আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনূর্ধ্ব ২৩ এসি মিলান দলের বিরুদ্ধে ওই রামধনুর মতো বাঁক খাওয়ানো ফ্রি কিকে গোল মনে আছে? গোলদাতার নাম নিশ্চয় স্মরণ করতে পারবেন?

২০০৫-এর আইএফএ শিল্ড ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে এভাররেডির গোলদাতার দাম নিশ্চয় মনে আছে এখনও? 

ভারতের অনূর্ধ্ব ২০ দলের কোচ ইসলাম আখমেদভ এএফসি কাপের ম্যাচে তাঁর প্রশংসা করে বলেছিলেন,''ও নামার পরে খেলার মোড় ঘুরে গিয়েছিল।'' কার কথা তিনি বলেছিলেন মনে আছে?  

তিনি লালকমল ভৌমিক। কলকাতা ময়দানের খুব পছন্দের এক ফুটবলার। বলের উপরে দু'পা দিয়ে তাঁর স্টেপওভার দেখে মোহিত হয়ে অনেকেই বলতেন, ''ঠিক যেন ডেনিলসন।'' 

শনিবারের যুবভারতীতে লালকমল-সহ আরও কয়েকজন নামী ফুটবলার  চরম অসম্মানিত হলেন।

 
দেশের ফুটবল র‌্যাঙ্কিং ১৪২। বিশ্ব ফুটবলের এক মহানক্ষত্র এসেছেন কলকাতায়। সিটি অফ জয়। আনন্দ নগরী হয়ে গেল অসন্তোষের নগরী। 

মেসি আর আনন্দ দিতে পারলেন কোথায়? তাঁর আগমনে বাংলার সম্পদ,বাংলার গর্ব যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ক্ষতবিক্ষত। অন্তোষের বাতাবরণ শহর জুড়ে। 

তাহলে ফুটবল-জিনিয়াস এসে কী লাভ হল?বিশালাকায় এক স্টেডিয়াম লণ্ডভণ্ড হল! কত ক্ষয়ক্ষতি হল। কে এর ক্ষতিপূরণ দেবে?  

লালকমল-অসীম-দীপক মণ্ডলদের কী দোষ ছিল? 
বিশ্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারের  সামনে নিজেদের অতীত সময় তুলে ধরার জন্য তাঁদেরই তো আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আয়োজকের তরফ থেকে। 

খেলার আমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে এনে সেই খেলোয়াড়দেরই ধাক্কা হজম করতে হল উদ্যোক্তার কাছ থেকে। 
 
অজানা-অচেনা দেশের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে হাসিমুখে হাত মেলাচ্ছিলেন লিও মেসি। 

মোহনবাগান অলস্টার ও ডায়মন্ড হারবার অলস্টারের ফুটবলারদের বুকে সই করছিলেন
তিনি। 


মেসির ভক্ত গোটা বিশ্ব জুড়ে। এ দেশের, এই রাজ্যের প্রাক্তন ফুটবলাররাও আর্জেন্টাইনের ভক্ত। 

প্রাক্তন ফুটবলাররা মেসির সই চেয়েছিলেন। মেসিও সেই সই বিলিয়ে যাচ্ছিলেন অকাতরে। 

এলএম ১০-এর এই অটোগ্রাফ নিতে গিয়েই উদ্যোক্তার কাছ থেকে ধাক্কা হজম করতে হল লালকমল ভৌমিককে। তাঁর চোখ দেখে মনে হচ্ছিল, এমন ব্যবহার তিনি প্রত্যাশা করেননি। 


এই রাজ্যের, এই বাংলারই মানুষ স্পোর্টস প্রোমোটার। যাঁকে এখন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সেই তিনিই বিশ্ববন্দিত এক মহানায়কের সামনে এই রাজ্যের কৃতী ফুটবলারদের ধাক্কা মারলেন। বাদ গেলেন না মোহনবাগান কর্তারাও। 

ফুটবলভক্তরা কীভাবে এই দৃশ্য হজম করবেন! 
সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মতো গোলকিপারও খেলেন ধাক্কা। এই কি তাঁর প্রাপ্য ছিল? 

ভিড়ের মধ্যে আরও কয়েকজনের মুখ ভাল করে বোঝা গেল না। তাঁদেরও ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হল। 

মোহনবাগান বনাম ডায়মন্ড হারবার অলস্টার ম্যাচ খেলছিলেন অর্ণব মণ্ডল। তিনি বললেন, ''মেসি অনেক বড় প্লেয়ার। কিন্তু নিজের দেশের খেলোয়াড়দের অসম্মান করার অধিকার কে দিয়েছে? আমরা তো সম্মান চেয়েছিলাম। উল্টে ধাক্কা দেওয়া হল। এত বিশৃঙ্খলা দেখিনি আগে।'' 

প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য বললেন, ''মেসির জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটসাঁট করা উচিত ছিল।'' 

দেশের ফুটবল পিছনের দিকে হাঁটছে। ফিফা ক্রমতালিকায় পিছোতে পিছোতে এখন ১৪২। ফুটবল বন্ধ দেশে। দেশের পিছিয়ে যাওয়ার ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হল মেসির সামনে। 

 
ফুটবলের অধোঃগতির কারণ হাজারটা হতে পারে। বা তারও বেশি। রাজ্যের জনপ্রিয় ফুটবলাররাই 
সম্মান পান না। ধাক্কা খেতে হয় আরেক বিশ্ববন্দিত নায়কের সামনে। এটা লালকমল-মেহতাব-অর্ণবদের অসম্মান নয়?  

অসীম বিশ্বাস, সংগ্রাম মুখার্জি, লালকমল ভৌমিক, দীপক মণ্ডলদের পরিবর্তে শনিবারের সকালে যদি  প্রাক্তন ক্রিকেটাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতেন,তাহলে কি তাঁদের গায়ে এভাবে ধাক্কা মারা যেত? আর ধাক্কা দেওয়ার ফলাফল কী হত? সামলানো যেত গোটা দেশের সমালোচনা! 

ফুটবলার বলেই কি সফট টার্গেট? ফিফা তালিকায় পিছোতে থাকা এক খেলার মতোই কি তার খেলোয়াড়দের সম্মান জোটে না? 
 
খেলার মাঠ অনেক শিক্ষার জন্ম দেয়। ফুটবলমাঠে জয় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকেও উজ্জীবিত করে। 

দেশ জুড়ে অসম্মান-অপমান-হেনস্থার আখ্যান প্রতিনিয়ত লেখা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের পাতায়। মেসির সামনে বাংলার নামী ফুটবলারদের উপরে হওয়া এই অনাচার কি গোটা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিরই প্রতিফলন? 

শনি সকালের যুবভারতী বাংলার প্রাক্তন ফুটবলারদের অনাদরের এক ছবিই তুলে ধরল আর এক কিংবদন্তি ফুটবলারের সামনে।