আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবারেও উত্তপ্ত ছিল থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত।  বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের সংঘর্ষে দুই দেশের মিলিয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, প্রায় ৮০,০০০ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপদ আশ্রয়ে। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত দুই দিনে তাদের ছয়জন সৈনিক নিহত হয়েছেন। থাই সরকারি হিসেব অনুযায়ী মোট ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। অপরদিকে, ক্যাম্বোডিয়ার একটি প্রাদেশিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের পক্ষেও একজন সৈনিক নিহত হয়েছেন।

পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগে, যুদ্ধ থামাতে ফের ময়দানে ট্রাম্প। অর্থাৎ ভারত-পাকিস্তান, ইরান-ইজরায়েলের পর ফের আরও দু’ দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝে মাথা ঘামিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একাধিক সর্বভারতীয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর তেমনটাই। 

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ড-ক্যাম্বোডিয়া সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, প্রাণ হারিয়েছেন ২০, পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ

জানা গিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনিই ফের থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার মাঝে শান্তি চুক্তি করিয়েছেন। থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে, আমার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়েছিল, যিনি থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়াকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। আমি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পকে তার উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ জানাই এবং প্রকাশ করি যে থাইল্যান্ড নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত।‘ 

একইসঙ্গে তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘তবে, থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আন্তরিক ইচ্ছা দেখতে চায়। আমি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছি যে তিনি কম্বোডিয়ার পক্ষকে জানান যে থাইল্যান্ড যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি দ্বিপাক্ষিক সংলাপ আয়োজন করতে চায় যাতে যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ব্যবস্থা এবং পদ্ধতি বের করা যায়।‘ 

ট্রাম্প নিজে এখন স্কটল্যান্ডে। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানিয়েছেন,  তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাইয়ের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, এই দুই দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য করে মার্কিন মুলুক। তার ঠিক সেই কারণেই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কথা বলার সঙ্গেই দুই দেশকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, দুই দেশ যদি এখনই যুদ্ধ না থামায়, তাহলে মার্কিন মুলুক তাদের সঙ্গে আর বাণিজ্য চালিয়ে যাবে না। উঠে আসে ভারত পাক প্রসঙ্গও। গত কয়েকমাসে ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন, একমাত্র তাঁর কারণেই ভারত এবং পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছিল। 

আসিয়ান (ASEAN) জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই সংঘাত থামাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেন। তিনি থাইল্যান্ডের কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ও ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেটের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেট শুক্রবার জানান, তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন এবং থাইল্যান্ডও সম্মত হয়েছিল বলে জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে থাই সরকার সিদ্ধান্ত পাল্টে, 'পরে উপযুক্ত সময়ে আলোচনার' কথা বলে পিছিয়ে আসে।


অন্যদিকে শনিবার থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “থাইল্যান্ড শান্তিপূর্ণ সমাধানে একমত হলেও ক্যাম্বোডিয়ার সেনারা আমাদের ভূখণ্ডে নির্বিচারে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এটি ক্যাম্বোডিয়ার সদিচ্ছার অভাব প্রমাণ করে।” তবে থাই সরকার এই সংঘর্ষকে যুদ্ধ ঘোষণা নয়, বরং “সীমান্ত রক্ষায় প্রতিরক্ষা-জনিত পদক্ষেপ” বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৫৮,০০০ মানুষ সীমান্তবর্তী গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্যাম্বোডিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রায় ২৩,০০০ মানুষ স্থানত্যাগ করেছেন।


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থাইল্যান্ড ক্যাম্বোডিয়ার সীমান্তঘেঁষা আটটি জেলায় সামরিক আইন জারি করেছে। সন্ধ্যায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নিউ ইয়র্কে এক জরুরি বৈঠকে বসেছে এই সংকট নিয়ে, যদিও বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংঘর্ষ।