কৃশানু মজুমদার: একসময়ে কলকাতা ময়দানে তাঁর জন্য স্লোগান উঠত, ''তুমি বললে ডার্বি, আমি শুনলাম সনি নর্দি।''
ইস্ট-মোহন মহাম্যাচের ভাগ্য বহুবার নির্ধারণ করে দিয়েছে হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ানের পা। ব্যারেটো-ওডাফা পরবর্তী সময়ে তিনিই ছিলেন মোহনবাগানের প্রাণভোমরা। তাঁকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা।
এহেন সনি নর্দি ইস্টবেঙ্গলের নব্য কোচ অস্কার ব্রুজোঁর পাশে দাঁড়িয়ে লাল-হলুদ সমর্থকদের বলছেন, ''সময় দিন, অস্কার বদলে দেবে এই ইস্টবেঙ্গলকে।''
অস্কার ব্রুজোঁর সঙ্গে সনির সম্পর্ক যে বহু পুরনো। খুব কাছ থেকে স্প্যানিশ কোচকে দেখেছেন মোহনবাগানের প্রাক্তন তারকা। আইএসএলে মুম্বই সিটির জার্সিতে খেলেছেন সনি। সেই সময়ে নিকোলাস আনেলকার সহকারী ছিলেন অস্কার ব্রুজোঁ। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা আজকাল ডিজিটালের কাছে শেয়ার করেছেন সনি। এই প্রতিবেদককে হাইতিয়ান তারকা বললেন, ''অনেক দিন আগের কথা। সব মনে নেই। তবে অস্কার খুব স্মার্ট এবং ভাল কোচ। সব সময়ে জিততে চায়। মুম্বই সিটিতে খুব অল্প সময় আমি ওর সঙ্গে কাটিয়েছি। কিন্তু অস্কারের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।''
আইএসএলে এখন সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না ইস্টবেঙ্গলের। চারটি ম্যাচেই হার মেনেছে লাল-হলুদ। প্রথম তিনটি ম্যাচ হারের পরে মরশুমের শুরুতেই দায়িত্ব ছাড়েন কার্লেস কুয়াদ্রাত। বিনু জর্জের কোচিংয়েও পরিস্থিতি বদলায়নি। হারই হয়ে উঠেছে দস্তুর।
কুয়াদ্রাতের পরিবর্তে অস্কার ব্রুজোঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় লাল-হলুদের রিমোট কন্ট্রোল। সামনেই আইএসএল ডার্বি। বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার সেই ম্যাচ। সব ঠিকঠাক থাকলে ইস্টবেঙ্গলের নতুন স্প্যানিশ মায়েস্ত্রোরও সেটাই প্রথম ম্যাচ হতে চলেছে। লাল-হলুদের ডাগ আউটে দাঁড়াবেন বহু যুদ্ধের সৈনিক।
অস্কারের কাজ কতটা কঠিন? হোসে মোলিনার মোহনবাগানকে কি থামাতে পারবেন তালাল-ক্লেটনরা? সনি বলছেন, ''কাজটা খুবই কঠিন। মোহনবাগান ভাল ছন্দে রয়েছে। প্রথম ম্যাচটাই ওর জন্য কঠিন হতে চলেছে। তবে অস্কারকে সময় দিতে হবে। সময় পেলে দল গুছিয়ে নিতে পারবে।''
কিন্তু কলকাতা ময়দান যে বড্ড অধৈর্য। একটা ম্যাচে পদস্খলন হলেই 'গেল গেল' রব ওঠে। সনি বলছেন নব্য স্প্যানিশ কোচকে সময় দিতে, সেই পর্যাপ্ত সময় কি পাবেন অস্কার? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত সময়ের গর্ভে। নতুন শহরে নতুন পরীক্ষায় বসার আগে সনি অবশ্য তাঁর একসময়ের গুরুকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
গুরু-শিষ্যের ঠিকানা এখন বদলে গিয়েছে। সনির পিঠে এখন মালয়েশিয়ান সুপার লিগের ক্লাব কেদা দারুল আমানের জার্সি। মুম্বই সিটি-র পরে বাংলাদেশে গিয়ে অস্কার ব্রুজোঁ জাদুদণ্ড ঘুরিয়েছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন সেই মিডাস রাজার কথা। বসুন্ধরা কিংসকে সাফল্য এনে দিয়েছেন।
এবার তাঁর গন্তব্য ফুটবলের মক্কা। সনি বলছেন, ''ইদানীং অস্কারের সঙ্গে আমার খুব একটা কথা হয় না। ২০২০ সালে অস্কার আমাকে বসুন্ধরা কিংসে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি অস্কারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। ফিরিয়ে দিই অস্কারের অনুরোধ। কারণ সেই সময়ে আমি আজারাইজানে (জিরা ফুটবল ক্লাব) থাকতে চেয়েছিলাম।''
অস্কারেরও আগে বাংলাদেশ মাতিয়েছিলেন সনি। শেখ জামালের জার্সিতে খেলে গিয়েছেন এই বঙ্গেও। তাঁর পায়ের জাদুতে সম্মোহীত হয়েছিলেন এদেশের ফুটবলপাগলরা। রত্ন চিনতে পারে মোহনবাগান। সনির ছোঁয়ায় আই লিগ আসে সবুজ-মেরুনে। বাগানে ফেরে বসন্ত।
একসময়ে সবুজ-মেরুন ভক্তদের শ্বাসপ্রশ্বাসে বিরাজ করতেন সনি। আসন্ন আইএসএল ডার্বিতে হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ানের ফেভারিট তাঁর প্রাক্তন ক্লাব মোহনবাগানই। তাঁর হৃদয় দপ্তর পালটাচ্ছে না। কলকাতার ফুটবল হাতের তালুর মতো চেনা প্রাক্তন বাগান তারকার। অস্কারের হয়েই তিনি গলা ফাটাচ্ছেন। বলছেন, ''অস্কারের কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল কিন্তু ঠিক ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। ওর পাশে থাকতে হবে সবাইকে।''
একসময়ে লাল-হলুদের রক্ষণে যিনি ত্রাসের সঞ্চার করতেন, সেই তিনিই লাল-হলুদ বিশ্বকে আশ্বস্ত করছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও গুরুকে কি মন থেকে মুছে ফেলতে পেরেছেন সনি? পারস্পরিক শ্রদ্ধা যে রয়ে গিয়েছে আগের মতোই।
