আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেরল ব্লাস্টার্সকে হারানোর পরেও ইস্টবেঙ্গল এগারো নম্বরেই। ১৭ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট। সুপার সিক্সে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়ে গিয়েছে আশঙ্কা। 

লিগ টেবিলে লাল-হলুদের অর্জিত পয়েন্ট এবং অবস্থান দেখে অনেকেই বলতে পারেন 'হতশ্রী' অবস্থা শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের। কিন্তু শেষ ১০টি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স কিন্তু রীতিমতো সমীহ জাগানোর মতোই। 

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে গতবছরের ২৯ নভেম্বর নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচ থেকে গতকালের কেরল ব্লাস্টার্স পর্যন্ত এই ১০ টি ম্যাচ থেকে অস্কার ব্রজোঁর দল ঝুলিতে পুরেছে ১৬ পয়েন্ট। কেবল শেষ ১০টি ম্যাচের নিরিখে যদি লাল-হলুদকে বিচার করা হয়, তাহলে তারা চার নম্বরে রয়েছে। 


লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবের ঠিক উপরে রয়েছে তিনটি ক্লাব। শেষ ১০টি ম্যাচে গোয়া ২৪ পয়েন্ট জিতে শীর্ষে। মোহনবাগান রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। হোসে মোলিনার দল শেষ ১০টি ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। সের্জিও লোবেরার ওড়িশা শেষ ১০টি ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে। 

শেষ ১০টি ম্যাচের নিরিখে ইস্টবেঙ্গলকে বিচার করলে নিন্দুকরা কিন্তু 'গেল গেল' রব তুলতে পারবেন না। যদিও মোহনবাগান ১৭ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে সামগ্রিক ভাবে লিগে টেবিলের শীর্ষে। ধরাছোঁয়ার বাইরে হোসে মোলিনার দল। কিন্তু শেষ ১০ টি ম্যাচের নিরিখে বিচার করলে ইস্টবেঙ্গলের থেকে সাত পয়েন্টে এগিয়ে মোহনবাগান। 

এদিকে লিগ টেবিল অনুযায়ী লাল-হলুদ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ঠিকই। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার অর্ণব মণ্ডল অবশ্য বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখছেন। 

আজকাল ডিজিটালকে জাতীয় দলের প্রাক্তন ডিফেন্ডার বলছেন, ''কুয়াদ্রাত যে জায়গায় ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন দলটাকে, তার থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। অস্কার ব্রুজো দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলটার সাফল্যের গ্রাফ দেরিতে হলেও উপরের দিকেই উঠেছে। দেখতে হবে কোন অবস্থায় ছিল ইস্টবেঙ্গল। অস্কার ব্রুজো এসে দলের ফিটনেস বাড়িয়েছেন। ছেলেদের মধ্যে জয়ের খিদে বেড়েছে। ম্যাচ জিতছে। তলিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস বেড়েছে অনেকটাই। অস্কারকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। নেই নেই-এর তালিকা বড়। চোট আঘাত রয়েছে। নিয়ম করে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রথম একাদশ সাজাতে হচ্ছে। এতরকম সমস্যার মধ্যেও কিন্তু এই কোচ হাল ছাড়ছেন না। লড়ে যাচ্ছে। লড়াইয়ের মানসিকতা ফিরিয়ে এনেছেন।'' 

May be an image of 1 person, playing football, playing soccer and text

দেরিতে হলেও ইস্টবেঙ্গল ডানা মেলতে শুরু করেছে। কিন্তু সুপার সিক্সে জায়গা পাওয়া কি সম্ভব? তিন প্রধানে খেলা ডগলাস দ্য সিলভা বলছেন, ''বর্তমান পরিস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গল যে জায়গায় রয়েছে, তাতে সুপার সিক্সে যাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। তবে নাথিং ইজ ইমপসিবল। সব কিছুই সম্ভব। ছেলেরা চেষ্টা করছে। কোচ চেষ্টা করছেন। আমার মতে আগামী দুটো ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুটো ম্যাচ হারলে চলবে না। এখন থেকে সব ম্যাচই ডু অর ডাই ভেবে নামতে হবে।'' 

