আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় বাদল অধিবেশনের সপ্তম দিন। পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ও 'অপারেশন সিঁদুর' নিয়ে বিতর্কে উত্তাল আজ সংসদ। এদিন সংসদে বক্তব্য পেশ করলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

আজ, মঙ্গলবার লোকসভায় আলোচনার শুরুতেই কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বলেন, পহেলগাঁও হামলার পর বিরোধী দলগুলি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সকলেই সেনা বাহিনীকে সমর্থন করেছেন। সব বিরোধী দলের নেতারাই পাকিস্তানের ভূমিকার নিন্দা করেছেন। বিনয় নারওয়ালের বাড়ি ও অন্য নিহতদের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন বলেও জানান তিনি। 

এরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। রায়বরেলির কংগ্রেস সাংসদ বলেন, জয়ের পরেও কিন্তু আসল অভিযান শেষ হয়নি। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফস জেনারেল চৌহানের উদ্দেশে বলেন, 'আপনাদের হাত বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আপনার কোনো ভূল ছিল না।' রাহুলের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষা করতেই যুদ্ধের মাঝপথে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করে সেনাবাহিনীর অভিযান থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

রাহুলের আরও দাবি, এই যুদ্ধে শুরু থেকেই পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে চীন। সমস্ত তথ্য পাচার করে পাকিস্তানকে লাগাতার সহায়তা করেছে চীন। পাকিস্তান ও চীন, দুই বাহিনীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে ভারতকে। তাঁর কথা শুনলে ভারত পাঁচটি যুদ্ধবিমান হারাত না। যুদ্ধের মাঝেই হঠাৎ সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এত সাহস নেই, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী বলেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর হাত না বেঁধে, বাকি থাকা কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। 

আরও পড়ুন: ‘আমাদের আর মেরো না, সহ্য করতে পারছি না’, বেকায়দায় পড়ে ফোনে বলেছিলেন পাক ডিজিএমও, সংসদে জানালেন মোদি

রাহুল গান্ধীর বক্তব্য পেশের পরেই, সংসদে বিতর্কে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাহুলের দাবির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৯ মে রাতে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেন কথা বলার জন্য। সেই সময় সেনার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ছিলাম আমি। তাই তাঁর ফোন তুলতে পারিনি। পরে আমি নিজেই ফোন করি। তখন ফোনে ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তান বড় হামলা করতে চলেছে। আমার জবাব দিয়েছিলাম, যদি পাকিস্তানের এই ইচ্ছা থাকে, তা হলে ভুগতে হবে। পাকিস্তান হামলা করলে, আরও বড় হামলা করে জবাব দেবে ভারত। জবাব দিয়েছিলাম, আমরা গুলির জবাব গুলি দিয়ে দেব।' 

জবাব বক্তৃতার শুরুতে মোদি ১৪০ কোটি দেশবাসীকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় অভিনন্দন জানান। এক পর তিনি বলেন, '২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে হামলা হয়। ভয়ঙ্কর ঘটনা হয়। যে ভাবে জঙ্গিরা নির্দোষ লোকদের মেরেছে, তা নিষ্ঠুর। ভারতে দাঙ্গা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।' 

মোদি বলেন, 'জঙ্গিদের নিকেশ করব বলেছিলাম। শাস্তি হবে। ২২ এপ্রিল বিদেশ থেকে ফিরে বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলাম কড়া জবাব দিতে হবে। এটি রাষ্ট্রীয় সংকল্প।' সেনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'নিজের এবং সেনার ক্ষমতায় বিশ্বাস রয়েছে। সেনাকে স্বাধীনতা দিই। বৈঠকে বলা হয়, কোথায়, কখন পদক্ষেপ করা হবে। আমরা গর্বিত, এমন সাজা দেওয়া হয়েছে, যে ওদের ঘুম উড়ে গিয়েছে।' 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'পহেলগাঁও হামলার পর থেকে পাকিস্তানি সেনা বুঝেছিল, বড় কোনও পদক্ষেপ করা হবে। পরমাণু হুমকি এসেছিল। ৬ মে রাত এবং ৭ মে সকালে ভারত যা স্থির করেছিল, তা করে। পাকিস্তান কিছু করতে পারেনি। ২২ মে ২২ এপ্রিলের বদলা নেওয়া হয়েছে। আগে যেখানে যাইনি, সেখানেও গেছি। পাকিস্তানের কোণে কোণে জঙ্গিদের আড্ডা ধ্বংস করা হয়েছে'। 

কংগ্রেসকে খোঁচা মেরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিদেশনীতি নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। একটা কথা স্পষ্ট বলছি, দুনিয়ার কোনও দেশ ভারতকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে পদক্ষেপ করতে বাধা দেয়নি। ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি দেশ পাকিস্তানের সমর্থন করেছিল। দুনিয়ার সমর্থন মিলেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্য, বীরদের কংগ্রেসের সমর্থন মেলেনি। ২২ এপ্রিলের তিন চার দিন পর লাফাচ্ছিল। বলছিল, কোথায় গেল ৫৬ ইঞ্চির ছাতি। মোদি ফেল করে। খুব মজা পাচ্ছিল। রাজনীতি করছিল ওরা। স্বার্থের রাজনীতি করে আমাকে নিশানা করে। কিন্তু ওদের কথা, দেশের সেনার মনোবল কমিয়ে দিচ্ছিল। ভারতের সামর্থ, সেনায় ভরসা নেই কংগ্রেসের। তাই সিঁদুর অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।' 

তিনি বলেন, 'এ সব করে কংগ্রেস দেশবাসীর মনে জায়গা করতে পারবে না। সীমান্তের ওপার থেকে যা ছড়ানো হয়েছিল, পাকিস্তানের মিথ্যে প্রচারকে এখানে প্রচার করা হচ্ছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে আমরা জঙ্গিদের লঞ্চিং প্যাড নষ্ট করি। বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের সময়ে আমাদের লক্ষ স্থির ছিল। সিঁদুর অভিযানেও স্থির ছিল লক্ষ। কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছি। যেখানে পহেলগাঁও জঙ্গিদের নিয়োগ হয়েছে, অস্ত্র দেওয়া হয়, সেখানে অভিযান চালাই। জঙ্গিদের নাভিতে হামলা চালিয়েছি। এ বারও ১০০ শতাংশ লক্ষপূরণ হয়েছে।' 

?ref_src=twsrc%5Etfw">July 29, 2025

সংঘর্ষবিরতি নিয়ে মোদি বলেন, 'আমরা দুনিয়াকে বলেছি আমাদের লক্ষ জঙ্গিরা। আমরা এমন জবাব দিয়েছি, যা বছরের পর বছর মনে থাকবে। ৯মে মধ্যরাত থেকে আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের প্রতিটি কোণায় প্রহার করেছে। ওরা মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে। টিভিতে দেখেছেন! পাকিস্তানে কেউ বলছে, আমরা সুইমিং পুলে ছিলাম, ভারত হামলা চালিয়ে দিয়েছে। ডিজিএমওকে ফোন করে পাকিস্তান বলে, ব্যাস থামাও, অনেক মেরেছো। আর সহ্য করতে পারছি না। পাক ডিজিএমওর ফোন ছিল। এটা ভারতের নীতি ছিল, যা সেনার সঙ্গে মিলে তৈরি হয়।'