আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার ভোররাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভেস পেজ। কিন্তু অনেক অজানা গল্প রেখে গিয়েছেন বর্ষীয়ান হকি অলিম্পিয়ান। এমনই একটি কাহিনী শোনালেন মেজর ধ্যানচাঁদের ছেলে অশোক কুমার। দু'বছর আগে কলকাতায় তাঁর এককালীন সতীর্থের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। পার্কিনসন রোগের জন্য শেষদিকে অনেকটাই জবুথবু হয়ে যান। মেপে মেপে পায়ের পদক্ষেপ দিতেন। ধীরে ধীরে কথা বলতেন। কিন্তু অলিম্পিকের পদকের কথা ভোলেননি। আরও একবার ব্রোঞ্জ পদকের ওজন নিজের হাতে মাপতে চেয়েছিলেন। বাড়ি বদলানোর সময় পদক হারিয়ে যায়। তাই ধ্যানচাঁদের ছেলের থেকে পদক নিয়ে তার রেপ্লিকা বানাতে চেয়েছিলেন। 

দু'বছর আগের স্মৃতিচারণ করলেন ধ্যানচাঁদের ছেলে। অশোক কুমার বলেন, 'হাঁটতে বা বসতে পারছিলেন না। তবে কোনওকিছুই ভোলেননি। আমাকে জানায়, বাড়ি বদলানোর সময় অলিম্পিক পদক হারিয়ে গিয়েছে। আমার থেকে পদক চেয়েছিল, তার রেপ্লিকা বানানোর জন্য।' বন্ধুর এই অনুরোধ ফেলতে পারেননি। পদক তাঁকে দিয়ে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শত চেষ্টা করা সত্ত্বেও তার রেপ্লিকা বানানো সম্ভব হয়নি। অশোক কুমার বলেন, 'আমি ছয় মাসের জন্য নিজের অলিম্পিক পদক তাঁকে দিয়ে দিয়েছিলাম। এটা মোটেই সহজ ছিল না। আপনারা জানেন এর গুরুত্ব কতটা। প্রথমে মুম্বই, তারপর কলকাতায় তার রেপ্লিকা বানানো চেষ্টা করেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। শেষমেষ আমাকে পদক ফেরত দিয়ে দেন। অন্যতম সেরা সেন্টার হাফদের মধ্যে একজন ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আমরা কলকাতা লিগ জিতি। মানুষ হিসেবে সাধুর মতো ছিল। উপকারী ডাক্তার। সাহায্যের জন্য তৈরি থাকতেন।' 

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ভোর তিনটের সময় প্রয়াত হন হকি অলিম্পিয়ান। পিতৃহারা হন লিয়েন্ডার পেজ। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। শয্যাশায়ী ছিলেন। শেষদিকে চলাফেরার ক্ষমতা ছিল না। গত ডিসেম্বরে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। তারপর বাড়িতেই সবরকম চিকিৎসা ব্যবস্থা করেন লিয়েন্ডার। বুধবার থেকে শরীরের অবনতি ঘটে। রাতে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাঠের পরিধির বাইরেও ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রয়েছে তাঁর। খেলা ছাড়ার পর পরবর্তীতে স্পোর্টস মেডিসিনের চিকিৎসক হন। এই পেশায় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। নামিদামি খেলোয়াড়দের সাহায্য করেন। ভারতীয় ক্রিকেট দল, ভারতের ডেভিস কাপের দল সহ দেশের একাধিক ক্রীড়া সংস্থার ফিজিও এবং স্পোর্টস মেডিসিনের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত এককালীন সতীর্থ এবং বন্ধু গুরবক্স সিং। দীর্ঘ ৬০ বছরের বন্ধুত্ব ছিল তাঁদের। ৩৬ বছর একসঙ্গে খেলেছেন। গুরগাঁওয়ে যাওয়ার আগে কলকাতার বাড়িতে ভেস পেজের সঙ্গে দেখা করেন। সেটাই শেষ দেখা। হকি ময়দানে 'জয়-বীরু' জুটি ছিলেন। বন্ধুর প্রয়াণ শোকস্তব্ধ ৮৯ বছরের অলিম্পিয়ান।