আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি কাঁওয়ার যাত্রা দিল্লিতে চরম বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয়রা অত্যাধিক শব্দদূষণ, ট্র্যাফিক লঙ্ঘন ও রাতভর ঘুমহীন থাকার অভিযোগ করেছেন। খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ২০০-র বেশি অভিযোগ দায়ের করেছেন পুলিশে।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দিল্লির নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি, মহারানি বাগ ও আশ্রম-এর মতো আবাসিক এলাকাগুলি দিয়ে যাত্রীরা উচ্চ ভলিউমে গান বাজাতে বাজাতে ট্রাকে করে যাত্রা করছেন। এর জেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে । পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০টি করে অভিযোগ আসছে শব্দ ও ট্র্যাফিক সংক্রান্ত বিষয়ে।

নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট চিত্রা জৈন জানিয়েছেন, 'এই শব্দ সহ্য করা যাচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না, বয়স্কদের ভয়ানক সমস্যা হচ্ছে। শুধু শব্দ নয়, শব্দের তীব্রতা বিরক্তিকর।' তিনি ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে বলেন, 'এই অনিয়ন্ত্রিত শব্দ একেবারেই সহ্য করা যায় না।'

গ্রেটার কৈলাশ-এও একই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এলাকার আরডব্লিউএ প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় রানা বলেন, 'আমি একদিন রাত আড়াইটে নাগাদ এয়ারপোর্ট থেকে ফিরছিলাম, তখন একাধিক ট্রাকে খুব জোরে গান চলছিল। তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন গলিতেও ঢুকে পড়ছিলেন। এর ফলে যানজট আরও বেড়ে যায়।'

জংপুরার এক বাসিন্দা জানান, তাঁর পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা ঘুমোতে পারছেন না। পাতপারগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, শব্দের মাত্রা ৮০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটি প্রকৃতপক্ষে 'উত্যক্ততা'। ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন! মৃতদেহ 'দৃশ্যম' স্টাইলে পুঁতে রাখেন স্ত্রী, সত্য জানলে শিউরে উঠবেন আপনিও...

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি শিফটে প্রায় ২০০ জন করে অফিসার ডিউটিতে আছেন। এছাড়াও অন্তত ২১টি কাঁওয়ার ক্যাম্পে ২৪ ঘণ্টার নজরদারি চলছে।

দক্ষিণ-পূর্ব জেলার ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ হেমন্ত তিওয়ারি বলেন, অভিযোগের সংখ্যা প্রায় গত বছরের মতোই রয়েছে।  পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জোর চেষ্টা করছে। তিনি জানান, 'আমরা বিশেষ করিডোর তৈরি করেছি, প্রতি শিফটে গড়ে ২০০ জন কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন।'

আরও পড়ুনঃ ক্রমাগত বৃষ্টিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা, বন্ধ একাধিক স্কুল, সতর্কতা জারি 

পাশাপাশি পূর্ব দিল্লিতেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জানা গিয়েছে, প্রধান সড়ক ও হাইওয়েগুলিতে তীর্থযাত্রীরা হাঁটায় দুর্বল স্বাস্থ্যবিশিষ্ট মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। খবর মারফত, পূর্ব দিল্লিতে ১,০০০-এর বেশি কর্মী টহল দিচ্ছেন। যাত্রাপথে শব্দ কমাতে তীর্থ যাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাউন্ড বক্সের তার বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও নিচ্ছে পুলিশ।

পূর্ব দিল্লির ডিসিপি অভিষেক ধানিয়া বলেন, ' খবর অনুযায়ী সম্প্রতি অভিযোগের সংখ্যা কমেছে। তবে আমরা সক্রিয়ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা পুণ্যার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ভলিউম কমাতে বলছি। আর কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনমত শব্দযন্ত্রের তারও খুলে নিই।” এইভাবে ধর্মীয় উৎসবের মরসুমে ধর্মীয় ভাবাবেগের পাশাপাশি নগরবাসীর স্বস্তি ও নিয়মশৃঙ্খলার ভারসাম্য বজায় রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।