আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাকে ছেড়ে কার কথা বলবেন! যশস্বী জয়সওয়াল মন্ত্রমুগ্ধ করেই চলেছেন ইংল্যান্ডে। নৈশপ্রহরী হিসেবে নেমে আকাশদীপ ওভালের আকাশ ছুঁলেন। রবীন্দ্র জাদেজা বরাবরের মতই লড়াকু ইনিংস খেললেন। আর শেষবেলায় জমিয়ে দিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হল ৩৯৬ রানে। ইংল্যান্ডের হাতে দু'দিন সময়। ৩৭৪ রান করলে ওভালে শেষ হাসি তোলা থাকবে ইংল্যান্ডের জন্য। কী হবে বাকি দু'দিনে?
ইংল্যান্ডের মাটিতে যশস্বীর আরও একটি শতরান। ১২৭ বলে একশো করেন তিনি। টেস্টে ষষ্ঠ শতরান। চলতি সিরিজে দ্বিতীয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ। লাঞ্চের পরপরই মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেন। তাঁর ব্যাটে ভর করে ওভালে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়াল ভারত। যশস্বী খেললেন ১১৮ রানের ইনিংস।
অন্যদিকে ব্যাট করতে নামার আগে থেকেই বিতর্কিত চরিত্র আকাশদীপ। ডাকেটকে আউট করে পিঠে হাত রেখেছিলেন আকাশদীপ। সহ্য হয়নি রিকি পন্টিংয়ের। বলেছিলেন তাঁর পিঠে আকাশদীপ হাত রাখলে ঘুসি মারতেন।
সেই আকাশদীপকে দ্বিতীয় দিনে নৈশপ্রহরী হিসেবে পাঠিয়েছিল ভারত। তৃতীয় দিনের ওভাল দেখল বঙ্গক্রিকেটার আকাশ ছুঁয়েছেন। ওভালের আকাশে মেঘের আনাগোনা। আকাশদীপ ব্যাট হাতে ভারতের ভাগ্যাকাশ থেকে সরিয়ে দিলেন মেঘ। পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যানের মতো তিনি ইংল্যান্ড বোলারদের বিষ শুষে নিলেন। পঞ্চাশ করলেন। এটাই তাঁর টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম অর্ধশতরানও বটে আকাশদীপের।

অ্যাটকিনসনকে বাউন্ডারি মেরে যখন অর্ধশতরান করলেন, তখন ওভালের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উঠে তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন রবীন্দ্র জাদেজা, অধিনায়ক শুভমান গিল-সহ অনেকে। ভারতের হেডস্যর গৌতম গম্ভীরের মুখে কে যেন ছড়িয়ে দিয়েছেন আলোর রেখা! তিনি সন্তুষ্ট। রবীন্দ্র জাদেজা দূর থেকে দেখাচ্ছেন, হেলমেটটা খুলে পঞ্চাশ উদযাপন করো। আকাশদীপের সেই সব দিকে নজর নেই। তাঁর জার্সিতে লেখা ৩১৩ নম্বর। সেটাই তিনি দেখাচ্ছেন। তাঁর মুখেও খেলা করছে হাসি। শেষ পর্যন্ত ৬৬ রানে শেষ হয় আকাশদীপের দুর্দান্ত ইনিংস। আকাশ ও যশস্বী মিলে ১০৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। যার মধ্যে সিংহভাগ রান ছিল আকাশদীপের।

শুভমান গিল ব্যর্থ হন এদিন। ১১ রানে এলবিডব্লিউ হন ভারত অধিনায়ক। সুনীল গাভাসকরের রেকর্ড ভাঙা হল না ভারত অধিনায়কের। কোনও টেস্ট সিরিজে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড সানির। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৫ ম্যাচের সিরিজে ৭৭৪ রান করেছিলেন লিটল মাস্টার। সেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা জাগিয়েও গিল থেমে যান ৭৫৪ রানে।
করুণ নায়ার ফের ব্যর্থ। যে সুযোগ তাঁর কাছে এসেছিল, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না। এদিন ১৭ রানে ফিরলেন নায়ার। প্রথম বলটাই তাঁর হাতে আছড়ে পড়ল। রবীন্দ্র জাদেজা এবার ইংল্যান্ড সফরে দুর্দান্ত সফল। এদিন ৫৩ রান করলেন। ঋষভ পন্থের জায়গায় নামা ধ্রুব জুড়েল খেলে যান ৩৪ রানের ইনিংস। লড়াই করলেন দুই ব্যাটার।
তার পরে চলল ওয়াশিংটনের সুন্দর ক্রিকেট। শেষ উইকেটে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাকে সঙ্গে নিয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিং করলেন। ৩৯ রান জুড়ে ভারতকে নিয়ে গেলেন ৩৯৬ রানে। আরও কিছু রান করতে পারলে লাভবান হত ভারতই।
ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে শতরান করেছিলেন ওয়াশিংটন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস চাননি সুন্দর ও জাদেজা সেঞ্চুরি করুন। কিন্তু দু'জনেই সেঞ্চুরি করে থেমেছিলেন ম্যাঞ্চেস্টারে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে যেখানে শেষ করেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর, ওভালে যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন। মাঝে অবশ্য চলে গিয়েছে প্রথম ইনিংস।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়াশিংটন সুন্দর মারমুখী ইনিংস খেলার লাইসেন্স পেয়ে যান। শেষের দিকে তূরীয় মেজাজে ব্যাট করে গেলেন তিনি। ম্যাঞ্চেস্টারের শতরানের পরে তাঁর বাবা বলেছিলেন, তাঁর ছেলের পারফরম্যান্সের কথা ভুলে যান সবাই। এবারের ইংল্যান্ড সফরে ওয়াশিংটন সুন্দরের ব্যাটিং নিশ্চয় ভুলবেন না কেউ। শেষপর্যন্ত ওয়াশিংটন থামলেন ব্যক্তিগত ৫৩ রানে। এই ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৪টি ছক্কা। ভারতের বোলারদের উপরে নির্ভর করছে সব। জশপ্রীত বুমরাহ-হীন ভারতীয় বোলাররা কি জয় এনে দিতে পারবেন? পারবে কি ভারত সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনতে? আগামী দু'দিন অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাবে ওভাল টেস্ট।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটে শূন্য, উত্ত্যক্ত করার খেলায় একশোয় একশো, আর কত নীচে নামবে ইংল্যান্ড!
