কৃশানু মজুমদার: একদিকে উইলিস প্লাজা। অন্য দিকে হামিদ আহদাদ। একদিকে আল আমনা। অন্যদিকে মহম্মদ রশিদ। ছবির কোলাজ করে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা লিখছেন, ''অতীত ফিরে এসেছে।'' উইলিস প্লাজা আর আল আমনা অতীত লাল-হলুদে। মরোক্কান হামিদ আহদাদ ও প্যালেস্তাইনের রশিদ বর্তমান।
একসময়ে ময়দানে রব উঠত, ''ছাঁকা তেলে ইলিশ ভাজা, গোল করবেন উইলিস প্লাজা।'' সেই উইলিস প্লাজা আবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্যারিবিয়ান তারকা সুনীল নারিনের ছোটবেলার বন্ধু।
ইস্টবেঙ্গল প্রাক্তনী উইলিস প্লাজা এখন কোথায়? কী করছেন লাল-হলুদের একসময়ের তারকা? ত্রিনিদাদ-টোব্যাগোর ফুটবলার প্লাজার নতুন ঠিকানা এখন বস্টন। সেখানকার ক্লাব ভালেও এফসি-র প্লেয়ার কাম কোচ। কনস্ট্রাকশনের ব্যবসাও করছেন পাশাপাশি।
আরও পড়ুন: ‘নিষিদ্ধ’ ছবিতে নাম লেখালেন বিরাটের সতীর্থ! কীসের তাড়নায় পর্ন সাইটে আরসিবি তারকা?...
এহেন প্লাজা ভারতীয় ফুটবলের নাড়িনক্ষত্রের খোঁজ খবর রাখেন। এই রবিবার যে বাঙালির চিরআবেগের ডার্বি, তাও জানা। আজকাল ডট ইনের সঙ্গে প্লাজার যখন কথা হচ্ছে তখন বস্টনের স্থানীয় সময় প্রায় সকাল আটটা। প্লাজা বলছেন, ''ডার্বি মানেই প্রেশার। ডার্বি এলে সবথেকে সিরিয়াস হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকরা সিরিয়াস, কোচ-সাপোর্ট স্টাফ সবাই খুব সিরিয়াস হয়ে পড়েন। মোহনবাগান দল হিসেবে শক্তিশালী। তবে ইস্টবেঙ্গলও এবার নতুন খেলোয়াড় নিয়েছে। আমার তো মনে হচ্ছে এবার ইস্টবেঙ্গলই জিতবে ডার্বি।''

ইস্ট-মোহনের লড়াইয়ে দীর্ঘদিন ধরে শেষ হাসি তোলা থাকে সবুজ-মেরুনের জন্য। ইস্টবেঙ্গলের হারটাই এখন হয়ে গিয়েছে দস্তুর। প্লাজা বলছেন, ''দেখুন, ইস্টবেঙ্গল অনেকদিন ডার্বি জেতেনি। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের প্রত্যাশা বাড়ছে। সেই চাপ নিয়ে খেলতে হবে ফুটবলারদের। তবুও আমার মন বলছে এবার ইস্টবেঙ্গলই জিতবে। রক্ষণে আনোয়ার আলি রয়েছে। ও ডিফেন্সকে নির্ভরতা দেবে। যে কোনও বড় ম্যাচ জিততে হলে রক্ষণ মজবুত করতে হয়। এবার আনোয়ার আর ওর বিদেশি সঙ্গী ডিফেন্সকে শক্তিশালী করবে।''
আনোয়ারের প্রতি দারুণ আস্থা প্লাজার। একসঙ্গে খেলেছেন দিল্লি এফসিতে। ইন্ডিয়ান অ্যারোজে আনোয়ার খেলার সময়ে তাঁকে লক্ষ্য করেছেন ত্রিনিদাদ-টোব্যাগোর ফুটবলার। সেই কারণেই আনোয়ারের প্রতি প্লাজার এত গভীর আস্থা, বিশ্বাস।
এ তো নয় গেল আনোয়ারের কথা। কিন্তু মরোক্কান গোলমেশিন হামিদ আহদাদের সঙ্গে যে চেহারায় মিল রয়েছে প্লাজার। লাল-হলুদ সমর্থকরা সেই ছবি বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। কী বলছেন প্লাজা? ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার হেসে ওঠেন। বলেন, ''তাহলেই দেখছেন আমাকে ভোলেননি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। ওরা এখনও আমাকে ভালবাসেন। হামিদ আহদাদের সঙ্গে আমার চেহারায় মিল থাকতেই পারে। খেলার ধরনেও পার্থক্য রয়েছে বলেই আমি মনে করি। আমি খুব দ্রুতগতির ছিলাম। বল নিয়ে দারুণ গতিতে দৌড়তাম। গোল করতাম। ভারতীয় ফুটবলে প্রভাব ফেলে গিয়েছি আমি। প্লাজা হওয়া সহজ কথা নয়। আমার শুভেচ্ছা হামিদকে। শুভেচ্ছা ইস্টবেঙ্গলকেও।''

ট্রেভর মর্গ্যানের কোচিংয়ে ডার্বিতে তাঁর আত্মপ্রকাশ। জাতীয় দলের বর্তমান কোচ খালিদ জামিলের কোচিংয়ে খেলেছেন প্লাজা। প্রাক্তন কোচ সম্পর্কে বলছেন, ''খালিদ জামিল ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করতে পারবে। শূন্য থেকে শুরু করেছিল। আইজলের কোচ হিসেবে আই লিগ জিতল। তার পর এই উত্থান। শূন্য থেকে শুরু করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন যাঁরা, তাঁরা বহুযুদ্ধের সৈনিক। খালিদের প্রতি আমার আগাধ শ্রদ্ধা।'' কলকাতা কবে ছেড়েছেন ভুলে গিয়েছেন। ভবানীপুর তাঁর শেষ ক্লাব। করোনা অতিমারীর পরে তিনি কলকাতা ছেড়ে চলে যান বস্টনে। সেখানে গিয়ে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু পুরনো শহরকে কি তিনি ভুলে গিয়েছেন? একদমই নয়। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসে এখনও কলকাতা।
রবিবার সুদূর বস্টনে বসে বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার বড় ম্যাচ দেখবেন প্লাজা। নস্ট্যালজিক হয়ে পড়বেন তিনি। স্মৃতি তাঁকে টেনে নিয়ে যাবে ফেলে আসা দিনে। একবার ডার্বিতে নামলে কি ডার্বির স্মৃতি ভোলা যায়? প্লাজা এখন থেকেই ইস্ট-মোহন ম্যাচের উত্তাপ শরীরে মাখতে শুরু করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বাবরের সঙ্গে কোহলির তুলনা কোনওদিনই হয় না, দাবি প্রাক্তন পাক ক্রিকেটারের...
