আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওভালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভারত। জো রুট ও হ্যারি ব্রুক সেঞ্চুরি করে ফিরতেই ভারত পালটা চাপের খেলা শুরু করে দিয়েছে। ওভাল টেস্ট জিততে ঠিক ৩৫ রান দূরে ইংল্যান্ড। ভারত হারবে নাকি ইংল্যান্ড জিতবে, এই আলোচনার মধ্যেই ঢুকে পড়েছেন মহম্মদ সিরাজ। হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ তিনি ধরলেন। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনের বাইরে চলে গেলেন সিরাজ। আউটের পরিবর্তে ৬ রান পেল ইংল্যান্ড। ব্রুক তখন ১৯ রানে ব্যাট করছেন। জীবন ফিরে পেয়ে ব্রুক করলেন ১১১ রান। রুট খেলে গেলেন ১০৫ রানের ইনিংস।
মহম্মদ সিরাজ ক্যাচ ছেড়ে, নিজের ভুল বুঝতে পেরে এতটাই অনুতপ্ত যে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়েছিলেন। বোলার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার দিকেও তাকাননি। সিরাজকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় সমালোচনা। রিকি পন্টিংয়ের মতো ব্যক্তিত্ব বলেন, ''সিরাজ কী চিন্তা করছিল? কিছুই ভাবেনি। কত দামি ক্যাচ ও ছাড়ল ও নিজেই বুঝতে পারছে না।''
আরও পড়ুন: পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙতে পারল না ইস্টবেঙ্গল, অসহায় আত্মসমর্পণ লাল-হলুদের, মরশুমে দ্বিতীয় হার
নাসের হুসেন হায়দরাবাদি তারকার প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, কোহিল-রোহিত-হীন দলটাকে একাই চাঙ্গা করছে সিরাজ। সেই নাসের হুসেন সিরাজকে বললেন, ''এই ক্যাচ ছাড়ার জন্য সিরাজকে সবাই মনে রাখবেন।''
Out? Six!?
— England Cricket (@englandcricket)
What's Siraj done ???? pic.twitter.com/hp6io4X27lTweet by @englandcricket
ভারতের তারকা বোলারের জন্য গর্বিত বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল। তিনি বলছেন, ''সিরাজ দুর্দান্ত। ওকে যখনই বল করতে ডাকা হয়েছে, তখনই ছুটে এসেছে। দেশের জন্য সবার আগে এগিয়ে আসে। বলে, আমি দেশের জন্য সবসময়ে নিজেকে নিংড়ে দিতে রাজি। ওভাল টেস্টে নামার আগে সিরাজ বলেছিল, আমি এই টেস্টটা খেলতে চাই। আমি দেশকে জেতাতে চাই।''
কিন্তু সেই ওভালেই ক্যাচটা ছেড়ে দেওয়ায় সিরাজ সমালোচিত। তিনি নিজেও জানেন তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে কী ভীষণ সমালোচনা। তিনি ভিতরে ভিতরে রক্তাক্ত হচ্ছেন। ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন। ওভাল টেস্টের ফয়সলা এখনও হয়নি। ভারত জিতলে একরকম। না জিতলে সিরাজকে সবাই কাঠগড়ায় তুলবে। সবাই নিমেষে ভুলে যাবে তাঁর অবদান। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বোলার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের দোহাই দিয়ে নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে সিরাজ একাই ভারতের পেস বোলিংয়ের লাইটহাউজ। ১৮০ ওভারের বেশি বল তিনি করে ফেলেছেন চলতি সিরিজে। তবুও সিরাজ দৌড়ে চলেছেন। রবিবারের শেষ বেলায় তাঁর আউটসুইংয়ে বারবার নাজেহাল হয়েছেন স্মিথ-ওভারটন। সিরাজ নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি তাঁর নিক্ষিপ্ত মিসাইলগুলো এভাবে নিষ্ফলা থেকে যাবে।
ভারতের জার্সিতে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরান হায়দরাবাদি। তবুও তাঁর দিকে উড়ে আসে বাছাই করা বাক্যবন্ধনী। তিনি আঘাত পান। অটোচালকের ছেলে বলে তাঁকে কটাক্ষ করা হয়। তাঁর আঘাতের খবর কে রাখে! ক্যাচ ছাড়ায় তাঁর যন্ত্রণা বাড়িয়ে চলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। তাঁর কাটা ঘায়ে প্রলেপ আর পড়ল কই!
Dhokhebaaz Sarfaraz Siraj ki wajah se 2 test match aur series haare. Nikalo gaddar ko team se.
— Kung Fu Panda (@SuperSid1234)Tweet by @SuperSid1234
সবাই যখন শরীরের দোহাই দিয়ে, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের অজুহাত দিয়ে সরে যান, শ্রান্ত-ক্লান্ত সিরাজ সরে যেতে পারেন না। তিনি লড়াকু এক চরিত্র। তিনি জানেন, তিনি উইকেট নেবেন, জুটি ভাঙবেন, দলের জন্য ঘাম ঝরাবেন, তবুও তিনি পার্শ্বচরিত্রই থেকে যাবেন। নায়ক তিনি কোনওদিনই হবেন না। হায়দরাবাদি জানেন, বল করার সময় তাঁকে পেরোতে হয় দুটো ভারতবর্ষ। এক ভারতবর্ষ তাঁকে উৎসাহ দিয়ে যায়, তাঁকে প্রতিটি মুহূর্ত চিয়ার করে। আরেক ভারতবর্ষ অপেক্ষায় থাকে কখন ভুল করবেন সিরাজ। আর তাঁদের নখ-দাঁত বের হবে। মহম্মদ সিরাজ, আপনি সব জেনেও বল হাতে দৌড়ে যান সারাদিন। নিজের দেশকে আপনি জেতাতে চান। আপনার কাছে দেশ সবার আগে। আজ আরও একটা সুযোগ আপনি পাচ্ছেন নিজের বদনাম ঘোচানোর জন্য। প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য। যন্ত্রণা ভোলার জন্য।
