আজকাল ওয়েবডেস্ক: মন্দিরের সিঁড়িতে হুড়োহুড়ি। উত্তরাখণ্ডে পদপিষ্ট হয়ে ফের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সাতসকালে মন্দিরে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড়েই পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন একাধিক ভক্ত। আহত হয়েছেন বহু। ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মন্দির চত্বর। হাজির বিশাল পুলিশ বাহিনী।
জানা গেছে, রবিবাসরীয় সকালে মন্দিরে পুজো দিতে হাজির হয়েছিলেন শ'য়ে শ'য়ে ভক্ত। মন্দিরে ঢোকার মুখেই বিপত্তি ঘটে। ঠাসাঠাসি ভিড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একে অপরের গায়ের উপরে পড়ে যান অনেকে। সেই সময়েই পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটেছে। আহতদের তড়িঘড়ি উদ্ধার করে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ছ'জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকেই। ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আজ, রবিবার পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারের মনসা দেবী মন্দিরে। গাড়োয়াল ডিভিশন কমিশনার বিনয় শঙ্কর পাণ্ডে পদপিষ্টের ঘটনাটি জানিয়ে বলেছেন, এখনও পর্যন্ত ছ'জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন বহু ভক্ত। উদ্ধারকাজ জোরকদমে চলছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘটনার খবর পেয়ে তিনিও মন্দির চত্বরে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনাটি ঘটেছে মনসা দেবী মন্দিরের সিঁড়িতে। মন্দিরে ঢোকার মুখে সিঁড়িতেই ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়। ঠেলাঠেলি করতে গিয়েই অনেকে পা হড়কে পড়ে যান একে অপরের গায়ের উপর। সেই সিঁড়িতে পদপিষ্ট হয়ে ৬জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকেরই শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
কয়েকজন আহত ভক্তের দাবি, মন্দিরের সিঁড়িতে কয়েকজন কোনও কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তার জেরেই আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। তখনই ঘটে বিপত্তি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার অভিযোগটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিকে এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘হরিদ্বারের মনসা দেবী মন্দিরে পদপিষ্টের খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। এসডিআরএফ, স্থানীয় পুলিশ এবং অন্যান্য উদ্ধারকারী দল উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।'
প্রসঙ্গত, গত বছর জুলাই মাসেই উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে সৎসঙ্গে পদপিষ্ট হয়ে ১২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। 'ভোলে বাবা' নামের এক স্বঘোষিত ধর্মগুরুর ভাষণ শুনতে গিয়েই এই বিপত্তি ঘটে। রতিভানপুরের ওই সৎসঙ্গে ৮০ হাজার মানুষের জমায়েতের অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই সৎসঙ্গে আড়াই লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। মাত্র ৪০ জন পুলিশ কর্মী ছিলেন ঘটনাস্থলে। দুর্ঘটনার জন্য আয়োজকদের গাফিলতিকেই দায়ী করছে প্রশাসন।
গত আগস্ট মাসে বিহারের এক মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান সাতজন পুণ্যার্থী। আহত হন অন্ততপক্ষে ৩৫ জন। নিহতদের পরিবার সূত্রে খবর, মন্দিরের সামনে দুই ফুল বিক্রেতার মধ্যে ঝামেলা চলছিল। তার সামনে অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। মন্দির চত্বরে যাতে ভিড় না জমে, তার জন্যেই ভক্তদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা। পুণ্যার্থীদের দাবি, মন্দিরে ভিড় নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। তার জেরেই পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটেছে।
মহাকুম্ভের সময়েও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। চলতি বছরে মহাকুম্ভে মৌনি অমাবস্যায় স্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি ঘটে। প্রয়াগরাজের ত্রীবেণী সঙ্গম ঘাটে স্নান করার সময় পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে যাওয়ার জন্য দিল্লির স্টেশনে হুড়োহুড়ি ফয়। নয়াদিল্লি স্টেশনে তুমুল ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১৮ জন। মৃতদের মধ্যে ১১ জন মহিলা, চারজন শিশু ছিল। আহত হয়েছিলেন আরও বহু যাত্রী।
