আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইতিহাস তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন রবিবার রাতেই। সোমবার সকালে মানুষ যখন অফিস যাচ্ছেন, ট্রেনে-বাসে সকলেই মুখে বিশ্বকাপের কথা।
কেউ আবার মোবাইলে হাইলাইটস দেখতে ব্যস্ত, কেউ আবার রিলসে দেখছেন হরমনপ্রীতদের সেলিব্রেশন। আর টিম ইন্ডিয়া? তাঁরাও যে যার মতো সেলিব্রেশনে মজে। হয়তো অনেকে এখনও গতরাতের ঘোরই কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
এদিন সকালে নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর একটি ছবি পোস্ট করলেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পাশে বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে শুয়ে আছেন তিনি। ঠিক যেমনটা ২০২২ সালের বিশ্বজয়ের পর মেসি পোস্ট করেছিলেন।
তবে ছবিতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক বড় বার্তা দিয়েছেন হরমন। তাঁর টি-শার্টে লেখা, ‘ক্রিকেট ইজ জেন্টলম্যানস(ক্রস দেওয়া), এভরিওয়ানস গেম’। এই ছবি ভাইরাল হতেই ভারত অধিনায়কের প্রশংসায় মুখর সমর্থকরা।
বর্তমানে ম্যাচ ফি বেড়েছে, উন্নত হয়েছে মাঠের মান। ভারতের মহিলা দলের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ১৯৭৬ সালে অভিষেক করেন শাথা রঙ্গস্বামী। সেই সময়ে মহিলা ক্রিকেটারদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত কঠিন।
বর্তমানে সবই বদলেছে, কিন্তু অনেকের মানসিকতা রয়ে গিয়েছে হয়তো আগের মতোই। সেই কথাকে মাথায় রেখেই এই ছবি পোস্ট করেছেন হরমন। দেশের বহু কন্যার অনুপ্রেরণা তিনি।
রবিবারের জয়ের পর প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীও লিখেছেন, এই জয় থেকে বহু খেলোয়াড় উঠে আসবেন ভবিষ্যতে। হরমনপ্রীতও সেই বার্তাই দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ক্রিকেট শুধু জেন্টলম্যানস গেম নয়, ক্রিকেট সকলের।
অনেকের কাছে এই ছবি শুধুই বিজয় উদ্যাপনের মুহূর্ত নয়, বরং ভারতের মহিলা ক্রিকেটের এক দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক। সেই ছবিতে ধরা আছে সেই মেয়েদের যাত্রাপথ, যারা সমাজের কুসংস্কার, সীমিত সুযোগ আর লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত ভেঙে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটে।
হরমনপ্রীত কৌর নিজেই সেই যাত্রার এক অনন্য প্রতীক। পাঞ্জাবের মোগার ছোট গলিতে জন্মানো হরমনপ্রীতকে একসময় শুনতে হয়েছিল, ক্রিকেট তো ছেলেদের খেলা!
কিন্তু সেই বাধা অতিক্রম করে, মাঠে মাঠে লড়াই করে আজ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি হাতে তুলেছেন তিনি। তাঁর টি-শার্টে লেখা বার্তা যেন তাঁর জীবনেরই প্রতিচ্ছবি, বিশ্বাস, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের প্রতীক।
তাঁর সেই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়, কোটি মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। কারণ, এটা শুধু এক জয়ের ছবি নয়, এটি মহিলা ক্রিকেটের এক নতুন যুগের প্রতীক, যেখানে সমতা ও আত্মবিশ্বাসই মূল চাবিকাঠি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভারতের মহিলা দল বিশ্বজয়ের স্বপ্নপূরণ করেছে। নভি মুম্বইয়ের ডি.ওয়াই. পাতিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে হরমনপ্রীতের নেতৃত্বে ভারত জিতে নিয়েছে একদিনের বিশ্বকাপ।
গ্যালারিতে হাজারও দর্শকের উল্লাসের মধ্যে, রাতটা হয়ে রইল হরমনপ্রীতদের। শেষ উইকেটটি ধরেছিলেন তিনিই। দক্ষিণ আফ্রিকার নাদিন ডি ক্লার্কের শট কভারে দাঁড়িয়ে হরমনপ্রীত এক ঝটকায় লাফিয়ে উঠে লুফে নেন। সেই ক্যাচেই শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস, আর শুরু হল ভারতের মহিলা ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায়।
