আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে প্রবল মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং বিশাল ভূমিধসের জেরে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ভয়াবহ দুর্যোগে গঙ্গোত্রী ধামের সঙ্গে সমস্ত রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অবস্থিত গঙ্গার শীতকালীন আসন মুখবা ও পবিত্র গঙ্গোত্রী ধাম। পর্যটকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রবাহ ধেয়ে আসছে নিচের দিকে, একের পর এক বাড়ি ও গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হরশিল অঞ্চলের খীর গাধ নালার উপচে পড়া জলের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, এসডিআরএফ, এনডিআরএফ, সেনাবাহিনী, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থাগুলি একসঙ্গে কাজ করছে। প্রবল বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকার্যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে, নিখোঁজদের খোঁজে ও দুর্গতদের সাহায্যে কোনও কমতি থাকছে না। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে লেখেন, ‘উত্তরকাশীর ধারালি অঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। উদ্ধার ও ত্রাণকার্য দ্রুত গতিতে চলছে। ঈশ্বরের কাছে সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছি’। এই ঘটনার ফলে গঙ্গোত্রি ধাম যা চারধাম তীর্থের অন্যতম, বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বাকি ভারতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন।
গোটা হিমালয় অঞ্চলে এই মুহূর্তে প্রবল বর্ষণের ফলে রীতিমত বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডের প্রতিবেশী রাজ্য হিমাচল প্রদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। শুধুমাত্র সোমবার দিনেই প্রবল বর্ষণের কারণে রাজ্যের ৩১০টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে একটি জাতীয় সড়কও আছে। মান্ডি জেলায় একটি গাড়ি খাদে পড়ে ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সিমলার পান্থাঘাটি এলাকায় রবিবার রাতে ধস নামায় মেহলি-শোগি বাইপাস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারতীয় মৌসম ভবন হিমাচলে সোমবার ও মঙ্গলবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনায় ‘কমলা সতর্কতা’ জারি করেছে। হিমাচল প্রদেশে এবছরের বর্ষায় এখনও পর্যন্ত ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এদের মধ্যে ২০ জন জলে ডুবে, ১৯ জন দুর্ঘটনাজনিত পতনে, ১৭ জন মেঘভাঙা বৃষ্টিতে, ৮ জন আকস্মিক বন্যায় এবং ৬ জন ভূমিধসে প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ৩৬ জন নিখোঁজ। টানা বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উত্তরপ্রদেশেও। মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট রাজ্য সরকারের ত্রাণ কমিশনারের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের ১৭টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গঙ্গা, যমুনা ও বেতওয়া নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপরে বইছে একাধিক স্থানে। যার ফলে বহু গ্রাম ও শহরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণ কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গঙ্গা নদী বিপদসীমার ওপরে বইছে বারাণসী, মির্জাপুর, গাজিপুর ও বালিয়ায়। যমুনা নদী বিপদের চিহ্ন অতিক্রম করেছে অউরাইয়া, কালপি, হামিরপুর, প্রয়াগরাজ ও বান্দা জেলায়। বেতওয়া নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপরে রয়েছে হামিরপুরে। বর্তমানে প্রয়াগরাজ, জলাউন, অউরাইয়া, মির্জাপুর, বারাণসী, কানপুর দেহাত, বান্দা, ইটাওয়া, ফতেহপুর, কানপুর নগর, চিত্রকুট সহ মোট ১৭টি জেলা বন্যায় কবলিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বারাণসীতে আগামিকাল, বুধবার পর্যন্ত দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত স্কুল বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে।
