সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ২২ বছরের অপেক্ষা। তারপর এক বাঙালির হাতে উঠেছে বিশ্বকাপ। তিনবার খুব কাছাকাছি পৌঁছেও বিশ্বকাপ ছুঁতে পারেননি সৌরভ গাঙ্গুলি। কাপ এবং ঠোঁটের মধ্যে দূরত্ব থেকে গিয়েছে। তাই নিজের মেয়ে সানার থেকেও ছোট একজনের সাফল্যে এতটা উচ্ছ্বসিত সৌরভ। ভারতের মেয়েরা বিশ্বকাপ জেতার পর তাঁর পুরোনো এক মন্তব্য নিয়ে কম ট্রোল করা হয়নি। কিন্তু মেয়েদের ক্রিকেট যে পর্যায় পৌঁছেছে, তাতে যথেষ্ট অবদান রয়েছে প্রাক্তন বোর্ড সভাপতির। মেয়েদের আইপিএলের স্থপতি সৌরভ। শুধু তাই নয়, তিনি সিএবি সভাপতি থাকাকালীন স্কাউট করা হয় রিচা ঘোষকে। তাঁকে খুঁজে পান ঝুলন গোস্বামী। এরপর রিচাকে বাংলার সিনিয়র দলে সুযোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন সৌরভ। শনিবারের সংবর্ধনা মঞ্চে অজানা কাহিনি শোনান ঝুলন।
ঝুলন বলেন, '২০১৩ সালে আমরা ভাল খেলিনি। বাংলার ক্রিকেটে উন্নতি হচ্ছিল না। আমি জেলায় ট্যালেন্ট হান্টের প্রস্তাব দিই। অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬ ট্রায়াল হয়। শিলিগুড়িতে একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখি। তখনই হাতে স্ট্রোক ছিল। সেটাই আমার রিচার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। ওই বয়সে এমন প্রতিভা আমি দেখিনি। তখন সৌরভ সিএবি সভাপতি, অভিষেক সচিব। আমি রিচাকে সিনিয়র দলে সুযোগ দিই। তখন অনেকেই প্রতিবাদ করেছিল। বাকিটা ইতিহাস। ইতিমধ্যেই সব ট্রফি জিতে ফেলেছে রিচা। রিচার যাত্রা সবে শুরু। ওর ওপর আরও প্রত্যাশা বাড়বে।'

বিশ্বকাপ জয়ের পর মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীকে দলের অঙ্গ করে নেয় হরমনপ্রীত, স্মৃতিরা। তাঁদের অধরা স্বপ্ন পূরণ হয় রিচাদের মাধ্যমে। সেলিব্রেট করতে দেখা যায় ঝুলনদের। এই বিষয়টি মনে ধরেছে সৌরভের। প্রাক্তনীদের যোগ্য সম্মান দেওয়ার জন্য বাহবা জানান। মেয়েদের ক্রিকেট এই জায়গায় পৌঁছনোর পেছনে ঝুলন, মিতালিদেরও কৃতিত্ব দেন। বঙ্গতনয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন। রিচাকে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চান প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি। সৌরভ বলেন, 'বিশ্বকাপ জেতা বিশেষ মুহূর্ত। আমি তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনালে অধিনায়ক ছিলাম। তিনবারই রানার্স হয়েছি। রিচা শুধু ভাল প্লেয়ারই নয়, ছয় নম্বরে যে জায়গাটা নিয়েছে, সবচেয়ে কঠিন। যুবরাজ, কাইফ সেই জায়গায় ব্যাট করত। খুব কঠিন সেখানে ব্যাট করা। বিশ্বকাপের প্রত্যেক ম্যাচে রিচার স্ট্রাইক রেট দেখবেন। ৫০ ওভারের ম্যাচেও এত স্ট্রাইক রেট। ভারতের প্রত্যেক বড় রানের পেছনে ওর অবদান রয়েছে। ভারতীয় দলে ওর মূল্য স্মৃতি, হরমনপ্রীতদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। সবে কেরিয়ার শুরু। ভবিষ্যতে আরও এগোবে। আরও সুযোগ আসবে। আরও সুযোগ কাজে লাগাবে। আমরা একদিন রিচাকে অধিনায়ক দেখতে চাই।'
যাকে ঘিরে এত আড়ম্বর, সেই রিচা নিরুত্তাপ। কালো ট্রাউজার এবং সাদা কালো টপ পরে সকাল এগারোটা নাগাদ বিমানবন্দরে নামেন। সরাসরি যান হোটেলে। সেখান থেকে ইডেন। সন্ধেয় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ছুটি কাটাতে যাবেন। শনি বিকেলে ট্রাউজার এবং বোর্ডের লোগো লাগানো ব্লেজার পরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন রিচা। বিশ্বকাপ জয় থেকে সেলিব্রেশন, উৎসব সবকিছুই স্বপ্নের মতো লাগছে ২২ বছরের বিশ্বজয়ীর। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার নজির গড়েছেন বাঙালি উইকেটকিপার ব্যাটার। তাঁকে 'লেডি মাহি' বলা হচ্ছে। অনায়াসে এত ছক্কা হাঁকানোর রেসিপি কী? রিচা বলেন, 'নেটে ব্যাট করার সময় টার্গেট সেট করি। সেটা আমাকে সাহায্য করে। ছয় মারার প্র্যাকটিস করি। বল বাছাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে বেশি ফোকাস করি। আমার বন্ধুরা আমাকে ছোট মাহি বলে। সবাই আমার থেকে ছয় চায়। তাই মারার চেষ্টা করি।' রিচা জানান, বিশ্বকাপ জয়ের পর সারারাত আনন্দের জোয়ারে ভাসেন তাঁরা। ড্রেসিংরুমে পার্টি চলে। শনিবার সিএবির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ছাড়াও ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস, পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। এছাড়াও ছিলেন ঝুলন গোস্বামী এবং সিএবির কর্তারা। ছিলেন বিশ্বজয়ী কন্যা রিচার বাবা-মা। ১৪ নভেম্বর ইডেনে শুরু হবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট। সিএবির তরফ থেকে মমতা ব্যানার্জিকে ফ্রিডম ট্রফির রেপ্লিকা দেওয়া হয়। ম্যাচ দেখতে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়।
