আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওই যে তিলক আসছে তেড়ে! গোটা পাকিস্তান ঘুমোতে গিয়ে তিলকের বেধড়ক পেটানোর স্বপ্ন দেখবে মনে হয়। এশিয়া কাপের ফাইনালে অভিষেক শর্মাকে ফিরিয়ে সেলিব্রেশনের চক্করে পাকিস্তান মনে হয় ভুলে গিয়েছিল তিলক ভার্মার কথা। সেই তিলকই শেষ পর্যন্ত টিকে খেলে ভারতকে জিতিয়ে দিয়ে এলেন। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অ্যাগ্রেশনের জবাব দিয়ে চোখে চোখ রেখে।
গ্রুপ স্টেজ, সুপার ফোর এবং সবশেষে ফাইনাল। একই টুর্নামেন্টে তিন তিনবার পাকিস্তান বধ করল ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে পরপর দু’বার ঘরে এল এশিয়া কাপ। প্রথম দিকে উইকেট নিয়ে পাকিস্তানি বোলাররা এমন সেলিব্রেশন করলেন যে শেষের দিকে পুরোপুরি ঝুলিয়ে দিয়ে নিজেদের মান ঠিক জায়গায় রেখে দিলেন। অন্যদিকে, সময় মতো সুযোগের সদব্যবহার করে ম্যাচ পকেটে পুরে নিল ভারত। ম্যাচের হিরো চোখ বুজে তিলক ভার্মা। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন শিভম দুবে এবং ম্যাচ শেষ করলেন রিঙ্কু সিং।
পাকিস্তান শুরুর দিকে ভারতীয় ব্যাটারদের সমস্যায় ফেললেও শেষের দিকে ঠিকই নিজেদের চেনা ছন্দে ফিরল। পরপর ছক্কা খাওয়া, সময় মতো ক্যাচ মিস, ফিল্ডিং মিস সবই দেখা গেল। ভারতীয় ব্যাটাররা তারই সুযোগ নিয়ে নার্ভ ঠান্ডা রেখে ম্যাচ বের করলেন।
এদিন রান পাননি অভিষেক শর্মা। ইনিংসের শুরুতে শাহিন আফ্রিদির ওভারের দ্বিতীয় বলেই চার মারেন তিনি। তবে দ্বিতীয় ওভারে ফাহিম আশরাফের শিকার হন। স্লোয়ার বুঝতে না পেরে সোজা ওপরে তুলে ক্যাচ আউট হন। অন্য ওপেনার শুভমান গিলকেও ফেরান ফাহিম। ফাইনালেও ফর্ম ফিরে পেলেন না অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। শাহিন আফ্রিদির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্কাই।
ইনিংসের হাল ধরেন সঞ্জু স্যামসন এবং তিলক ভার্মা। গোটা টুর্নামেন্টে এদিনই ভারত পাওয়ার প্লে-তে সবথেকে কম রান তুলেছিল। তবে দুই ব্যাটারই নিজেদের মতো করে সেট হচ্ছিলেন। ড্রিঙ্কস ব্রেকের সময় মাঠে দেখা যায় গৌতম গম্ভীরকেও। দশম ওভারের পর থেকে চালিয়ে খেলছিলেন সঞ্জু। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। আবরার আহমেদের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি(২৪)। স্যামসনের পর ক্রিজে আসেন শিভম দুবে। তবে ভারতীয় মিডল অর্ডারকে এদিন বেশ খানিকটা চাপে দেখিয়েছে।
এমনকি, পার্ট টাইম সইম আয়ুবকেও মারার রিস্ক নিচ্ছিলেন না ভারতীয় ব্যাটাররা। ভারতকে ম্যাচে ফেরালেন হ্যারিস রউফই। উস্কানিমূলক অঙ্গভঙ্গিতে মন দিতে গিয়ে বোলিংটা ভুলে গিয়েছিলেন মনে হয়। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ১৭ রান দিলেন তিনি। চাপের মুখে দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন তিলক ভার্মা। পাকিস্তানি বোলারদের পিটিয়ে এবং দরকার মতো খুচরো রান নিয়ে অর্ধশতরান করে ভারতকে ম্যাচে রেখে দিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে ম্যাচ ফিনিশ করে বেরোলেন তিলক।
প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান তোলে ১৪৬। যদিও একটা সময় যে গতিতে রান হচ্ছিল মনে হচ্ছিল ভারতীয় বোলারদের পিটিয়ে ছাতু করে দেবেন আঘা সলমনরা। কিন্তু পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা নিজেরাই নিজেদের কবর খুঁড়তে ভালবাসেন। এমনকি, ধারাভাষ্যে থাকা পাকিস্তানের প্রাক্তনীরাও তুমুল গালাগাল করলেন তাদের দলের মিডল অর্ডারকে। ফকর জামান আউট হওয়ার পর সাইম আয়ুব এবং সাহিবজাদা ফারহান যখন খেলছিলেন তখন পাকিস্তান এক উইকেট হারিয়ে ১১৪।
সেখান থেকে আয়ুব এবং ফারহান আউট হতেই বাকিরাও ফিরতে বেশি দেরি করেননি। তাদের ফেরার এতটাই তাড়া ছিল দেখে মনে হচ্ছিল একটু পরেই করাচির বিমান ধরতে হবে। অবশ্য, প্রশংসা করতে হবে কুলদীপ যাদব এবং অক্ষর প্যাটেলের। দায়িত্ব নিয়ে এই জুটি ম্যাচে ফেরালেন টিম ইন্ডিয়াকে। ফকর জামান এবং বিপজ্জনক সাহিবজাদা ফারহানকে ফেরান বরুণ চক্রবর্তী। মিডল অর্ডারকে ফেরানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন অক্ষর এবং কুলদীপ। ১৪ রানের মাথায় সইম আয়ুব ফেরার পরেই সাজঘরে ফেরেন মহম্মদ হ্যারিস(০)।
তার পিছন পিছন ফেরেন অধিনায়ক সলমন আঘা(৮), হুসেন তালাত(১)। এদিন রান পাননি শাহিন আফ্রিদি(০) এবং ফাহিম আশরাফও(০)। কুলদীপ শুরুর ওভারে মার খেলেও চার ওভারে ৩০ রান চার উইকেট নেন তিনি। একদিকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের সাজঘরে ফেরার দৃশ্য দেখছিলেন মহম্মদ নওয়াজ। বুমরা সেটা বুঝতে পেরে শেষ ওভারে তাঁকে আউট করে দেন। বোল্ড করেন হ্যারিস রউফকেও। তাঁর অফ স্টাম্প ছিটকে দিয়ে তাঁর ভঙ্গিতেই সেলিব্রেশন করে বুঝিয়ে দেন ক্ষমতা।
