সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ডার্বির আগের দিন বড় মুখ করে জেসন কামিন্স বলেছিলেন, 'ইস্টবেঙ্গলকে পরোয়া করি না।' তার ২৪ ঘণ্টা পর মুখ লোকানোর জায়গা থাকার কথা নয়। তাঁর কথাই বুমেরাং হয়ে ফেরে। কিন্তু হারের পর চূড়ান্ত অসভ্যতা করলেন কামিন্স। যা তাঁর মতো ফুটবলারের থেকে কাম্য নয়। মোহনবাগান টিম বাস স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের উদ্দেশে 'মধ্যমা' দেখান কামিন্স। যুবভারতীর বাইরে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সমর্থকরা। মোহনবাগান বাস বেরোনোর সময় জয় ইস্টবেঙ্গল ধ্বনি ওঠে। বাসে দিমিত্রি পেত্রাতোসের পাশে বসে ছিলেন কামিন্স। আচমকা মুখ বাড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে মধ্যমা দেখান। হার-জিত খেলার অঙ্গ। কিন্তু একজন বিশ্বকাপারের থেকে এইধরনের অসভ্যতা মেনে নেওয়া যায় না। 

প্রথমার্ধে দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি মোহনবাগানকে। কয়েকটা সবুজ মেরুন জার্সিধারী উদ্দেশ্যহীনভাবে মাঠে ঘোরাফেরা করছিল। বিগত কয়েক বছরে এত জঘন্য প্রথমার্ধ চাক্ষুষ করতে হয়নি। না ছিল মাঝমাঠ, না কোনও উইং প্লে। আর জেমি ম্যাকলারেন? দেখাই যায়নি তাঁকে। মনে হয়, মেলায় ঘুরতে এসেছেন। অস্কার ব্রুজোর কৌশলে সবুজ মেরুনের মাঝমাঠ ভেঙেচুরে তছনছ। চলতি মরশুমে গোলের মধ্যে থাকা লিস্টন কোলাসোকে ডবল মার্কিং। মনবীরের অনুপস্থিতিতে ডানপ্রান্ত কানা। ম্যাচের শুরুতেই বিপক্ষের কড়া ট্যাকেলে থতমত খেয়ে যান তরুণ পাসান তামাং। আত্মবিশ্বাস নেমে যায় তলানিতে। তাতেই কেল্লাফতে। আর আত্মতুষ্টি? একেবারেই কি ছিল না? 

গত দশটা ডার্বির মধ্যে সাতটা জেতে মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল দুটো। একটা ড্র হয়। তাই কি শুরুতে কিছুটা গাছাড়া মনোভাব ছিল বাগান শিবিরে? এটা মানতে নারাজ হোসে মোলিনা। দাবি, কোনও আত্মতুষ্টি ছিল না। কিন্তু জঘন্য প্রথমার্ধের কোনও ব্যাখ্যা নেই বাগান কোচের কাছেও। মোলিনা বলেন, 'মেনে নিচ্ছি প্রথমার্ধে আমরা একেবারেই খেলতে পারিনি। তবে আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। গোল পাইনি। ফ্যানদের জন্য দুঃখিত। ডার্বি হার কখনওই ভাল নয়। আমাদের সবার জন্য খারাপ মুহূর্ত। আমার প্লেয়াররা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। প্রথমার্ধে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরি। প্লেয়াররা চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। পেনাল্টি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। ফ্যানদের জন্য দুঃখিত হলেও আমি চিন্তিত নই। গত বছরও শুরুটা তেমন ভাল ছিল না। দল অবশ্যই আরও উন্নতি করবে। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভাল খেলবে। রাতটা ভাল ছিল না। কিন্তু আবার সূর্য উঠবে।'

এদিন ডানদিকে মনবীরকে মিস করে মোহনবাগান। পাসাং তামাং তাঁর অভাব পূরণ করতে পারেনি। কয়েকটা ব্যক্তিগত ভুলেরও খেসারত দিতে হয় মোহনবাগানকে। তবে কোনও নির্দিষ্ট প্লেয়ারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চান না মোলিনা। ডানপ্রান্তে যে বিকল্পের অভাব, সেটা মানতে চাননি। তবে মেনে নিলেন, এখনও গ্রেগ স্টুয়ার্টের পরবর্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। মোলিনা বলেন, 'মনবীর দারুণ প্লেয়ার। তবে আমাদের একই পজিশনে আরও প্লেয়ার আছে। কিন্তু চোটের জন্য তাঁরা এদিন ছিল না। আমরা অবশ্যই মানবীরকে মিস করেছি। তবে কারোর ওপর দোষ চাপাতে চাই না। কিয়ান আছে। ডানদিকে সাহালকে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাসাং চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখনও এইধরনের বড় ম্যাচের জন্য তৈরি নয়। তবে আমাদের এখনও গ্রেগ স্টুয়ার্টের পরিবর্ত খোঁজা হয়নি।' ইস্টবেঙ্গল কোচের মগজাস্ত্রে যে আটকে গিয়েছে ভারতসেরা দল, সেটা মেনে নেন বাগান কোচ। মোলিনা বলেন, 'ইস্টবেঙ্গল আমাদের সবাইকে চেনে। আমাদের শক্তি সম্বন্ধে অবগত। লিস্টনের কার্যকারিতা জানে। আমাদের গোলের সুযোগ ছিল। ওরা ভাল ডিফেন্ড করেছে।' আগের দিন ফিটনেসের উল্লেখ করেছিলেন মোলিনা। এদিন জানিয়ে দেন, হারের সঙ্গে ফিটনেসের সম্পর্ক নেই। ডুরান্ড কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে মোহনবাগান। এবার লক্ষ্য এএফসি।