আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'বাংলা ভাষার ওপর চলছে বিরাট সন্ত্রাস', একুশের মঞ্চ থেকে গর্জে উঠেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। জানিয়েছিলেন, ভিন রাজ্যে বাংলাভাষীদের নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অথচ ভিন রাজ্যের যারা বাংলায় আসছে, তাঁদের ওপর কোনও আক্রমণ হচ্ছে না। কোনওরকম বিপদে পড়তে হচ্ছে না তাঁদের। বরং, তাঁদের জামাই আদর করে রেখে দিচ্ছে বাংলা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ অ্যালভিটো ডি'কুনহা।‌ জন্মসূত্রে গোয়ার বাসিন্দা হলেও প্রায় ২০ বছর বা তারও বেশিদিন ধরে কলকাতায় রয়েছেন। এই শহরকে আপন করে নিয়েছেন। ফুটবল জীবনে প্রথমবার কলকাতার আসা। ফুটবলার হিসেবে সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলে। তিলোত্তমার প্রেমে পড়ে যান। তাই ফুটবল ছাড়লেও, ছাড়েননি এই শহর। কলকাতাই তাঁর ঘর-বাড়ি। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন অ্যালভিটো।‌ ভিটের টানে মাঝেমধ্যে গোয়ায় যান। তবে বেশিদিন মন টেকে না। ছুটে আসেন কলকাতায়। মন থেকে যে তিনি আদ্যপান্ত বাঙালি। 

অ্যালভিটো জানান, বাংলা তথা কলকাতা তাঁকে যে সম্মান দিয়েছে, সেটা তিনি কোনওদিনই নিজের রাজ্যে পেতেন না। নিজেকে কলকাতার ছেলে বলেই পরিচয় দেন। তাতেই গর্ববোধ করেন ইস্টবেঙ্গলের একসময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। অ্যালভিটো বলেন, 'আমাকে বাংলায় বা কলকাতায় কোনওদিন কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমাকে কলকাতার সবাই খুব সম্মান করেছে এবং এখনও করে। আমার কাছে সব ধর্মই এক। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সবই এক। আমি ক্যাথলিক, কিন্তু সবাই আমার সঙ্গে সবসময় খুব ভালভাবে মিশেছে। ভাল ব্যবহার করেছে। কোনওদিন কোনও অসুবিধা হয়নি। আমি একটা কথা বলতে পারি, আমি জন্মসূত্রে গোয়ান, কিন্তু আমি বাঙালি হয়ে গিয়েছি। আমি কলকাতায় যতটা সম্মান পাই, আমার মনে হয় নিজের রাজ্যেও আমি ততটা পাই না। বা আশাও করতে পারি না। আমি কলকাতার ছেলে হয়ে গিয়েছি। আমাদের মতো ভিন রাজ্যের লোকদের কলকাতায় থাকতে কোনও অসুবিধা নেই।' খেলোয়াড় জীবন শেষ হওয়ার পরও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন অ্যালভিটো। এছাড়াও ফুটবলকে কেন্দ্র করে নানান কাজকর্ম করেন। তাই এই শহর ছেড়ে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে কখনই নেই। ভালবেসে ফেলেছেন কলকাতাকে। 

প্রসঙ্গত, ১৬ জুলাইয়ের পরেও যে, মমতা ফের একুশের মঞ্চ থেকে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ নিয়ে সরব হবেন, সে জল্পনা ছিলই। হয়ও তাই। বক্তব্যের অনেকটা অংশ জুড়েই মমতা নিজের ভাষাকে আগলে রাখার হুঁশিয়ারি দেন একের পর এক। কখনও তুলনায় টেনে আনেন অন্য রাজ্যের প্রসঙ্গ। কখনও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম না করেই কটাক্ষ করে বোঝান, বাংলা ভাষায় যাঁরা কথা বলেন, ভিন রাজ্যে তাঁদের উপর আক্রমণ করে, টেলি প্রমটার থেকে দু' লাইন বাংলা লিখে এনে এখানে বাংলা ভাষায় কথা বললে, আদতে বাংলায় ভোট পাওয়া যাবে না।