আজকাল ওয়েবডেস্ক: আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল মেয়েটা। খুব ছোট বয়সে একবগ্গা জেদের সওয়ারি হয়েছিল সে। নিজের ঘরের মাঠে এদিন হাজার ওয়াটের আলো জ্বালানোর পর থেকে সার্চ ইঞ্জিনে তিনিই ট্রেন্ডিং। প্রবল পরাক্রমশালী অজিদের ঔদ্ধত্য চূর্ণ করার ইনিংস চাক্ষুষ করেছে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। 

জেমিমা রড্রিগেজ দেশের শ্বাসপ্রশ্বাসে। তাঁর বেড়েওঠা, তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি ছড়িয়ে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে গুগল সার্চইঞ্জিনে। কিন্তু যে জবাব পাওয়া যাবে না তা হল, কতটা স্বপ্নে হাঁটলে তবে নিয়নের স্রোতে ভাসা যায়!

রবি ঠাকুরের লাইন  ‘ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে’, বৃহস্পতিবার রাতে লাইনটা অদল বদল করে যদি ‘ওগো (জেমি)মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে’ বলা হয় তাহলে অত্যুক্তি করা হবে না। যাঁরা ম্যাচটা লাইভ দেখেননি, বাজি রেখে বলা যায় তাঁরা কম করে অন্তত ১০ বার ম্যাচের হাইলাইটস দেখবেন।

তাতেও হয়তো সাধ মিটবে না। আজ সারা ভারত তথা বিশ্ব জুড়ে একটাই নাম, জেমিমা রড্রিগেজ। প্রায় ৫০ ওভার ব্যাট করলেন, একটা সময় শরীরে এনার্জি বলতে কিছু ছিল না, বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, শুয়ে পড়ছিলেন মাঠের মধ্যেই। 

ড্রিঙ্কসের মাঝে কখনও একটু প্রোটিন বার, কখনও একটু কলা খেতে দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু শপথ করেছিলেন ম্যাচ শেষ না করে যাবেন না। আর জেমিমা রড্রিগেজরা যেটা বলেন সেটা করেও দেখান। তার প্রমাণ মিলল হাতেনাতে।

মা-বাবারা বলেন, ‘কথায় কথায় কাঁদবে না, মনের জোরে লড়াই করে যাবে’। লড়াই এদিন করলেন জেমিমা, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আবেগ নিজের কাঁধে নিয়ে লড়লেন। আর সেই লড়াইয়ের প্রভাব দেখা গেল ম্যাচের পর।

আমনজ্যোতের ব্যাট থেকে উইনিং শট বেরোনোর পরেই পিচের মধ্যে শুয়ে পড়লেন। তখন তাঁর দু’চোখ দিয়েই অঝোর ধারায় ঝরছিল জল। কথা বলতে পারছেন না, ধীরে ধীরে হেলমেটটা খুললেন, ধন্যবাদ জানালেন সর্বশক্তিমানকে।

আজ নিয়নের আলোয় ভেসে যাচ্ছেন জেমিমা রড্রিগেজ। তাঁর ব্যাট কথা বলে উঠল। অস্ট্রেলিয়ার পাহাড়প্রমাণ রান তাড়া করতে নামার আগেও অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। প্রশ্ন উঠছিল ভারত কি পারবে এই রান তাড়া করতে?

জেমিমা মনে হয় অন্যরকম কিছু ভেবেছিলেন। আজ তাঁর উপরে দৈবশক্তি ভর করেছিল। নইলে অতিমানবিক এই ইনিংস খেলা সম্ভবই নয়! জেমিমা কৃতিত্ব দিচ্ছেন প্রভু যিশুকে। তাঁর শক্তি, তাঁর কৃতিত্বের আসল কারিগর। যিনি না থাকলে আজ হয়তো  জেমিমার ব্যাট কথা বলত না।

জেমিমা বলছেন, ‘প্রভু যিশুকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। একার পক্ষে আমার আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সম্ভবই হতো না। আমার মা, বাবা, কোচ এবং প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যাঁরা আমার উপরে বিশ্বাস রেখেছিলেন। গত মাস জুড়ে বেশ কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। অবশেষ স্বপ্ন যেন সত্যি হল।’

লম্বা ইনিংস খেলছিলেন জেমিমা। বাড়তি অ্যাড্রিনালিনও ঝরছিল। মাঝে ক্লান্তি গ্রাস করছিল। কিন্তু হাল ছাড়ার বান্দা নন তিনি। কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নিজের সঙ্গে কথা বলে চলছিলেন জেমিমা। নিজেকে অভয় দিচ্ছিলেন। ঠোঁট নড়ছিল।

মনেই হচ্ছিল কারও সঙ্গে নীরবে তিনি কথোপকথন করে চলেছেন। কিন্তু শেষের দিকে শক্তি নিঃশেষিত  হয়ে আসছিল। তখন প্রভু যিশুর শরণাপন্ন হচ্ছিলেন জেমিমা। বাইবেলের লাইন মনে মনে উচ্চারণ করে নিজেকে তাতিয়ে যাচ্ছিলেন।

তাঁর হৃদয় বলছিল, আমি অন্ধকারের যাত্রী, প্রভু আলোর দৃষ্টি দাও। পারলে সর্বশক্তিমানই তাঁকে সঠিক দিশা দেখাতে পারবেন। প্রবল চাপের মুখে বাইবেলের লাইন জপে জেমিমা নিজেকে বোঝাচ্ছিলেন, ‘স্থিতধী হও, লড়ে যাও। ঈশ্বর তোমার হয়ে লড়াই করবে।’

খেলা শেষের গ্যালারির দিকে তাকিয়ে মা-বাবাকে ধন্যবাদ জানালেন তিনি, ফ্লাইং কিস দিলেন। একটু পরেই সোজা ছুটলেন মা-বাবার কাছে। দেশের হিরো হলে কী হবে, মা-বাবার কাছে তিনি তো আজও সেই ছোট্ট জেমিই। আদরের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চোখে জল জেমির মা-বাবারও। গত বিশ্বকাপে বাদ পড়া জেমিমা রড্রিগেজ আজ সব হিসাব মিটিয়ে দিলেন সুদে-আসলে।