আজকাল ওয়েবডেস্ক: দম্পতি চেয়েছিলেন আইভিএফ করাতে। যে কেন্দ্রে অর্থাৎ সেন্টারে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক পরামর্শ দেন, আর আইভিএফ নয়, একেবারে সারোগেসি পদ্ধতিতে চেষ্টা করতে। জানান, বেশি ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন নেই। একেবারে সারোগেসির জন্য ‘মা’ কেও খুঁজে দেবে ওই চিকিৎসা কেন্দ্র। সম্পতি মেনে নেন। নিয়ম মেনে সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়। নির্দিষ্ট সময়ে তাঁদের কোলে তুলে দেওয়া হয় সন্তান। গোটা ঘটনায় দম্পতির খরচ হয় ৩৫ লক্ষ। এতদূর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে তার পরে।

দম্পতি সন্তান জন্মের পরেই চেয়েছিলেন একবার ডিএনএ টেস্ট করিয়ে নিতে। চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। কিন্তু বারবার বলার পরেও কোনও লাভ হয়নি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সন্দেহ বাড়ে এবং একটা সময় পরে, নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করান। তাতেই সামনে আসে সব সত্যি। ওই দম্পতি দেখেন, সব সেম্পল দেওয়ার পরেও, সারোগেসি সন্তানের ডিএনএ, বাবা-মা দু’ জনের কারও সঙ্গেই মিলছে না।

আরও পড়ুন: সকাল থেকে তুমুল দুর্যোগ জেলায় জেলায়, জোড়া অক্ষরেখায় কাল-পরশুও নাকাল করবে পরিস্থিতি! ভাবনা বাড়াচ্ছে হাওয়া অফিসের অ্যালার্ট...

 

ঘটনা জানতে গিয়েই বেরিয়ে আসে আরও বড় চক্র। এক কথায় পর্দা ফাঁর কুচক্রের। ঘটনাস্থল হায়দরাবাদ। গত বছরের আগস্ট মাসে গোপালপুরমের ইউনিভার্সাল সুষ্ঠি ফার্টিলিটি সেন্টারে  আইভিএফ করানোর জন্য গিয়েচ্ছিলেন দম্পতি। ক্লিনিকে চিকিৎসক নম্রতা তাঁদের সারোগেসি করানোর পরামর্শ দেন। সারোগেট মাদারও ক্লিনিকই খুঁজে দেয়। এই বছরের শুরুর দিকে তাঁদের হাতে সন্তান তুলে দেওয়ার পর থেকেই ওই দম্পতি ডিএনএ টেস্ট করাতে চাইছিলেন। অভিযগ, একাধিকবার বলার পরেও, চিকিৎসক নম্রতা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না কিছুতেই। সন্দেহ বাড়ায়, নিজেরাই বাইরে ডিএনএ টেস্ট করান শিশুর। আর তাতেই বেরিয়ে আসে বড় সত্যি। ওই দম্পতি ক্লিনিকে গিয়ে আর চিকিৎসক নম্রতার খোঁজ না পেলে, সোজা গোপালপুরম থানায় যান। পুলিশ শুরু করে তদন্ত।

তদন্তে উঠে এসেছে একের পর এক অবাক করা তথ্য। জানা গিয়েছে ওই ক্লিনিক একাধিক রাজ্যে শুক্রাণু সহ-এই ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নানা উপাদান চালান করে। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ইন্ডিয়ান স্পার্ম টেক নামের একটি অনিবন্ধক সংস্থার সঙ্গেও হাত মিলিয়ে অবৈধ কার্যকলাপ জারি রাখে।

তবে ঘটনার শেষ এখানে নয়। পুলিশ জানতে পারে গোপালপুরমের ওই ক্লিনিক মূলত বিভিন্ন রাজ্যের দরিদ্র পরিবারগুলিকে টার্গেট অর্থাৎ লক্ষ্যবস্তু বানাতো। টাকার বিনিময়ে তাদের থেকে কিনে নিত সদ্যোজাতদের। এই দম্পতির ক্ষেত্র ঘটেছে তেমনই এক ঘটনা। ৯০ হাজার টাকায় ‘সারোগেট মা’ বলে হাজির করানো মহিলার সন্তানকে কিনে নিয়েছিল ক্লিনিক এবং পরে তা তুলে দেওয়া হয় দম্পতির হাতে, বলা হয় সারোগেসিতে জন্ম নিয়েছে তাদের সন্তান।

এই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত মোট দশ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তালিকায় ইন্ডিয়ান স্পার্ম টেক-এর আঞ্চলিক ম্যানেজার পঙ্কজ সোনি এবং আরও ন’ জন রয়েছেন।  জানা গিয়েছে, নম্রতা নামের ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে পুলিশের আশঙ্কা, এই ধরনের আরও একাধিক ক্লিনিক ছড়িয়ে রয়েছে, যারা এই কুচক্রের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে।