ভারতীয় নাট্যজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন। মণিপুর তথা ভারতখ্যাত প্রখ্যাত থিয়েটার ব্যক্তিত্ব, নির্দেশক ও লেখক রতন থিয়াম প্রয়াত। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫-এ ইম্ফলের রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭।
‘থিয়েটারের গুরু’ থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নাট্যকার। সারা বিশ্বে প্রশংসিত থিয়েটার ব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম ছিলেন ভারতীয় থিয়েটারের "থিয়েটার অফ রুটস" আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। প্রাচীন ভারতীয় নাট্যরীতি, সংস্কৃতি এবং নৃত্য-সঙ্গীতের মিশেলে আধুনিক সমাজ, রাজনীতি ও মানবিক দ্বন্দ্বকে যে রকম সাবলীলভাবে মঞ্চে রূপ দিয়েছেন, তা ভারতীয় নাটকের ইতিহাসে বিরল।
চক্রব্যূহ, উত্তর প্রিয়দর্শী, চিংলোন মাপান টাম্পাক আমা, লােরেমবিগী এসেই - থিয়ামের এই সব নাটক আন্তর্জাতিক মহলেও সমাদৃত।
সম্মান ও স্বীকৃতি:
পদ্মশ্রী (১৯৮৯)
সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭)
এডিনবরো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যালের ফ্রিঞ্জ ফার্স্ট অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৭)
কালিদাস সম্মান, ভারত মুনি সম্মান, জর্জ রকফেলার অ্যাওয়ার্ড সহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার
২০১৩ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট. উপাধিতে সম্মানিত করে
থিয়ামের অবিস্মরণীয় নাটক:
রতন থিয়ামের থিয়েটার অনুপ্রাণিত হতো নাট্যশাস্ত্র, প্রাচীন গ্রীক নাট্যধারা, এবং জাপানি 'নো' থিয়েটার থেকে। তাঁর পরিচালিত নাট্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
চক্রব্যূহ (১৯৮৪)
ইম্ফল ইম্ফল (১৯৮২)
লেংশননেই (১৯৮৬) - (Antigone-র অনুবাদ)
উত্তর প্রিয়দর্শী (১৯৯৬)
অন্ধ যুগ
লােরেমবিগী এসেই (Song of the Nymphs)
রাজা (২০১২) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রাজা' অবলম্বনে
নাট্যমঞ্চ গড়ার কারিগর -
১৯৭৬ সালে ইম্ফলের বাইরে নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন ‘চোরাস রেপার্টরি থিয়েটার’। পরে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা-র চেয়ারপারসন (২০১৩–২০১৭) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংগীত নাটক একাডেমির ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবেও ছিলেন তিনি।
থিয়ামের প্রয়াণে থমকে থিয়েটার দুনিয়া। ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ এক্সে শোকপ্রকাশ করে লেখে: “বিশ্ববিখ্যাত থিয়েটার ব্যক্তিত্ব রতন থিয়ামের প্রয়াণে গভীর শোক। তিনি ছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যনির্দেশক। তাঁর সৃষ্টি ও শিল্পযাত্রা যুগে যুগে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
রতন থিয়ামের মতো শিল্পী শতাব্দীতে একবার জন্মান। তাঁর ভাবনা, রূপকল্প এবং শিল্প-সংলগ্নতা শুধু থিয়েটার নয়, সমগ্র ভারতীয় সংস্কৃতিকে করেছে ঋদ্ধ। তিনি হয়তো চলে গেলেন, কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মশাল রয়ে গেল অজস্র নাট্যকর্মীর হাতে। রতন থিয়াম নেই, কিন্তু ভারতীয় থিয়েটারে তাঁর প্রতিধ্বনি চিরকাল বাজবে।
