আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজেপির বিধায়ক, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। দিনে দুপুরে, সাধারণ মানুষের মুখে শুধু দুটি বাংলা কথা শুনেছিলেন। নিখাদ বাংলা শব্দ, এমন নয় যে অপরিচিত, জটিল। বহুল পরিচিত, চেনা শব্দবন্ধ ‘জয় বাংলা’। সেটুকু শুনেই যেভাবে মেজাজ হারালেন, অকথা, কুকথা বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নামে পর্যন্ত, তেড়ে গেলেন সাধারণের দিকে তাতে একপ্রকার তাজ্জব সকলে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, বাংলার ভিতরেও কি এবার বাংলায় বলার জন্য বিজেপির হাতে হেনস্থা হতে হবে সাধারণ মানুষকে? 

ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকহারে। রাজ্যের শাসক দলও সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেন্দুর ওই আচরণ, জয় বাংলা শুনে ক্ষেপে যাওয়া এবং একটা সময়ে পর্যদুস্ত হয়ে গাড়িতে উঠে চলে যাওয়া শেয়ার করেছে।

আগে বলা যাক ভিডিও প্রসঙ্গে। ঠিক কী দেখা যাচ্ছে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছে একটি ভিডিও। তাতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কনভয় পেরিয়ে যাচ্ছিল রাস্তা দিয়ে। তখনই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ জয় বাংলা স্লোগান দেন। আর তা শুনেই রীতিমতো কনভয় থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসেন শুভেন্দু। যেখানে অতি সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যেত, সেখানে নেমে আসা পর্যন্ত ধরে নেওয়া যাক সব ঠিক আছে। কিন্তু তারপর কী করে বসলেন তিনি?  গাড়ি থেকে নেমে সাধারণ মানুষকে রীতিমতো জেরা করতে থাকেন, কেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা?  গলা উঁচিয়ে, আঙুল উঁচিয়ে পালটা ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেও শোনা যায় তাঁকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের গলায় তখনও 'জয় বাংলা' স্লোগান।  মুখ্যমন্ত্রীর নামে দু’ চার কথা বলতে বলতে চলেই যাচ্ছিলেন শুভেন্দু, আচমকা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া মানুষদের রোহিঙ্গা বলতে শোনা যায় স্পষ্টভাবে। ‘চামড়া তুলে দেব, আমাকে চেনে না…’ জাতীয় হুমকিও দিতে থাকেন সকলের সামনেই। শুভেন্দুর নির্দেশে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরাও কিছুটা দৌড়াদৌড়ি করেন।

আরও পড়ুন: সিএএ-র কোপে নাগরিকত্ব হারালে লক্ষীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কী হবে? ব্যাখ্যা বনগাঁর তৃণমূল চেয়ারম্যানের

ইতিমধ্যে তৃণমূলের যুবনেতা শুভেন্দুর ওই ভিডিও পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষ্যাপা মোষ শুভেন্দুকে দেখুন! নিজের মাতৃভাষার নামে জয়ধ্বনি যে সহ্য করতে পারে না, সে তো জাতির কুলাঙ্গার! তার উপর নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের লেলিয়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করতে! করা যায়? শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তা রক্ষীরা কি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিয়েছেন? বিরোধী থাকাকালীন যদি এই তাদের মানসিক পরিস্থিতি আর উগ্রতার প্রকাশ হয়, ক্ষমতায় এলে তো হেঁচকি তুললে লোকজনকে গুলি করে দেবে!’

তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ভিডিও শেয়ার করা হলেও, মূলত এই ভিডিও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সাধারণের মধ্যেও। কারণ খুব স্পষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে, যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার অভিযোগ করছেন, দেশের নানা বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা বললেই, বাংলাদেশি দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অকারণ হেনস্থা করা হচ্ছে, সেখানে যদি রাজ্যের মধ্যেই, বাংলায় দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা দুটি বাংলা শব্দ শুনে এভাবে তেড়েফুঁড়ে যান সাধারণ মানুষের দিকে, তাহলে সুরক্ষা কোথায়? 

গত কয়েকমাসে দেশের একাধিক রাজ্যে স্রেফ বাংলায় কথা বলে বাংলাদেশি তকমা পেয়েছেন, অকারণ নানা হেনস্থার মুখোমুখি হয়েছেন। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচিও ঠিক করে দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ২৮ জুলাই ভিন রাজ্যে একের পর এক বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বন্ধ করতে তাঁদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার নির্দেশও দেন।

সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে এক প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি বলেন, আমাদের ২২ লক্ষ শ্রমিক যাঁরা বাইরে কাজ করেন তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে আনুন এবার। ২১ হোক বা ২৮ জুলাই, মমতা কিন্তু একই সঙ্গে বারে বারে স্পষ্ট করেছেন, তাঁর উদ্বেগ বাঙালিদের উপর অত্যাচার নিয়ে। তাঁর কিন্তু কোনওভাবেই অন্য ভাষাভাষীদের উপর আক্রোশ নেই। কিন্তু বিজেপি? শুভেন্দুর আচরণ কি আরও জলের মতো পরিষ্কার করে দিল না মমতার দীর্ঘদিনের অভিযোগকেই? ২৬-এর ভোটের আগে, এই আচরণেই কি ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে না বিজেপি? প্রশ্ন আরও জোরাল করলেন বিরোধী দলনেতা নিজেই।