আজকাল ওয়েবডেস্ক: রোহিত শর্মা, এই সেঞ্চুরিটা কি গৌতম গম্ভীরকে জবাব দিলেন? নাকি নির্বাচক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অজিত আগরকরকে? বিরাট কোহলি, আপনার মসৃণ  ৭৪ রান কি কোচ গৌতম গম্ভীরকে উদ্দেশ করে? নাকি নির্বাচক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অজিত আগরকরকে যোগ্য জবাব? 

শনিবার সিডনিতে রো-কো জুটি দেখিয়ে দিলেন, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি বাট ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি হাঁকালেন স্যর ডনের দেশে। তার পরে কোহলির বিরাট আলিঙ্গন। দু'জনেই হাসছেন তখন। ওই হাসি তো জবাব দেওয়ার। ওই হাসি যুদ্ধে জিতে নেওয়ার। এই লড়াই তো কেবল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল নিজের দেশের নির্বাচকমণ্ডলীর বিরুদ্ধেও। ছিল গম্ভীরের অনাস্থার বিরুদ্ধে। ছিল সেই সব মানুষের বিরুদ্ধে যাঁরা দুই মহাতারকার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ''ওদের এবার সরে যাবার সময় হয়েছে।'' সেঞ্চুরি করেও রোহিত কি জানেন তিনি স্থানচ্যুত হবেন না আর? কোহলিও কি সেই গন্ধ পেলেন? 

আরও পড়ুন: কোহলির ব্যাটিং পজিশন বদলের আর্জি, গম্ভীরকে কড়া বার্তা প্রাক্তন ক্রিকেটারের...

রোহিত সেঞ্চুরি করে আকাশের দিকে তাকালেন। প্রথম ওয়ানডেতে রান পাননি। গেল গেল রব উঠেছিল। দ্বিতীয় ওয়ানডে-ত হিটম্যান ভাঙনের মুখে দলকে টেনেছিলেন। আর তৃতীয় ওয়ানডেতে তো তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছলেন। মনে করিয়ে দিলেন ২০২৩ বিশ্বকাপের রোহিত শর্মাকে। কিন্তু এই দু'বছরে তো গঙ্গা গিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে অনেক জল। কোহলি নামের এক বিরাট ব্যাটের বিরুদ্ধেও ক্রিকেটপাগলরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। সিডনিতে সিঙ্গল  নিয়ে খাতা খোলার পরে স্বস্তির হাসি ফিরল কোহলির মুখে। হাসতে হাসতে তিনি শূন্যে হাত ছুড়লেন। তার পর তাঁর গাণ্ডীব চলল নিজের মতো। রান এল নিজের নিয়মে। অস্ট্রেলিয়ার ২৩৬ রান তাড়া করতে নেমে ভারত খুব সহজেই ম্যাচটা জিতে নিল ৯ উইকেটে।  শেষ পর্যন্ত রোহিত অপরাজিত থাকলেন ১২১ রানে। আর কোহলি ৭৪ রানে। একগুচ্ছ রেকর্ড তৈরি হল। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ২-১-এ জিতলেও মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়লেন রো-কো জুটি। ৩৮.৩ ওভারে অজিদের নিকেশ করলেন রোহিত-বিরাট। দুই মহাতারকা মিলে ১৬৮ রান করলেন জুটিতে। রোহিত ১২৫ বলে খেলেন ১২১ রানের ইনিংস। তাঁর ইনিংসে সাজানো ছিল ১৩টি বাউন্ডারি ও ৩টি ছক্কা। কোহলি করেন ৮১ বলে ৭৪ রান। সাতটি চারে মালা গেঁথেছেন বিরাট। 

রান তাড়া করতে  নেমে শুভমান গিল (২৪) যখন ফিরলেন, তখন দলের রান ৬৯। এরপরেও অনেক কিছু হতে পারত। হারাকিরি করতে পারতেন ভারতীয় ব্যাটাররা। অস্ট্রেলিয়া আগেই জিতে নিয়েছে সিরিজ। রক্তের স্বাদ পাওয়া অজিরা ভারতকে আরও চাপে ফেলে দিতে পারত। কিন্তু দুই বৃদ্ধ সিংহ জ্বলে উঠলে তাঁদের রোখে কার সাধ্যি! রোহিত শর্মা ধরা দিলেন হিটম্যান অবতারে। কোহলি সেই মার্সিডিজ বেঞ্জকে মনে করালেন। কে বলে দুই মহাতারকা তাঁদের সোনালী সময় ফেলে এসেছেন! সব একই তো রয়েছে। আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য শুভমান গিল ও গৌতম গম্ভীরের বড় অস্ত্র হতে পারেন এই দুই তারকা। 
এদিকে গম্ভীরের মান রাখলেন হর্ষিত রানা। সিডনিতে নিলেন চার উইকেট। ৮.‌৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে চার উইকেট তুলে নিলেন হর্ষিত। রান দিয়েছেন ৩৯। তাঁর শিকারের তালিকায় অ্যালেক্স ক্যারি, কুপার কনোলি, মিচেল ওয়েন ও জশ হ্যাজলেউড। 

ভাল শুরু করেও অস্ট্রেলিয়া থেমে গেল ২৩৬ রানে। খেলতে পারল না পুরো ওভারও। ৪৬.‌৩ ওভারেই শেষ মার্শদের ইনিংস। শুরুটা কিন্তু ভালই করেছিলেন মিচেল মার্শ ও ট্রাভিস হেড। শুরুর দু’‌ওভার দেখে নিয়ে এরপর চালাতে শুরু করেন মার্শ ও হেড। কিন্তু দলীয় ৬১ রানের মাথায় ফিরে যান হেড (‌২৯)‌। মার্শ (‌৪১)‌ যখন ফেরেন তখন রান ৮৮। অ্যাডিলেডে অর্ধশতরান করা ম্যাথু শর্ট (‌৩০)‌ রান পাননি। দলের হাল ধরেন ম্যাট রেনশ (‌৫৬)‌ ও অ্যালেক্স ক্যারি (‌২৪)‌। কিন্তু রেনশ ফিরতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল অজিদের ইনিংস। ১৯৫/‌৫ থেকে ২৩৬ রানে শেষ হয়ে যায় অজিদের ইনিংস। তার পরে চলে রোহিত রাজ আর বিরাট শাসন। তাঁদের দেখে মনেই হয়নি চাপ তাঁদের গ্রাস করেছে। তাঁরা তো উপভোগ করছেন পরিস্থিতি। উপভোগ করছেন তাঁদের ক্রিকেট। 

আরও পড়ুন: সিডনিতে শুধু ক্যাচ ধরেই রেকর্ড করে ফেললেন রোহিত–বিরাট, জেনে নিন বিস্তারিত ...