আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাটা আজকের দুনিয়ায় এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে নতুন বাবা-মায়ের কাছে এই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন। একদিকে অফিসের দায়িত্ব, অন্যদিকে সন্তানের দেখভাল করা, এই দুইয়ের টানাপড়েনে হিমশিম খান অনেকেই। কিন্তু এমন এক দেশ রয়েছে, যেখানে সরকারই বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী। দেশটি হল সুইডেন। ইউরোপের এই দেশে সন্তান পালনকে কেবল মায়ের দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয় না, দেখা হয় বাবা-মায়ের যৌথ কর্তব্য হিসেবে। পাশাপাশি সন্তান জন্ম নেওয়ার পর দীর্ঘদিন সবেতন ছুটিও পান তাঁরা।
 
 আরও পড়ুন: ২৬৪৫ লিটার স্তন্য উৎপন্ন হয় বধূর শরীরে! 'রোজ রাতে ৩ ঘণ্টা..' বিপুল দুগ্ধ উৎপাদনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই
 
 সুইডেনে প্রতিটি সন্তানের জন্য বাবা-মা সম্মিলিতভাবে মোট ৪৮০ দিনের (প্রায় ১৬ মাস) সবেতন ছুটি পান। এই ছুটি কেবল সন্তানের জন্মের ক্ষেত্রেই নয়, কোনও দম্পতি সন্তান দত্তক নিলেও সমানভাবে প্রযোজ্য। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হল শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা সুনিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে বাবা-মায়ের জন্য কর্মজীবনের সঙ্গে পারিবারিক জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা। এই ৪৮০ দিনের মধ্যে ৩৯০ দিন পর্যন্ত পূর্ণ বেতনের প্রায় ৮০ শতাংশ হারে ভাতা দেওয়া হয়। তবে এর জন্য একটি সর্বোচ্চ আয়ের সীমাও বেঁধে দেওয়া আছে, যাতে এই প্রকল্পে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এর পরের বাকি ৯০ দিন একটি নির্দিষ্ট হারে ভাতা মেলে।
 
 আরও পড়ুন: ১২ জন স্ত্রী! বাচ্চা করাই নেশা! ১০২ সন্তানের বাবা হয়ে অবশেষে থামলেন ৬৮-র মুসা, কেন ক্ষান্ত দিলেন? কী বললেন এ যুগের ধৃতরাষ্ট্র?
 
 লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠায় ‘ড্যাডি কোটা’
 
 এই নীতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং বৈপ্লবিক দিক হল, এখানে লিঙ্গসাম্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মোট ৪৮০ দিনের ছুটির মধ্যে ৯০ দিন বিশেষভাবে সন্তানের পিতাদের জন্য সংরক্ষিত, যা ‘ড্যাডি কোটা’ নামে পরিচিত। এই ছুটি বাবা না নিলে তা বাতিল হয়ে যায়, অন্য কেউ তা নিতে পারেন না। একইভাবে মায়ের জন্যও ৯০ দিন সংরক্ষিত থাকে। বাকি ২৬০ দিন বাবা-মা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে ভাগ করে নিতে পারেন। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, সন্তান পালনে প্রথম থেকেই বাবার সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর বহুক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের বিরতি নিতে হয়। যাতে মহিলাদের এই ধরনের ‘কেরিয়ার ব্রেক’ না নিতে হয় সেই দিকটিও নিশ্চিত করছে এই নীতি।
 
 শুধু তাই নয়, এই ছুটি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও রয়েছে অভাবনীয় স্বাধীনতা। বাবা-মা চাইলে এই ছুটি সন্তানের আট বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে নিতে পারেন। তাঁরা পুরো দিন, অর্ধেক দিন বা এমনকি ঘণ্টার হিসাবেও এই ছুটি ব্যবহার করে নিজেদের কাজের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
 
 সুইডেন ১৯৭৪ সালে বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে এই ধরনের লিঙ্গনিরপেক্ষ সবেতন প্যারেন্টাল লিভ চালু করেছিল। এর সুফলও মিলেছে হাতেনাতে। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই নীতির ফলে সে দেশে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক আয়ের বৈষম্য কমেছে এবং যে বাবারা দীর্ঘ সময় পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও নিবিড় হয়েছে।
 
  সুইডেনের এই মডেলটি তথাকথিত উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নেই। সবেতন প্যারেন্টাল লিভের কোনও কেন্দ্রীয় আইন নেই অধিকাংশ দেশেই। আর ভারতের কথা এই বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। সমাজবিদদের মতে বিশ্বের বহু দেশ যখন কর্মীদের পরিবার ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য আনার পথ খুঁজছে, তখন সুইডেনের এই নীতি নিঃসন্দেহে এক আদর্শ নীলনকশা হতে পারে। কিন্তু তার জন্য চাই মূর্খতা থেকে আত্মমুক্তি এবং সদিচ্ছা।
সুইডেনের এই মডেলটি তথাকথিত উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নেই। সবেতন প্যারেন্টাল লিভের কোনও কেন্দ্রীয় আইন নেই অধিকাংশ দেশেই। আর ভারতের কথা এই বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। সমাজবিদদের মতে বিশ্বের বহু দেশ যখন কর্মীদের পরিবার ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য আনার পথ খুঁজছে, তখন সুইডেনের এই নীতি নিঃসন্দেহে এক আদর্শ নীলনকশা হতে পারে। কিন্তু তার জন্য চাই মূর্খতা থেকে আত্মমুক্তি এবং সদিচ্ছা।
