আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুর্ঘটনার কবলে পড়েন যুবক। হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি এইডস আক্রান্ত। ব্যস! তখনই খুনের পরিকল্পনা করেন বোন। কারণ? দাদার প্রাণ রক্ষার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের সুনাম। আর বোনের আশঙ্কা ছিল, দাদার থেকে পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যেও এইডস ছড়াতে পারে। এই জেরে দাদার জীবন শেষ করলেন তিনি। তাও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শিউরে উঠেছে পরিবার ও পুলিশও।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকের চিত্রদূর্গ জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ২৩ বছর বয়সি যুবকের নাম, মল্লিকার্জুন। তিনি চিত্রদূর্গ জেলার হলালকেরে তালুকের দুম্মি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বোন ও তাঁর জামাইবাবু মিলে তাঁকে খুন করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মল্লিকার্জুনের বোন নিশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনার পর থেকে নিশার স্বামী, অভিযুক্ত মঞ্জুনাথ পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে, হত্যাকাণ্ডের দিন কয়েক আগেই নিশা ও তাঁর স্বামী মঞ্জুনাথ জানতে পারেন, মল্লিকার্জুন এইডস আক্রান্ত। এরপরই খুনের পরিকল্পনা করেন। তাঁদের ধারণা ছিল, মল্লিকার্জুন এইডস আক্রান্ত এই খবরটি রটে গেলে, সমাজে পরিবারের সুনাম নষ্ট হবে। এর জেরেই নিশ্চুপে তাঁকে খুন করেন দু'জনে।
আরও পড়ুন: নামের বানানে ছোট্ট ভুল, পুলিশের দোষে সাদাসিধে প্রৌঢ়ের জীবনে ঝড়, ১৭ বছর অপরাধী হয়েই কাটালেন!
আরও জানা গেছে, মল্লিকার্জুন দুম্মি গ্রামে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। বেঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করতেন। ছুটিতে প্রায়ই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে গ্রামে আসতেন। গত ২৩ জুলাই এক বন্ধুর গাড়ি করে গ্রামে ফিরছিলেন তরুণ। গ্রামে ফেরার পথেই গাড়ির সঙ্গে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
দুর্ঘটনার জেরে মল্লিকার্জুন গুরুতর আহত হন। তড়িঘড়ি করে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতেই তাঁকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করার পর জানা যায়, মল্লিকার্জুন এইডস আক্রান্ত। অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে ওই হাসপাতাল থেকে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেই সময়েই নিশা জানান, দাদাকে তিনি বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে ভর্তি করাবেন। পরিবারের সিদ্ধান্তের পর মল্লিকার্জুনকে নিয়ে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন নিশা ও মঞ্জুনাথ। ২৫ জুলাই পরিবারকে নিশা জানিয়েছেন, দাদাকে নিয়ে তিনি বেঙ্গালুরুর হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু সেদিনই দাদার মৃতদেহ নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন।
বিষয়টি নিয়ে মৃত যুবকের বাবার সন্দেহ হয়। এরপর নিশাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। বাবার জেরায় কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি জানান, মল্লিকার্জুনের মুখে কম্বল চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তিনি ও স্বামী মিলে খুন করেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, এইডসের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের সুনাম নষ্ট হবে। এমনকী পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও এইডস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৃত যুবকের বাবা। অভিযোগের ভিত্তিতে নিশাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে।
