শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়: ‌রথযাত্রার ঠিক আগে ঐতিহ্যের জোড়া সন্দেশ ‘গুট্‌কে’ এবং ‘বালা’র ‘জিআই’ স্বীকৃতির জন্য তৎপর হলেন শ্রীরামপুরের মাহেশ মন্দির কর্তৃপক্ষ। হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্যর কাছে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষের আর্জি জমা পড়েছে। একই সঙ্গে চিঠিতে ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতির আবেদনও জানানো হয়েছে। চিঠিতে মন্দিরের সম্পাদক পিয়ালকৃষ্ণ অধিকারী জানিয়েছেন, মাহেশের এই দুই মিষ্টি গুট্‌কে এবং বালা সন্দেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জগন্নাথ–স্মৃতি। রয়েছে জগন্নাথদেব সম্পর্কিত বহু লোকগাথা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ উপন্যাস ছাড়াও বিভিন্ন বইয়ে পশ্চিমবঙ্গের গর্ব মাহেশের এই প্রাচীনতম রথযাত্রা এবং লোকগাথার উল্লেখও রয়েছে।
পিয়াল বলেন, মাহেশের রথযাত্রার এবার ৬২৮ বছর। এ বছর কর্মসূচি হিসেবে জিআই এবং হেরিটেজ স্বীকৃতির লক্ষ্যে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মন্দিরই শুধু নয়, রথের আকারও সবচেয়ে লম্বা। এমনকী জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার যে–‌মূর্তি মন্দিরে রয়েছে, সেগুলিও বিশ্বের প্রাচীনতম মূর্তির মধ্যে অন্যতম। শ্রীচৈতন্যদেবের সময়কাল থেকে আজ অবধি কোনও পরিবর্তন না করে একই মূর্তি পূজিত হয়। মূর্তিগুলিকে শ্রীচৈতন্যদেব নিজেও পুজো করতেন। মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন তিনিই। এ ছাড়াও শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও বহু স্মৃতিবিজড়িত মাহেশের জগন্নাথ মন্দির। 
লোককাহিনি অনুসারে, একদা শ্রীরামপুরের চাঁদড়ার বৈদ্যবাটি নিবাসী এক মোদকের দোকানে বালকের ছদ্মবেশে হাজির হয়েছিলেন ক্ষুধার্ত জগন্নাথদেব। সেই দোকানে গুট্‌কে এবং বালা এই দুটি সন্দেশ খেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিনিময়ে অর্থ না থাকায় নিজের হাতের সোনার বালা বন্ধক রেখে এসেছিলেন সেই দোকানে। পরের দিন স্নানযাত্রার পর মন্দিরের প্রধান সেবাইত এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী কমলাকর পিপ্পালাই তাঁর হাতের বালা দেখতে না পেয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। চারদিকে হইচই শুরু হতে সেই রাতেই কমলাকরকে মাহেশের একটি নির্দিষ্ট মিষ্টির দোকানের নাম উল্লেখ করে বালাগুলি ছাড়িয়ে আনার জন্য স্বপ্নাদেশ দেন জগন্নাথদেব। পরদিনই কমলাকর সেই দোকানে গিয়ে বালা ফেরত নিয়ে আসেন। সেই থেকেই এই দুটি মিষ্টির জনপ্রিয়তা আজও অব্যাহত মাহেশের ঘরে ঘরে। জগন্নাথ–ভক্তরা এই দুটি মিষ্টিই তাঁকে নিবেদন করেন। খ্যাতি ও বৈশিষ্ট্যের নিরিখে ভৌগোলিক ভাবে অনন্য গুণমানের এই মিষ্টিগুলি শুধু শ্রীরামপুরের মাহেশেই পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, জিআই ট্যাগ পেতে জেলা স্তরে একটি করে কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। প্রতিটি জেলার জেলাশাসককে শীর্ষে রেখে জেলার আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি ওই কমিটির কাছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোনও পণ্যের খেঁাজ মিললে কমিটি নিজে থেকেই জিআই স্বীকৃতির জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
পিয়াল জানান, সামনেই রথযাত্রা। জিআই ট্যাগ এবং হেরিটেজ তকমা আবেদনের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে ভক্তদের আসা শুরু হতে চলেছে। তঁাদের যাতায়াতের সুবিধের জন্য পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর কাছে দিল্লি রোড এবং জিটি রোডের ওপর মাহেশের পথ–‌নির্দেশ বোর্ড লাগানোর আবেদনও আমরা মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়েছি। মিলেছে মন্ত্রীর আশ্বাস।‌‌‌‌