছর গঙ্গা নদীর যে জল প্রবাহিত হয় তার  প্রবাহমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সারা বছর গঙ্গা নদীর জল পেয়ে থাকে। 
  
গত কয়েকদিন ধরে মুর্শিদাবাদ এবং সংলগ্ন ঝাড়খন্ড ও বিহারে  প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় বর্তমানে গঙ্গা নদী ফরাক্কা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় প্রায় বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন সময় ব্যারেজের আপ স্ট্রিমে সেনাবাহিনী  হঠাৎ করেই 'মক ড্রিল' শুরু করায়  অনেকেই মনে করছেন বিশেষ কোনও কারণে ভরা বর্ষার এই মরশুমে সেনাবাহিনী  এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফ থেকে গঙ্গাবক্ষে এই অনুশীলন চালানো হচ্ছে। 

ফরাক্কার বেশ কিছু বাসিন্দা জানান, শুক্রবার সকালে তালতলা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় হঠাৎই সেনাবাহিনীর একটি এমআই সেভেনটিন হেলিকপ্টার এসে উপস্থিত হয়। তারা বলেন ,হেলিকপ্টারটি যখন ব্যারেজের কাছাকাছি গঙ্গা নদীর উপর চক্কর খাচ্ছিল সেই সময় হেলিকপ্টার থেকে তিনটি নৌকা জলে ফেলা হয়। এরপর হেলিকপ্টার থেকে একে একে কমপক্ষে ৮ জন ব্যক্তি জলে ঝাঁপ দেন এবং তারপর সাঁতার কেটে গঙ্গা নদীর স্রোতের সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া ওই নৌকাগুলোতে গিয়ে উঠে বসেন।  এছাড়াও যন্ত্র চালিত কয়েকটি স্পিড বোটকে উত্তাল গঙ্গা বক্ষে ঢেউ ভেঙে বিভিন্ন ঘাটের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। এই বিশেষ 'প্রশিক্ষণের' সময় জেলেদের মাছধরার নৌকাগুলোকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। 

 


প্রসঙ্গত নিরাপত্তার দিক থেকে ফরাক্কা ব্যারেজ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে  সিআইএসএফ-এর বাহিনী এই ব্যারেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ফরাক্কা ব্যারেজের কাছেই বিশেষ অনুশীলন শুরু হয়েছে  তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। 


 
বিপ্লব গুপ্ত নামে ফরাক্কা ব্যারেজ প্রকল্প সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা বলেন,' এর আগে আমরা কখনও সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে বিশেষ ধরণের নৌকা গঙ্গা নদীর জলে ফেলে কাউকে অনুশীলন করতে দেখিনি। ভরা বর্ষায়  গঙ্গা নদীতে সাঁতার কাটা এখন যথেষ্ট বিপজ্জনক। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই  যেভাবে আজকের অনুশীলন শুরু হয়েছে তার কারণ আমরা কেউই বুঝতে পারছি না।' যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনী তরফ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। গোটা বিষয়টিকে 'রুটিন অভ্যাস ' বলে তারা এড়িয়ে গিয়েছেন।