বহুযুদ্ধের সৈনিক অর্ণব আবার বলছেন, ''সাতটা ম্যাচের মধ্যে কম করে পাঁচটা ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলকে জিততেই হবে। মনে রাখতে হবে অন্য দলগুলোর মধ্যে কিন্তু পয়েন্ট নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যাবে। নিজেদের জিততে হবে, সেই সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকেও।'' 

কুয়াদ্রাতের ছেড়ে যাওয়া হটসিটে বসেছেন অস্কার ব্রুজোঁ। তিনি নিজেও হয়তো বুঝতে পারছেন কাজটা কতটা কঠিন। একসময়ে নাম না করে সাংবাদিক বৈঠকে কুয়াদ্রাত-জমানাকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। তিনি যা বলতে পারেননি, ডগলাস সেটাই খুল্লমখুল্লা জানিয়ে দিলেন, ''শুরুটা অত্যন্ত খারাপ করেছে ইস্টবেঙ্গল। এত খারাপ শুরু করলে ফল ভাল হওয়া কঠিন। তার উপরে চোট আঘাত রয়েছে দলে। দিয়ামান্তাকোস গোল পাচ্ছে না। কী সমস্যা হচ্ছে বুঝছি না। নতুন এসেছে রিচার্ড সেলিস। ও ভাল প্লেয়ার। তবে ওর ম্যাচ ফিটের দরকার রয়েছে। সেলিসকে বুঝতে হবে ও ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলছে। ওর কাছ থেকে অনেক কিছু চাইছে সমর্থকরা। দেখনদারি ফুটবল কম খেলে কার্যকর ফুটবল খেলতে হবে। বল আরও আগে ছাড়তে হবে রিচার্ড সেলিসকে।  ক্লেটন সিলভা প্রচণ্ড পরিশ্রম করছে। দলের জন্য আত্মত্যাগ করেছে। আগামী মাসে আনোয়ার সুস্থ হয়ে ফিরে এলে ইস্টবেঙ্গলকে আরও ক্ষুরধার লাগবে।''  

৩১ জানুয়ারি ইস্টবেঙ্গলের পরবর্তী খেলা মুম্বইয়ের সঙ্গে। এখনও সাতটি ম্যাচ বাকি রয়েছে। সাপ লুডোর আইএসএলে অনেক উত্থান পতন হতেই পারে। ভুয়োদর্শী কোচ অস্কার জানেন। সেই মতো হয়তো হোমওয়ার্কও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। 

সমর্থকরা বলছেন, আরও আগে অস্কার দায়িত্ব পেলে এতটা হতশ্রী অবস্থা হত না লাল-হলুদের। আগামী  বছরের জন্য কি অস্কারের হাতে দায়িত্ব দেওয়া উচিত? অর্ণব বলছেন, ''এটা ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। তারা স্থির করবে। তবে আপাতত অস্কার যেটুকু কাজ করেছেন, তাতে উনি বেশ ভাল ভাবে পাস মার্কস পেয়ে গিয়েছেন। আত্মতুষ্ট হলে চলবে না। আরও আগ্রাসী হয়ে ঝাঁপাতে হবে কোচকে। প্লেয়ারদের থেকে কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিতে হবে অস্কারকে। তবে স্প্যানিশ কোচ নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বেশ ভাল কাজ করে চলেছেন।'' 

ডার্বির মিথ তিনি। ডার্বিতে অপরাজিত ব্রাজিলীয় ডগলাস। তিনি আবার বলছেন, ''কোচ মাঝেমধ্যে স্ট্র্যাটেজি বদলে ফেলছেন। বুঝতে পারছি অনেক সমস্যার মধ্যে ওকে কাজ করতে হচ্ছে। কেরলের বিরুদ্ধে জিকসনকে রাইট ব্যাকে খেলানোটা আমার ভাল লাগেনি। তবে যাই হোক দিনের শেষে ইস্টবেঙ্গল তিন পয়েন্ট পেয়েছে এটাই বড় ব্যাপার। অস্কারের দলের জন্য শুভেচ্ছা রইল।'' 

অর্ণব তুলে ধরছেন অন্য দিক। তিনি বলছেন, ''মোহনবাগান পয়েন্ট হারালেই গেল গেল রব উঠে যাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল কেন পিছিয়ে পড়ছে গত কয়েক বছর ধরে? ওড়িশা-হায়দরাবাদের মতো দলের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলকে তুলনা  করলে ভুল হবে। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মঙ্গল''