আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ তিনি সারা ভারতের নয়নের মণি। কিন্তু এই জেমিমা রড্রিগেজই ২০২৪ সালে পড়েছিলেন এক ভয়ানক সঙ্কটে। যা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক চর্চা হয়েছিল। এমনকি, জড়িয়েছিল জেমিমার বাবা ইভান রড্রিগেজের নামও।

সেই খারাপ সময় কাটিয়ে রীতিমত লড়াই করে জেমিমা ভারতকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুললেন। কী ঘটেছিল সেই সময়ে? ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে মুম্বইয়ের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান খার জিমখানা হঠাৎই শিরোনামে উঠে আসে এক অপ্রত্যাশিত বিতর্কের কারণে।

খেলাধুলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও অভিজাত সদস্যপদের জন্য সুপরিচিত এই ক্লাবটি ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় জেমিমা রদ্রিগেজের সম্মানসূচক সদস্যপদ বাতিল করে দেয়। কারণ হিসেবে জানানো হয়, তাঁর বাবা ইভান রদ্রিগেজ ক্লাবের প্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়া ধর্মীয় সভা আয়োজন করেছিলেন।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, সেই ঘটনার ঠিক এক বছর পর ২০২৫ সালে আবারও জেমিমা সংবাদ শিরোনামে। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। নভি মুম্বাইয়ের ডি.ওয়াই. পাটিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তিনি জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ফেললেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ১১৬ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস ভারতকে ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে জয় এনে দেয়। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। এই ইনিংস কেবল ভারতকে ফাইনালে তোলেনি, বরং অতীতের বিতর্কের মধ্যেও তাঁর মানসিক দৃঢ়তা ও প্রতিকূলতার মুখে লড়াই করার ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে।

কী ঘটেছিল সেই সময়ে? বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর খার জিমখানার বার্ষিক সাধারণ সভায়। সেই বৈঠকে জিমখানার কয়েকজন সদস্য অভিযোগ তোলেন যে, প্রেসিডেন্টিয়াল হলে একাধিক ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ক্লাবের নিয়ম লঙ্ঘনের সমান।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেমিমার বাবা ১৮ মাসে প্রায় ৩৫টি সভা আয়োজন করেছিলেন। সদস্যদের অভিযোগ ছিল, এই সভাগুলির সঙ্গে ধর্মান্তর কার্যকলাপ যুক্ত ছিল, যা ক্লাবের সংবিধানের পরিপন্থী। অভিযোগ ওঠে, এই সভাগুলিতে নাচ, গান হত, বড় পর্দায় ভিডিও চলত পুরো ব্যাপারটা অনেকটা আধ্যাত্মিক সমাবেশের মতো ছিল।

ক্লাবেরই এক কর্মচারী প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গাডেকরকে এই আয়োজন সম্পর্কে জানান। পরবর্তীতে এই ঘটনার ভিত্তিতে জেমিমার সদস্যপদ বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি বিবেক দেবনানি পরবর্তীতে নিশ্চিত করেন, ‘সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে জেমিমা রদ্রিগেজের সম্মানসূচক সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। ২০২৩ সালে তাঁকে তিন বছরের জন্য এই সম্মান দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অভিযোগ যাচাইয়ের পর সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

এই সম্মানসূচক সদস্যপদ জেমিমাকে দেওয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে। কিন্তু পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জেরে সেই মর্যাদা হারাতে হয় তাঁকে।

আজ, এক বছর পর, সেই বিতর্কের ছায়া অনেকটাই পেছনে ফেলে জেমিমা রদ্রিগেজ ভারতের ক্রিকেটে নিজের জায়গা আরও দৃঢ় করেছেন। তাঁর ব্যাটে ভর করে ভারতীয় মহিলা দল যখন বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে, তখন অনেকেই মনে করছেন—এই জয় শুধুই মাঠের নয়, বরং এক তরুণীর নিজের সত্তাকে পুনর্নির্মাণের গল্পও বটে।