আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালে টিম ইন্ডিয়ার ঐতিহাসিক ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে যোগ হল আরও এক গৌরবের অধ্যায়।

প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মিতালি রাজ ও বর্তমানে ভারতীয় মহিলা দলের প্রধান কোচ অমল মুজুমদারকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (ICC) মহিলা ক্রিকেট কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে ভারতীয় দল মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে জেতে দেশের প্রথম মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপ।

প্রায় তিন লক্ষ দর্শক মাঠে বসে টুর্নামেন্টটি উপভোগ করেন, যা মহিলা ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক উপস্থিতির রেকর্ড। আইসিসির এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইসিসি বোর্ড মহিলা ক্রিকেট কমিটির বেশ কিছু নতুন সদস্যের নিয়োগ অনুমোদন করেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাশলে ডি সিলভা, মিতালি রাজ, অমল মুজুমদার, বেন সয়র, শার্লট এডওয়ার্ডস এবং সালা স্টেলা সিয়ালে-ভেয়া।’

আইসিসি এই মহিলা ক্রিকেট কমিটি মহিলা ক্রিকেট সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী মহিলা ক্রিকেটের বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও প্রচারকে উৎসাহিত করা।

এই কমিটি আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটের নিয়ম, খেলার শর্ত, টুর্নামেন্টের কাঠামো ও যোগ্যতা নির্ধারণ সংক্রান্ত পরিবর্তনের সুপারিশ করে, যাতে সব ফরম্যাটে ন্যায্যতা ও সামঞ্জস্য বজায় থাকে।

তাছাড়া, এই কমিটি মহিলা ক্রিকেটারদের প্রতিভা বিকাশ, সুযোগের সম্প্রসারণ, লিঙ্গসমতা ও অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মহিলা ক্রিকেটে বিনিয়োগ, খ্যাতি বাড়ানোর দিকেও কাজ করে।

আইসিসির তরফে আরও জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের স্থগিতাদেশের পর শুরু হওয়া ‘প্রোজেক্ট ইউএসএ’-এর প্রথম আপডেটও তারা পেয়েছে।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য মার্কিন ক্রিকেটারদের বাণিজ্যিক ও পেশাগত স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে, আসন্ন লস অ্যাঞ্জেলেস ২০২৮ অলিম্পিক্সে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।

বিশেষ করে সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে পুরোপুরি ফুল হাউস ছিল নভি মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়াম। তারপর থেকেই ভারতীয় তারকার বলছেন, এবার দেশে মহিলা ক্রিকেটে পরিবর্তন আসবে।

তবে বিশ্বকাপ শেষের পরেই মহিলা ক্রিকেটে বড়সড় পরিবর্তনের ঘোষণা করল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC)। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৯ সালের মহিলাদের একদিনের বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলেছে ১০টি দল।

আইসিসির মতে, মহিলা বিশ্বকাপে এই সম্প্রসারণ শুধু সংখ্যায় নয়, উদ্দেশ্যেও বড়। নতুন দেশগুলিকে সুযোগ দেওয়া, প্রতিযোগিতার মান বাড়ানো, এবং আরও দেশকে মহিলা ক্রিকেটে বিনিয়োগে উৎসাহিত করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

ফলে আরও বেশি করে দেশগুলি নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরার মঞ্চ পাবে। পাশাপাশি, দর্শকরাও আরও চমকপ্রদ ক্রিকেটের স্বাদ পাবেন। আইসিসির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘এবারের ইভেন্টের বিপুল সাফল্যের পর বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আগামী ২০২৯ সালের মহিলা ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৮ দলের বদলে ১০ দল অংশ নেবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এবারে প্রায় ৩ লক্ষ দর্শক মাঠে বসে টুর্নামেন্ট উপভোগ করেছেন, যা মহিলা ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উপস্থিতি। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি দর্শক টুর্নামেন্টটি দেখেছেন, যার মধ্যে শুধু ভারতেই দর্শকসংখ্যা ছিল প্রায় ৪৪.৬ কোটি।’

২০২৫ সালের বিশ্বকাপ ছিল একেবারে নজিরবিহীন। ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে প্রথমবার কোনও এশীয় দেশ মহিলা ওয়ানডে ট্রফি জিতেছে। ২১ মিলিয়ন দর্শক সরাসরি ফাইনাল দেখেছেন, আর মোট দর্শকের সংখ্যা ছিল ৯২ মিলিয়ন।

পুরোপুরি প্যাকড স্টেডিয়াম প্রমাণ করে দিয়েছিল মহিলা ক্রিকেট এখন বিশ্বমঞ্চে নিজের জায়গা শক্ত করে নিয়েছে। ২০২৯ সালে ১০ দলের বিশ্বকাপ আরও বেশি দেশকে উত্তেজনা, চাপ ও গৌরবের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ দেবে এমনটাই জানাচ্ছে আইসিসি।